E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

বরিশালে চলছে জামাত-বিএনপির ছয় ওসির শাসন

২০১৮ জানুয়ারি ০৪ ১৮:১৫:৩০
বরিশালে চলছে জামাত-বিএনপির ছয় ওসির শাসন

আঞ্চলিক প্রতিনিধি, বরিশাল : নির্বাচনকে সামনে রেখে পুলিশ প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ পদে এবং বিভিন্ন থানায় কর্মরত ওসিদের (ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা) গোপনে প্রতিবেদন তৈরি করেছে একাধিক গোয়েন্দা সংস্থা। এরই মধ্যে তা জমা হয়েছে সরকারের উচ্চ পর্যায়ে। ওই প্রতিবেদনে পুলিশ কর্মকর্তাদের শিক্ষাজীবন, রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা-মতাদর্শ এবং তাদের আত্মীয় স্বজনের কর্মকান্ডে তালিকায় সবিস্তারে বর্ণনা করা হয়েছে।

সূত্রমতে, ওই কর্মকর্তারা নিজেদের পরিচয়ের আড়ালে বর্তমান সরকারের সময় নিজেদের অতিমাত্রার আওয়ামীলীগ সাজিয়েছেন। তারা সুক্ষভাবে ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীদের মধ্যে তীব্র কোন্দল সৃষ্টি করে মামলা দিয়ে হয়রানী করে আসছে। সময়মতো এসব কর্মকর্তা তাদের খোলস বদলে আগের ভূমিকায় ফিরে যেতে যাবেন বলেও রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে। যা সরকারের জন্য মারাত্মক হুমকির কারণ হয়ে দাঁড়াবে।

তালিকায় নাম আসা পুলিশ কর্মকর্তারা অনেকেই ছাত্রদল এবং ছাত্রশিবিরের রাজনীতির সাথে সরাসরি জড়িত ছিলেন। তারা এখনও গোপনে বিএনপি-জামায়াতকে সহায়তা করে যাচ্ছেন বলেও ওই রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে। ওই সকল পুলিশ কর্মকর্তাদের আত্মীয়-স্বজন বর্তমানেও বিএনপি-জামায়াতের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে রয়েছেন। অতিসম্প্রতি একটি গণমাধ্যমে এ সংক্রান্ত একটি সংবাদ প্রকাশিত হওয়ার পর পুলিশ প্রশাসন থেকে শুরু করে ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীদের মধ্যে ব্যাপক তোলপাড় শুরু হয়েছে।প্রকাশিত সারাদেশের ৯৫ জন ওসি’র নামের তালিকার মধ্যে রয়েছে বরিশাল জেলার ছয় থানার ওসির ন্মাও রয়েছে ওই তালিকায়।

বরিশাল জেলার ছয় থানার সরকার বিরোধী রাজনীতির সাথে জড়িত ওসিরা হলেন- গৌরনদী মডেল থানার ওসি মনিরুল ইসলাম চৌধুরী, বানারীপাড়া থানার ওসি সাজ্জাদ হোসেন, বাবুগঞ্জ থানার ওসি আব্দুস সালাম, মুলাদী থানার ওসি মতিয়ার রহমান, মেহেন্দীগঞ্জের আকতারুজ্জামান ও বাকেরগঞ্জ থানার সাবেক ওসি মো. আজিজুর রহমান।

এরা সকলেই ছাত্রজীবনে ছাত্রদলের রাজনীতির সাথে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত ছিলেন। অনেকে ছাত্র সংসদ নির্বাচনে ছাত্র দলের প্রার্থী হিসেবে বিজয়ও লাভ করেছেন। দল করার পুরস্কার হিসেবেই ওইসব ওসি বিএনপি-জামায়াত সরকার ক্ষমতায় থাকাকালীন বিভিন্ন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হিসেবে নিয়োগ পেয়েছেন।

ইতিমধ্যে দায়িত্বে অবহেলা ও ঘুষ গ্রহণের অভিযোগে কয়েকজন ওসিকে ক্লোজডও করা হয়েছিলো। কয়েকজনের বিরুদ্ধে বর্তমানেও তদন্ত চলছে। নানাবির্তকিত কর্মকান্ডের জন্মদিলেও বরাবরেই ওইসব ওসিরা আওয়ামীলীগের তকমা লাগিয়ে পারপেয়ে যাচ্ছেন। এর মধ্যে বানারীপাড়া থানায় কর্মরত ওসি সাজ্জাদ হোসেনকে নিয়ে বিশেষ অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে নানা চাঞ্চল্যকর তথ্য।

সূত্রমতে, নোয়াখালীর চাটখিলের সাবেক সংসদ সদস্য সালাউদ্দিন কামরানের ভাতিজা ও নোয়াখালী সরকারী কলেজের ছাত্রদলের সাবেক জিএস সাজ্জাদ হোসেন। ১৯৯৩ সালে জামায়াত নেতা আলী আহসান মুজাহিদের সুপারিশে পুলিশ বাহিনীতে যোগদান করেন।

কুষ্টিয়া সদর থানায় সেকেন্ড অফিসার থাকাকালীণ সময়ে কুষ্টিয়া সদরের তৎকালীণ বিএনপির সংসদ সদস্যর সান্নিধ্য লাভের জন্য আওয়ামীলীগের ১৭ জন নেতাকর্মীকে চরমপন্থী আখ্যায়িত করে কথিত ক্রসফায়ার দেন সাজ্জাদ হোসেন। পুরস্কার স্বরুপ তাকে কঙ্গোর শান্তি মিশনে পাঠিয়েছিলেন তৎকালীণ স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর। এছাড়াও পুলিশ প্রশাসনের মধ্যে ঘাপটি মেরে থাকা সাজ্জাদ হোসেন বিভিন্ন থানায় চাকুরীকালীন সময়ে একাধিক বিতর্কিত কর্মকান্ডের জন্ম দেয়।

বরিশালের আগৈলঝাড়া থানায় ওসি হিসেবে যোগদান করে মনিরুল ইসলাম বিভিন্ন নারী কেলেংকারীতে জড়িয়ে পরেন। আর আগে তিনি বরগুনার বামনা থানায় থাকা অবস্থায় নারী কেলেংকারী আর বিনেপি জামাতের মদদদাতা হিসেবে পরিচিতি পান। সেখান থেকে ক্লোজ হয়ে আগৈলঝাড়ায় গিয়ে আওয়ামীলীগ হয়ে যান। তিনি তিন বছর আগৈলঝাড়া থাকার পর এক প্রভাবশালী এমপিকে দিয়ে ডিআইজকে ফোন করিয়ে গৌরনদী থানায় বদলী হয়ে যায়।

গৌরনদী থানায় যোগদান করেই ব্যাপক চাঁদাবাজীতে লিপ্ত হয়ে পরেন তিনি। গৌরনদী মডেল থানার ওসি মনিরুল ইসলামের বিরুদ্ধে এক ছাত্রলীগ নেতাকে হত্যার ঘটনায় দায়ের করা মামলায় বিএনপি পন্থী আসামিকে গ্রেফতারের পর ছেড়ে দেয়ার অভিযোগ রয়েছে।

ওই অভিযোগের ভিত্তিতে জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। পুলিশের নির্ভরযোগ্য একটি সূত্রে জানা গেছে, কমিটির তদন্তে ওসি মনিরুল ইসলামের বিরুদ্ধে অভিযোগের সত্যতা মিললেও অজ্ঞাত কারণে তিনি বহাল তবিয়তেই রয়েছেন।।

(টিবি/এসপি/জানুয়ারি ০৪, ২০১৮)

পাঠকের মতামত:

১৯ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test