E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

কৃত্রিম সরিষার তেলে বাজার দখল

দিনাজপুরে হারিয়ে যাচ্ছে কলু সম্প্রদায় 

২০১৮ জানুয়ারি ১১ ১৪:৩৯:৩৫
দিনাজপুরে হারিয়ে যাচ্ছে কলু সম্প্রদায় 

শাহ্ আলম শাহী, দিনাজপুর : দিনাজপুরে কৃত্রিম সরিষার তেল বাজার দখল করে নেয়ায় হারিয়ে যাচ্ছে কলু সম্প্রদায় । সেই সাথে হারিয়ে যাচ্ছে  ঘানিতে টানা খাটি সরিষার তেল। ফলে খাঁটি সরিষা তেলের স্বাদ আর পাচ্ছে না মানুষ। 

আগে দিনরাত গরু দিয়ে কাঠের ঘানির সাহায্যে ফোটায় ফোটায় নিংড়ানো খাঁটি সরিষার তেল দিনাজপুরের বিভিন্ন গ্রাম-গঞ্জে মাটির হাড়িতে ফেরি করে এবং হাট-বাজারেও এই তেল বিক্রি করা হতো। এ তেল বিক্রি করেই জীবন-জীবিকা নির্বাহ করতেন এক শ্রেণীর কলু সম্প্রদায়।

দিনাজপুরের বিরল নারাবাড়ী বুনিয়াদপুর গ্রামটি ছিলো ঘানিতে টানা কলুর সরিষা তেলের জন্য ঐতিহ্য।দিন বদলের সাথে সাথে গড়ে উঠেছে বিভিন্ন শিল্প প্রতিষ্ঠান। আর নতুন প্রযুক্তি যুক্ত হয়েছে এসব শিল্প প্রতিষ্ঠানে। কলু সম্প্রদায়ও এর প্রভাব থেকে মুক্ত হতে পারেনি। এখন কাঠের ঘানির পরিবর্তে প্রযুক্তির আর্শিবাদে লোহার ঘানিতে ভাঙ্গা হচ্ছে সরিষার সাথে বিভিন্ন দ্রব্যাদি।

ইলেকট্রিক মোটর দ্বারা লোহার এ ঘানি গুলোতে কেবল সরিষায় নয় তিল, তিশি, পাম ও সোয়াবিন ভাঙ্গা হয়।তবে কোন কোন লোহার মেশিনে কিছু অসাধু ব্যবসায়ীরা সরিষার সাথে চালের গুড়া, পিয়াজ, শুকনা মরিচসহ অন্যান্য রাসায়নিক দ্রব্য মিশ্রনে ভেজাল সরিষার তেল উৎপাদন করছে। ভেজাল এ কৃত্রিম তেল দখল করেছে তেলের বাজার। কৃত্রিম তেল তারা কম দামে বিক্রি করতে পারলেও কাঠের ঘানিতে খুলু(কলু) সম্প্রদায় দিন-রাত পরিশ্রম করে যে খাঁটি সরিষার তেল উৎপাদন করতেন তা কম দামে বিক্রি করতে পারতেন না তারা। ফলে প্রতযোগিতায় টিকে থাকতে পারছেন না কুল সম্প্রদায়।এখন কলু সম্প্রদায় সম্পূর্ণ ররূপে বিলুপ্তপ্রায়।তবে খুলুদের ঐতিহ্য ধরে রাখতে তারা সাহা পদবী ব্যবহার করে থাকেন। সাহা পদবী ব্যবহারকারী লোকজন এখনও কলু সম্প্রদায় বলে পরিচিত।

জেলার বিরল নারাবাড়ী বুনিয়াদপুর গ্রামে ৩/৪ জায়গায় ও সুজাপুর, তেতুলিয়া, স্বজনপুকুর, মাদিলা, হড়হড়িয়াপাড়া, শিবনগরসহ বিভিন্ন গ্রােম-গঞ্জ এলাকায় কলু সম্প্রদায়ের লোকেরা কাঠের ঘানিতে তেল উৎপাদন করতেন। কিন্তু কৃত্রিম সরিষার তেল বাজার দখল করায় তারা এ ব্যবসা বাদ দিয়ে বিভিন্ন পেশায় জড়িয়ে পড়েছেন।

কাঁটাবাড়ী গ্রামের নন্দলাল সাহা বলেন, আমার বাপ-দাদার মূল ব্যবসাই ছিল কাঠের ঘানিতে সরিষার তেল উৎপাদন করা।বর্তমান সময়ে এ তেলে চাহিদা থাকলেও উৎপাদন করে পুষিয়ে উঠা কঠিন। তাই আধুনিক যন্ত্রপাতি দ্বারা তেল মাড়াই করছি।

টুনটুন সাহা জানান,আগে আমি বাবার সাথে কাঠের ঘানি দিয়ে তেল উৎপাদন করে বাজার বিক্রয় করতাম। বর্তমানে যুগের পরিবর্তনের এ পেশায় তেমন আর পরর্তা না হওয়ায় এ পেশা ছেড়ে অন্য পেশা বেছে নিয়েছি ।

(এসএএস/এসপি/জানুয়ারি ১১, ২০১৮)

পাঠকের মতামত:

৩০ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test