E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

আগৈলঝাড়ায় ঐতিহ্যবাহী মারবেল মেলা 

২০১৮ জানুয়ারি ১৪ ১৬:০৫:৫৫
আগৈলঝাড়ায় ঐতিহ্যবাহী মারবেল মেলা 

তপন বসু, আগৈলঝাড়া (বরিশাল) : দুই’শ আটত্রিশ বছরের ঐতিহ্যবাহী পুরোনো গ্রামীণ বাংলার ঐতিহ্যবাহী মারবেল মেলা বরিশালের আগৈলঝাড়ায় রবিবার অনুষ্ঠিত হয়েছে।

উপজেলার রাজিহার ইউনিয়নের রামানন্দেরআঁক গ্রামে অনুষ্ঠিত মেলা কমিটির সভাপতি দিগ¦ীজয় বিশ্বাস সু-প্রাচীন মেলার ইতিহাস সম্পর্কে বলেন, উল্লেখিত মেলার বাড়িতে ছয় বছর বয়সে সোনাই চাঁদ নামে এক মেয়ের বিয়ে হয়েছিল।

বিয়ের এক বছর পেরোতেই সোনাইর স্বামী মারা যায়। স্বামীর মৃত্যুর পর শ্বশুর বাড়িতে একটি নীম গাছের নীচে সোনাই দেবাদি দেব মহাদেবের আরাধনা ও পূজার্চনা শুরু করেন। আরাধনার এক পর্যায়ে তাঁর অলৌকি কর্মকান্ড ক্রমেই চারদিকে ছড়িয়ে পরে। সোনাই চাঁদের জীবদ্দশায় তার ভক্তবৃন্দরা এই বাড়িতে আনুমানিক ১৭৮০খ্রিঃ ‘মা সোনাই চাঁদ আউলিয়া মন্দির’ নামে একটি মন্দির স্থাপন করা হয়। ওই মন্দিরটি পরবর্তিতে স্থানীয়দের উদ্যোগে ২০১২সালে পুনঃর্মিাণ করা হয়।

মেলা আয়োজক কমিটির অন্যতম সদস্য ও বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এর সহকারী অধ্যাপক (নিওনেটোলজি) শিশু বিশেষজ্ঞ ডা. বিসি বিশ্বাস বিধান জানান, মন্দির প্রতিষ্ঠার পর থেকে অদ্যাবধি দুই’শ আটত্রিশ বছর যাবত পঞ্জিকানুযায়ি প্রতি বছর পৌষ সংক্রান্তির দিনে বাস্তু পূজা (মাটির পূজা) ও নবান্ন মহোৎসবের মাধ্যমে ধুমধামের সাথে এই মেলা অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে।

প্রতিবছর এই দিনে বৈষ্ণব সেবা, হরি নাম সংকীর্ত্তন শেষে সোয়া মণ (৫০ কেজি) চালের গুড়ার সাথে সোয়া মণ গুড়, ৫০ জোড়া (১শ পিচ) নারকেল ও প্রয়োজনীয় অন্যান্য উপকরণ মিশিয়ে তৈরী করা হয় নবান্ন। মেলায় আগত সকল ভক্ত ও দর্শণার্থীদের এই নবান্ন প্রসাদ হিসাবে পরিবেশন করা হয়। হিন্দু সম্প্রদায়ের অন্যতম পার্বণ পৌষ সংক্রান্তিতে উপলক্ষে দুই’শ আটত্রিশ বছর ধরে পূঁজা, নবান্ন মহোৎসব উপলক্ষে অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী মারবলে খেলার মেলা। যা এখন মারবেল মেলা নামেই পরিচিতি লাভ করেছে, এলাকা ছাড়িয়ে কয়েক উপজেলায়।

মেলায় মারবেল খেলার মূল রহস্য সম্পর্কে স্থানীয় হরবিলাস মিস্ত্রীসহ (৮০)সহ প্রবীণ ব্যক্তিরা জানান, মাঠ-ঘাট শুকিয়ে যাওয়ায় তাদের পূর্ব পুরুষেরা মেলার এই দিনে মারবেল খেলার প্রচলন শুরু করেন, যা আজও অব্যাহত আছে। তাদের উত্তরসূরী হিসেবে এখন তারাও মেলার সেই প্রাচীন ঐতিহ্য ধরে রেখেছেন। এ দিনটিকে ঘিরে রামানন্দেরআঁক গ্রাম ও তার আশপাশ এলাকায় কয়েকদিন আগে থেকেই উৎসবের আমেজ দেখা দিয়েছে।

গ্রামের অধিবাসীরা তাদের মেয়ে জামাইসহ অন্যান্য নিকট আত্মীয়-স্বজনদের এই মার্বেল মেলায় “মার্বেল খেলার” আমন্ত্রণ জানিয়ে আসছেন। মুল মেলা অনুষ্ঠিত হবার কয়েকদিন আগে থেকেই আত্মীয় স্বজনেরা বাড়িতে বাড়িতে অবস্থান নিতে শুরু করেন। প্রতিটি বাড়ির আত্মীয়-স্বজন ও দর্শনার্থীদের ভিড়ে ওই গ্রাম থাকে লোকে লোকারণ্য। বাড়িতে বাড়িতে চিড়া-মুড়ি, খেঁজুর গুড়ের পিঠা খাওয়ার ধুম পরে যায়। ঐতিহ্যবাহী এই মেলায় এবছরও প্রধান আকর্ষণ ছিল বিভিন্ন বয়সী নারী-পুরুষের মধ্যে মারবেল খেলার তীব্র প্রতিযোগিতা।

সরেজমিনে দেখা গেছে, প্রায় ৫ বর্গ কি.মি এলাকা জুড়ে মারবেল খেলার আসর বসেছে। মেলা জুড়ে ছিল থানা পুুলিশের কঠোর নিরাপত্তা। বিভিন্ন বাড়ির আঙ্গিনা, অনাবাদী জমি, বাগান ছাপিয়ে রাস্তার উপরও বসেছিল মারবেল খেলার আসর। এর সাথেই অনাবাদী জমিতে বসেছে বাঁশ ও বেতের শৌখিন শিল্প সামগ্রী, মনিহারী দ্রব্য, খেলনা, মিষ্টি, ফল, চটপটি, ফুচকাসহ হরেক রকমের খাদ্যদ্রব্য ও নিত্য প্রয়োজনীয় পন্যের দাকানের পশরা।

গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়া থেকে আসা সমীর বিশ্বাস জানান, তারা মারবেল খেলার কথা শুনে মেলায় এসেছেন। ব্যতিক্রমধর্মী এই মেলা তাদের ভীষণ ভাল লেগেছে বলেও জানান তারা।

রামানন্দেরআঁক গ্রামের জয়দেব বাগচীর ছেলে সপ্তম শ্রণীর ছাত্র দিগন্ত বাগচী জানায়, সে সারা বছর টাকা জমিয়েছে মারবেল কেনার জন্য, আজ সেই মরবেল নিয়ে খে তে এসেছে মেলায়। মেলায় মারবেল খেলার জন্য পাশ্ববর্তি কোটালীপাড়া, উজিরপুর, কালকীনি, গৌরনদীসহ বিভিন্ন উপজেলা ও জেলার লোকজন এসেছেন। শীত উপেক্ষা করে মেলা চলে গভীর রাত পর্যন্ত।

(টিবি/এসপি/জানুয়ারি ১৪, ২০১৮)

পাঠকের মতামত:

০৮ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test