E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

নওগাঁর ঐতিহ্যবাহী ভূতনাথ মন্দিরে চলছে বাৎসরিক উৎসব

২০১৮ জানুয়ারি ২৮ ১৮:৪০:৫২
নওগাঁর ঐতিহ্যবাহী ভূতনাথ মন্দিরে চলছে বাৎসরিক উৎসব

নওগাঁ প্রতিনিধি : নওগাঁর ঐতিহ্যবাহী শ্রীশ্রী ভূতনাথ বাবার মন্দিরে বাৎসরিক উৎসব শুরু হয়েছে। মাঘ মাসে ভীম একাদশীর তিথিতে শুরু হয়ে মাঘী পূর্ণিমা তিথি পর্যন্ত ভক্তের ঢল নামে এখানে। এবার শনিবার থেকে বুধবার (৩১ জানুয়ারি) পর্যন্ত চলবে এখানে ভুতনাথ বাবার পুজো অর্চনা। হাজার হাজার মানুষের পদচারনায় মুখোরিত হয়ে ওঠে এলাকা। পূর্ণিমা তিথিতে শেষ পুজোর দিন মন্দির ও তার পার্শ্ববর্তী এলাকায় তিল ধারনের ঠাঁই থাকেনা। 

ভূতনাথ বাবার প্রধান ভোগ বারোভাজা, সন্দেশ,আর ফলমুল। ভক্তরা উপোস থেকে সোপর্দ্দ করছেন বাবার পায়ে। এছাড়া যাদের মনস্কামনা পুরন হয়েছে, তারা তাদের মানত পাঁঠা, কবুতরের বাচ্চা, বাবার মূর্তি, মাথার মুকুট আর কদম দিয়ে মানত পরিশোধ করছেন। হাজার হাজার ভক্তের পদচারনায় মুখরিত হয়ে উঠেছে নওগাঁ সদর উপজেলার সীমান্ত ঘেঁষে মহাদেবপুর উপজেলার ভীমপুর ইউনিয়নের শিকারপুর মৌজার ভূতনাথ বাবার হিন্দুবাঘার ধামটি।

নারী ভক্তের উপচেপড়া ভিড়ে যেন তিল ধারনের ঠাঁই নেই সেখানে। প্রাচীন আমলের এই উৎসব/মেলা কবে কখন থেকে শুরু হয়েছে এমনটি কেউ বলতে পারেনা। রবিবার ওই ধামে ঘুরে ঠিক এমনটিই চোখে পড়েছে। এই ধামের উৎসবকে ঘিরে সেখানে প্রতিবছর মেলা বসে থাকে। সেকারনে সেখানকার নাম ‘হিন্দুবাঘার মেলা’ নামে এলাকায় বহুল পরিচিত। প্রতিবছর মাঘ মাসের ভীম একাদশীর দিন শুরু হয় উৎসবের। শেষ হয় মাঘী পূর্ণিমার তিথিতে।

প্রতিবছর অন্তত অর্ধশত পাঁঠা আর সহস্রাধিক কবুতরের বাচ্চা মানত হিসেবে দিয়ে থাকেন ভক্তরা। তবে বাবার মন্দিরে কোন রক্তপাত ঘটানোর বিধান না থাকায় সেগুলো আস্ত রেখে দেয় কমিটির লোকজন। পরে সেগুলো বিক্রি করে সেই অর্থ মন্দিরের উন্নয়ন কল্পে ব্যয় করা হয় বলে, ধামের সভাপতি ও সাধারন সম্পাদক যথাক্রমে গনেশ চন্দ্র ও মনোরঞ্জন সরকার জানান।

ভূতনাথ বাবার পূজা কমিটির নেতারা জানান, গত বছর যে সব গৃহবধু সন্তান কামনা করে বাবার মন্দিরে পাঁঠা বা কবুতরের বাচ্চা মানত করেছিলেন, তাদের অনেকের কোল জুড়ে সন্তান এসেছে। আর তারাই তাদের মানত পরিশোধ করতে এসেছেন। দূর-দূরান্ত থেকে আসা ভক্তদের মাঝে প্রসাদ বিতরন করছেন কমিটির পক্ষ থেকে। অনেক ভক্ত বাড়ি থেকে খাবার সঙ্গে এনেছেন। সন্তান-সন্ততি নিয়ে তাদের সেখানে বসেই খেতে দেখা যায়।

এদিকে বুধবার ধর্মীয় উৎসব শেষ হলেও মেলা চলবে অন্তত আরো ১৫দিন। তবে এই মেলার সঙ্গে পূজা কমিটির কোন সম্পৃক্ততা নেই। ভুতনাথ বাবার উৎসবকে কেন্দ্র করে মেলা হলেও এই মেলা থেকে উপার্জিত অর্থের কোন কানাকড়িও মন্দিরের ভাগ্যে জোটেনা। মন্দিরের নামে জমিতে মেলা লাগানোর জন্য সরকারীভাবে লীজ দেয়া হয় বলে জানান পূজা কমিটি।

স্থানীয় কিছু প্রভাবশালী মেলাটি ডেকে নেয়। মোটা অংকের অর্থের বিনিময়ে। শনিবার থেকেই মন্দিরের পার্শ্ববর্তী জমিতে বসানো হয়েছে বিশাল মেলা। মেলায় বসেছে, বিভিন্ন মিষ্টান্নসহ ভূতনাথ বাবার ভোগের সামগ্রী বারোভাজার দোকান। ওইসব দোকানে ভক্তদের ভিড় ছিল উপচেপড়া।

এছাড়া মন্দির চত্বরের বাইরে প্রসাধনী, খাবার দোকান, লোহা-লক্কড় বটি ছুড়িসহ বিভিন্ন আসবাবপত্র আর চিত্ত বিনোদনের নামে বসানো হয়েছে পুতুল নাচের প্যান্ডেল। বিকেল থেকে এসব প্যান্ডেলে পুতুল নাচের নামে চালানো হচ্ছে, জ্যান্ত পুতুলের নগ্ন নৃত্য।

এছাড়া মেলায় বসানো হয়েছে হরেকরকম জুয়ার আসর। এসব জুয়ার আসরে ভিড় করছে তরুনরা। পাশেই চলছে পুতুল নাচের নামে নগ্ন নারীদেহের অশালীন নাচ।

ধর্মীয় অনুষ্ঠানের নাম ভাঙ্গিয়ে এলাকার রাজনৈতিক প্রভাবশালীরা রীতিমত সেখানে মদ, জুয়াসহ নারীদেহের উলঙ্গ নাচে এলাকার যুবসমাজকে অধঃপতনের দিকে ধাবিত করছে। এতে সাধারণের কাছে পূজা কমিটির বদনাম হলেও পূজা কমিটি ওই অসামাজিক কর্মকান্ডে মোটেই সম্পৃক্ত নয় বলে দাবি করেন পূজা কমিটির নেতারা।

(বিএম/এসপি/জানুয়ারি ২৮, ২০১৮)

পাঠকের মতামত:

০৭ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test