E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

মদনে কাজ না করেই কর্মসূচির বিল উত্তোলনের পায়তারা

২০১৮ ফেব্রুয়ারি ১২ ১৬:২৩:০৫
মদনে কাজ না করেই কর্মসূচির বিল উত্তোলনের পায়তারা

মদন (নেত্রকোনা) প্রতিনিধি : নেত্রকোনার মদন উপজেলায় মাঘান ইউনিয়নের ৪০ দিনের কর্মসৃজন কর্মসূচিতে নামে মাত্র কাজ করে পুরো টাকা সংশ্লিষ্ট দপ্তরের যোগসাজুশে বিল উত্তোলনের পায়তারা করছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

অভিযোগের প্রেক্ষিতে রবিবার সরেজমিনে গেলে ২টি প্রকল্পে মাটি কাটার কোন আলামত খোঁজে পাওয়া যায়নি। অধিকাংশ শ্রমিকরা জানায় কাজ না করেই আমরা অর্ধেক টাকা পেয়ে থাকি। মেম্বারের স্ত্রী, স্বামী-স্ত্রী ও ইউনিয়ন নেতাদের নাম ও শ্রমিক হিসেবে রয়েছে।

উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কার্যলয় সূত্রে জানা গেছে, মাঘান ইউনিয়নে অতি দরিদ্রদের জন্য কর্মসৃজন কর্মসূচির আওতায় ২০১৭-১৮ অর্থ বছরে ৪ টি প্রকল্পের আওতায় মোট ১৮৮ জন শ্রমিক নিয়োগ দেওয়া হয়। যার বরাদ্দ ১৫ লাখ ৬ হাজার টাকা। এ টাকা দিয়েছে দুর্যোগ ব্যবস্থপনা ও ত্রাণ মন্ত্রনালয়।

৪টি প্রকল্পের মধ্যে রয়েছে ডেমারগাতি তারু মিয়ার বাড়ি হতে কুড়ির পাড় পর্যন্ত রাস্তা পূননির্মাণ যার মোট শ্রমিক ৬৬ জন, স্লুইজ গেট হতে জঙ্গল হয়ে ঘাটুয়া পর্যন্ত রাস্তা পূন: নির্মাণ যার শ্রমিক ৩৫ জন, ডাকুনিয়া বাধঁ হতে মুকসুদ আলীর বাড়ি হয়ে কাতলা জানু চৌধুরীর জমি পর্যন্ত রাস্তা পূন: নির্মাণ যার শ্রমিক ৬৬ জন,কাটাহালি হতে মইলাহাতা পর্যন্ত বাধেঁ মাটি ভরাট যার শ্রমিক ২১ জন।

উক্ত প্রকল্প গুলোর মধ্যে ডাকুনিয়া বাধঁ হতে মুকসুদ আলীর বাড়ি হয়ে কাতলা জানু চৌধুরীর জমি পর্যন্ত রাস্তা পূন: নির্মাণ, কাটাহালি হতে মইলাহাতা পর্যন্ত বাধেঁ মাটি ভরাট প্রকল্প দুটিতে ৮৭ জন শ্রমিক কাজ করার কথা থাকলেও রবিবার সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায় প্রকল্প গুলোর মধ্যে মাটি কাটার কোন আলামত পাওয়া যায়নি।

তবে অভিযোগে উল্লেখ রয়েছে অধিকাংশ শ্রমিক কাজ না করে এবং এলাকায় না থাকলেও তাদের নামে বিল উত্তোলনের পায়তারা করছে। উক্ত দপ্তরের অসাধু কর্মকর্তাগণ প্রকল্প পরিদর্শন না করে বিলে স্বাক্ষর করায় তারা বিল উত্তোলনের সুযোগ পাচ্ছে।

এলাকাবাসীর অভিযোগ, ৯নং ওয়ার্ডের স্বপন মেম্বারের স্ত্রী শান্তনা সরকার, রনি বালা স্বামী কৃতিষ থাকেন ঢাকায়, জাকির হোসেন পিতা আব্দুল জব্বার থাকেন চট্রগ্রাম, আবুল কাশেম থাকে মাখনা গ্রামে, হাদিছ মিয়া, হাবিবুর পিতা খালু শেখ তার স্ত্রী হাদিছা, বানেছা,ময়না আক্তার, সেলিম, কল্পনা আক্তার স্বামী খোকন মিয়া, ফুলেছা আক্তার স্বামী ফজলু মিয়া, দেবী রানী, কল্পনা, চঞ্চলা সরকার, রহিমা মান্দুরা, জুলসনা আক্তার স্বামী রেনু মিয়া, কল্পনা আক্তার স্বামী খোকন মিয়া, ঊষা রানীসহ আরো অনেকের নাম শ্রমিক তালিকায় অন্তভুক্ত করা হয়েছে।

আবার যারা কাজ করছে তারা জানান,আমরা ৪০ দিনের মধ্যে ২০/২৫ দিন কাজ করেছি।

হাবিবুর রহমানের স্ত্রী হাদিছা আক্তার বলেন, শ্রমিক তালিকায় আমি ও আমার স্বামীর নাম রয়েছে তবে আমরা কোন দিন কাজ করি না। কাজ না করে অর্ধেক টাকা পাই।

কল্পনা আক্তার স্বামী খোকন মিয়া, দেবী সরকারের স্বামী সজল জানায়, ৪০ দিনের মধ্যে আমরা ২০ /২৫ দিন কাজ করেছি। কবে বিল উত্তোলন হবে জানি না।

ট্যাগ অফিসার মাঘান ইউনিয়ন উপ সহকারী ভূমি কর্মকর্তা চন্দন শাহ জানান, আমি দুই দিন প্রকল্প পরিদর্শন করে ১৮৮ জন শ্রমিকের মধ্যে ৯১জন উপস্থিত পেয়েছি। কত দিন কাজ হয়েছে তা আমি সঠিক ভাবে বলতে পারব না।

প্রকল্প বাস্তবায়ন অফিসে কর্মরত উপ সহকারি প্রকৌশলী আরিফুর রহমান বলেন,আমি মাঘান ইউনিয়নে একটি প্রকল্প দেখতে একদিন গিয়েছি। তবে বিলের বিষয়ে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেন, প্রথম ২০ দিনের বিলে স্বাক্ষর করলেও চূড়ান্ত বিল কাজ দেখে স্বাক্ষর করব।

অতিরিক্ত দায়িত্ব প্রাপ্ত প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মোঃ আরিফুর রহমান জানান,কর্মসৃজন কর্মসূচিতে যে সমস্ত ভূয়া নাম দেওয়া হয়েছে তাদের ব্যপারে আমি সরেজমিনে গিয়ে যাচাই করে প্রকৃত শ্রমিকদের বিল দিব। যারা ভূয়া নাম দিয়েছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেব। ব্যাংকের সাথে কথা বলব ছবি না দেখে টাকা কিভাবে বিতরণ করেন ?

মাঘান ইউপি চেয়ারম্যান জি এম শামছুল আলম চৌধুরী জানান, কর্মসৃজন কর্মসূচির তালিকায় ভূয়া কোন নাম নেই,যদি নাম থাকে এ টাকা আমি নেই না। যদি সচিব এমন কাজ করে থাকে তাহলে আমি তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করব। তবে প্রকল্পের কাজের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি এড়িয়ে যান।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ ওয়ালীউল হাসান বলেন,মাঘান ইউনিয়নের কর্মসূজন কর্মসূচির কাজ দেখে যাচাই -বাচাই করে বিল দেওয়া হবে।

(এএমএ/এসপি/ফেব্রুয়ারি ১২, ২০১৮)

পাঠকের মতামত:

২৯ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test