E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

বন্যা নিয়ন্ত্রণের সাত বাঁধ ভাঙা, আতঙ্কে স্থানীয়রা

২০১৮ মার্চ ০১ ১৮:১৮:৪৮
বন্যা নিয়ন্ত্রণের সাত বাঁধ ভাঙা, আতঙ্কে স্থানীয়রা

ছাদেকুল ইসলাম রুবেল,গাইবান্ধা : বন্যায় ভেঙে যাওয়ার ছয় মাস পেরিয়ে গেলেও পানি উন্নয়ন বোর্ডের নিয়ন্ত্রণাধীন গাইবান্ধার দুই উপজেলায় ৭টি বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের ভাঙা অংশ মেরামত করা হয়নি।

ফলে আসন্ন বর্ষা মৌসুমে ভেঙে যাওয়া এসব অংশ দিয়ে লোকালয়ে পানি প্রবেশ করে হাজার হাজার হেক্টর জমির ফসল, রাস্তাঘাট, বসতবাড়ি, শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানসহ আবারও ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা করা হচ্ছে।

ক্ষয়ক্ষতি ঠেকাতে দ্রুত এসব বাঁধ মেরামত করা প্রয়োজন। দীর্ঘদিনেও বাঁধ মেরামত না হওয়ায় এসব বাঁধের ভাঙন এলাকার মানুষ ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কায় আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন।

গাইবান্ধা পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, ৭৮ কিলোমিটার ব্রহ্মপুত্র বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধসহ গোটা জেলায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের ২৪০ কিলোমিটার দীর্ঘ বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ রয়েছে সাতটি।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত বছরের আগস্ট মাসের বন্যায় করতোয়া নদীর গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার রাখালবুরুজ ইউনিয়নের হরিনাথপুর বিশপুকুর, মহিমাগঞ্জ ইউনিয়নের চরবালুয়া, দরবস্ত ইউনিয়নের সাপগাছী হাতিয়াদহ, বিশ্বনাথপুর, ছোট দুর্গাপুর, বগুলাগাড়ীতে দুইটি, করতোয়ার শাখা নদীর নলডাঙ্গা পঞ্চায়েতপাড়া ও ফুলবাড়ী ইউনিয়নের হাওয়াখানা, পলাশবাড়ী উপজেলার হোসেনপুর ইউনিয়নের কিশামত চ্যারেঙ্গা এবং চার বছর আগে ঘাঘট নদীর সাদুল্লাপুর উপজেলার বনগ্রাম ইউনিয়নের সালাইপুর গুচ্ছগ্রাম সংলগ্ন বাঁধের অংশ ভেঙে যায়।

এর মধ্যে গত মাসে সাপগাছী হাতিয়াদহ রংপুর চিনিকল কর্তৃপক্ষ ও ইউনিয়ন পরিষদের উদ্যোগে ছোট দুর্গাপুর এবং হাওয়াখানা ও সালাইপুরে ইউনিয়ন পরিষদের উদ্যোগে বাঁধের ভাঙা অংশ ৪০ দিনের মাটি কাটা কাজের শ্রমিক দিয়ে জানুয়ারি মাসে মেরামত করা হয়েছে।

এছাড়া অপর বাঁধের অংশগুলো খোলা থাকায় আসন্ন বর্ষা মৌসুমে নদীতে পানি বৃদ্ধি পেলে ১০টিরও বেশি ইউনিয়ন প্লাবিত হয়ে পাঁচ লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়বে। তাই খুব দ্রুত বাঁধের ভাঙা অংশগুলো মেরামত করার দাবি জানিয়েছেন ভুক্তভোগীরা।

সরেজমিনে দেখা গেছে, হরিনাথপুর বিশপুকুর ও চরবালুয়া এবং কিশামত চ্যারেঙ্গা গ্রামের বাঁধের ভাঙা অংশগুলো এখনো মেরামত করা হয়নি। ফলে আসন্ন বর্ষা মৌসুমে নদীতে পানি বৃদ্ধি পেলে লোকালয়ে পানি প্রবেশ করে আবারও বন্যায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির সম্ভাবনা রয়েছে।

রাখালবুরুজ ইউনিয়নের কাজীপাড়া গ্রামের ব্যবসায়ী সিরাজুল ইসলাম বলেন, বন্যায় ভেঙে যাওয়া বাঁধের অংশ এখনো মেরামত না করায় চলাচলে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। তাড়াতাড়ি এসব বাঁধ মেরামত করা না হলে বর্ষা মৌসুমে ওসব খোলা অংশ দিয়ে পানি প্রবেশ করে ফসলি জমি, রাস্তাঘাটসহ ব্যাপক ক্ষতির সম্ভাবনা রয়েছে।

দরবস্ত ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান লোকমান হাকীম বলেন, পানি উন্নয়ন বোর্ড দীর্ঘ কয়েক মাসেও বাঁধ মেরামতের কাজ না করায় ক্ষয়ক্ষতির কথা চিন্তা করে ইউনিয়ন পরিষদ ও রংপুর চিনিকলে উদ্যোগে বাঁধ দুইটি মেরামত করা হয়। এছাড়া অন্য বাঁধগুলো এখনো খোলা রয়েছে। খুব দ্রুত মেরামত না করলে আসন্ন বর্ষা মৌসুমে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হতে পারে আশেপাশের কয়েকটি ইউনিয়নে।

ফুলবাড়ী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবদুল মান্নান মোল্লা বলেন, বন্যার পানির চাপে হাওয়াখানা নামক স্থানে বাঁধ ভেঙে ঢাকা-রংপুর মহাসড়কের উপর দিয়ে পানি প্রবেশ করে কয়েকটি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। দীর্ঘ কয়েকমাসেও পানি উন্নয়ন বোর্ড স্থায়ীভাবে মেরামত কাজ না করায় বাধ্য হয়েই ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে শুধু মাটি দিয়ে মেরামত কাজ করা হয়েছে।

বনগ্রাম ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শাহীন সরকার বলেন, বিষয়টি বারবার পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তাদের জানিয়েও কাজ না হওয়ায় জানুয়ারি মাসে ৪০ দিনের মাটি কাটা শ্রমিক ও গ্রামবাসীর সহযোগিতায় মেরামত করা হয়েছে। তবে মেরামত করা বাঁধের এই ভাঙা অংশটি দীর্ঘস্থায়ী করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া প্রয়োজন। তা না হলে আবারও ওই স্থানটি বন্যার পানির চাপে ভেঙে যেতে পারে।

গাইবান্ধা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মাহবুবুর রহমান বলেন, অধিক গুরুত্বপূর্ণ বিবেচনা করে কিশামত চ্যারেঙ্গা, হাতিয়াদহ, বিশপুকুর, বালুয়াসহ পাঁচটি ভেঙে যাওয়া বাঁধের অংশ মেরামত করা হবে। বাঁধের ভাঙা চারটি অংশের নাম বলতে পারলেও আরেকটি অংশের নাম বলতে পারেননি তিনি।
এই নির্বাহী প্রকৌশলী আরও বলেন, টেন্ডার আহ্বান করে অল্প সময়ের মধ্যেই প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে বাঁধের ভাঙা অংশগুলোর মেরামত কাজ শুরু করা হবে। আশা করছি আগামী জুন মাসের মধ্যেই এসব মেরামত কাজ সম্পন্ন হবে।

এ ব্যাপারে বক্তব্য নিতে গত ১৫ ফেব্রুয়ারি তার কার্যালয়ে গেলে তিনি এই প্রতিবেদককে বলেছিলেন, আগামী সপ্তাহে তিনি টেন্ডার আহ্বান করবেন। অথচ সে সপ্তাহ পেরিয়ে এই সপ্তাহের শেষের দিকে এলেও টেন্ডার আহ্বান করা হয়নি।

নাম বলতে না পারা আরেকটি বাঁধের ভাঙা অংশের নাম জানতে ও কবে এসব ভাঙা বাঁধ মেরামতের জন্য টেন্ডার করবেন এই বিষয়ে জানতে চাইলে মাহবুবুর রহমান বলেন, এই সপ্তাহেই টেন্ডার করা হবে। কোনো দিন টেন্ডার করা হবে তা জানতে চাইলে তিনি ব্যস্ত আছেন বলে মুঠোফোনের সংযোগ কেটে দেন।

(এসআইআর/এসপি/মার্চ ০১, ২০১৮)

পাঠকের মতামত:

০৯ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test