E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

তুমব্রু সীমান্তে থমথমে অবস্থা

২০১৮ মার্চ ০২ ১৫:৩৮:২৬
তুমব্রু সীমান্তে থমথমে অবস্থা

কক্সবাজার প্রতিনিধি : বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তের তুমব্রু পয়েন্টে থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। বৃহস্পতিবার সারা রাত থেমে থেমে ফাঁকাগুলি বর্ষণের ঘটনায় আতঙ্কে রাত পার করেছে জিরো পয়েন্টে অবস্থানরত রোহিঙ্গা ও এপারের বাংলাদেশি অধিবাসীরা।

রোহিঙ্গা ও সাধারণ বাংলাদেশিরা উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় থাকলেও সতর্কাবস্থানে থেকে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)। স্থানীয় বাসিন্দা ও জিরো পয়েন্টে থাকা রোহিঙ্গারা এসব তথ্য জানিয়েছেন।

চলমান রোহিঙ্গা সংকটে পালিয়ে জিরো পয়েন্টে অবস্থান নেয়া রোহিঙ্গা নেতা মাস্টার দিল মোহাম্মদ, মৌলভী আরেফ আহমদ, আনোয়ার শাহ, মো. জসিম উদ্দিন ও মো. আমিন বলেন, বৃহস্পতিবার রাত ৯টার পর থেকে সীমান্তের মিয়ানমার অংশে কয়েক দফায় ফাঁকা গুলির শব্দ পাওয়া গেছে। এটি অব্যাহত ছিল সারা রাত। তুমব্রু সীমান্তের জিরো পয়েন্টে কাঁটাতারের বেড়ার প্রত্যেকটি খুঁটির সঙ্গে সিঁড়ি (মই) দিয়ে রেখেছে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী। এ সিঁড়ি বেয়ে তারা যে কোনো মুহূর্তে জিরো পয়েন্টে প্রবেশ করতে পারে। তারা রোহিঙ্গা আশ্রয়কেন্দ্রের দিকে অস্ত্র তাক করে রেখেছেন। যে কোনো মুহূর্তে মিয়ানমার সেনাবাহিনী তাদের ওপর গুলি বর্ষণ করতে পারে। সীমান্তে মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর তৎপরতা বাড়ানোর পর থেকেই আতঙ্কে রয়েছেন তারা। গুলির শব্দে আতঙ্ক আরও বেড়েছে।

তারা আরও জানান, গত বছর আগস্টে একটি মিথ্যা অভিযোগ তুলে রাখাইনে রোহিঙ্গাদের ওপর মিয়ানমারের সেনারা হত্যা-ধর্ষণ-নির্যাতন শুরু করে। সেনাদের হাত থেকে বাঁচতে এ পর্যন্ত প্রায় ৮ লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করেছে। আর দুই দেশের সীমান্তের মধ্যবর্তী জিরো পয়েন্টে অস্থায়ী তাঁবু করে বাস করছে ১ হাজার পরিবারের প্রায় ছয় হাজার রোহিঙ্গা সদস্য।

মিয়ানমারের তুমব্রু রাইট এলাকার চেয়ারম্যান এশার আলম বলেন, বৃহস্পতিবার সকালে ৭টি বড় গাড়ি ও ৩টি ছোট গাড়িতে করে প্রায় ২০০ জন মিয়ানমারের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিপি সীমান্তের জিরো পয়েন্টে টহল দেয়া শুরু করে। এরপর পালা পরিবর্তন করে তারা টহল অব্যাহত রেখেছে। এ সময় তাদের হাতে ভারী অস্ত্রশস্ত্র দেখা গেছে। সবার মাঝে এক অজানা আতঙ্ক বিরাজ করছে।

তিনি আরও জানান, বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই ওপারে মিয়ানমার অতিরিক্ত সেনাবাহিনী ও বিজিপি মোতায়েন করে। সেখান থেকে মাইক্রোফোনে প্রচার করা হয় ‘আন্তর্জাতিকভাবে শূন্য রেখায় বসবাস করা নিষিদ্ধ, তাই শুন্য রেখা ছেড়ে অন্যত্র চলে যাও। না গেলে আইনসম্মতভাবে বল প্রয়োগ করে তাড়ানো হবে। সকাল থেকে এমন প্রচারণা এবং সেনাবাহিনী-বিজিপির সশস্ত্রাবস্থান নিপীড়িত রোহিঙ্গাদের মাঝে আতঙ্ক কেবল বাড়াচ্ছে। মিয়ানমারের মাইকিং এবং অতিরিক্ত স্বশস্ত্র সেনা মোতায়েন করায় বাংলাদেশ সীমানায় বিজিবি সর্তক অবস্থানে রয়েছে।

রোহিঙ্গা নেতা দিল মোহাম্মদ বলেন, সেনাদের এ উপস্থিতিতে শিবিরে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। কেউ সারা রাত ঘুমাতেও পারেনি। শিবিরের রোহিঙ্গারা এখন পালিয়ে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করতে চাইছে। এরই মধ্যে বাংলাদেশে অন্তত ২ শতাধিক পরিবার প্রবেশ করেছে। তাদের ধারণা ছিল জোর করে তাদের রাখাইনে ফেরত পাঠানো হতে পারে। শুক্রবার সকাল থেকে পরিস্থিতি থম থমে রয়েছে বলে দাবি করেন তিনি।

কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মো. আলী হোসেন বলেন, মিয়ানমার তাদের সীমানায় সেনাসংখ্যা বাড়াচ্ছে। রোহিঙ্গারা রয়েছে জিরো পয়েন্টে। গোলাগুলি ও টহল সব সীমান্তের ওপারেই হচ্ছে। সীমান্তে আমাদের অংশে কোনো সমস্যা নেই। তারপরও যে কোনো পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রশাসন সতর্ক রয়েছে।

সীমান্তের মিয়ানমার অংশের এ ঘটনায় বৃহস্পতিবার বিকেলে পিলখানায় এক তাৎক্ষণিক সংবাদ সম্মেলনে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশন্স অ্যান্ড ট্রেনিং) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মুজিবুর রহমান বলেন, আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করে তুমব্রু সীমান্তে নিজেদের অংশের প্রায় দেড়শ’ গজের মধ্যে ভারী অস্ত্রসহ মিয়ানমারের অতিরিক্ত সৈন্য মোতায়েন করা হয়েছে। বিষয়টি গভীর পর্যবেক্ষণে রেখে বিজিবির শক্তি বৃদ্ধি করা হয়েছে।

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, মিয়ানমার সীমান্তে কোনো ধরনের বিশৃংখলা সৃষ্টির চেষ্টা করা হলে বিজিবি কঠোর হস্তে দমন করতে প্রস্তুত রয়েছে। সীমান্তের নিরাপত্তায় বিজিবি সর্বদা সতর্ক অবস্থায় রয়েছে। বাংলাদেশের অভ্যন্তরে প্রবেশ করে বিশৃংখলা সৃষ্টির কোনো সুযোগ নেই।

বৃহস্পতিবার বান্দরবানে বিজিবির একটি অনুষ্ঠানে যোগদান শেষে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।

কক্সবাজার ৩৪ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল মঞ্জুরুল হাসান বৃহস্পতিবার সাংবাদিকদের বলেছিলেন, মিয়ানমারের ওপারে হঠাৎ অতিরিক্ত সেনা মোতায়েনের খবরটি জানার পর বিজিপিকে পতাকা বৈঠকের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। তারা সাড়া দিলেই পতাকা বৈঠক হবে।

উল্লেখ্য, গত ২৬ আগস্ট থেকে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর নিপীড়নের মুখে প্রাণ বাঁচাতে প্রায় ৮ লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়। তার মধ্যে বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্তের তুমব্রু কোনারপাড়ার জিরো পয়েন্টে অবস্থান নেয় সাড়ে ছয় হাজার রোহিঙ্গা।

(ওএস/এসপি/মার্চ ০২, ২০১৮)

পাঠকের মতামত:

২০ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test