E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

জগন্নাথের চারপাশে গড়ে উঠেছে শিবিরের আস্তানা

২০১৪ জুলাই ০৮ ০০:০০:৩৫
জগন্নাথের চারপাশে গড়ে উঠেছে শিবিরের আস্তানা

জবি প্রতিনিধি: পুরান ঢাকায় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) আশপাশে বিভিন্ন বাসাবাড়ি, মেস ও ফ্ল্যাট ভাড়া নিয়ে অর্ধশতাধিক আস্তানা গড়ে তুলেছে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর ছাত্রসংগঠন ইসলামী ছাত্রশিবির।

সেখান থেকে সক্রিয় কার্যক্রম পরিচালনার চেষ্টা করছেন তারা। পুরান ঢাকায় শিবিরের কয়েকটি হামলার ঘটনার পর গোয়েন্দারা এমনই তথ্য পেয়েছেন।

গোয়েন্দা সূত্র জানায়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, কবি নজরুল কলেজ ও শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজকে কেন্দ্র করে শিবিরকর্মীরা এর আশপাশের অধিকাংশ মেসে রাজনৈতিক পরিচয় গোপন রেখে একসঙ্গে বসবাস করছেন। সেখানে গোপনে তাদের বৈঠকও চলে।

বাংলাবাজারের প্যারীদাস রোডের কয়েকটি প্রেসবাড়ি থেকে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শিবিরের আস্তনাগুলো নিয়ন্ত্রিত হয় বলে অভিযোগ রয়েছে। যাত্রাবাড়ীর মীরহাজিরবাগের ‘আল রাজী ছাত্রাবাস’-এর পরিচালক তিনজন। তাদের একজন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামের ইতিহাস বিভাগের ছাত্র রহিম উদ্দিন। পাঁচতলা ওই ভবনের তিনতলা থেকে পাঁচতলা পর্যন্ত শিবির কর্মীদের মেস বলে এলাকাবাসী জানান। এসব মেস রহিম উদ্দিনের মেস নামে পরিচিত।

রহিম উদ্দিনের মেসে ৮০-৯০ জন ছাত্র থাকেন। এর মধ্যে ১০-১২ জন সাধারণ শিক্ষার্থী হলেও বাকিরা সবাই শিবির কর্মী বলে অভিযোগ রয়েছে। ওই মেসের কাছেই রহিম উদ্দিনের আরেকটি ছাত্রাবাস। ‘লিবার্টি’ নামের এ ছাত্রাবাসটি ওই ভবনের তৃতীয় ও চতুর্থ তলায় অবস্থিত। সেখানে ৮০ থেকে ৯০ জন বাস করছেন, যাদের অধিকাংশই শিবিরকর্মী বলে জানা গেছে।

তবে আল রাজী ছাত্রাবাসের পরিচালক মনির দাবি করেন, ‘শিবিরের কোনো কার্যক্রম ছাত্রাবাসে নেই। এটি বাণিজ্যিক ছাত্রাবাস।’

পুরান ঢাকার হাজী মজিদ লেনের বেশিরভাগ ছাত্রাবাসই শিবিরের ঘাঁটি। হাজী মজিদ লেনের একটি পাঁচতলা বাড়ির নিচতলায় গিয়ে দেখা গেছে, ১৫-২০ জন সেখানে থাকছেন, যারা প্রত্যেকে শিবিরকর্মী।

কলতাবাজার বড় মসজিদের গেটের উত্তর পাশের একটি বাসা শিবিরের আরেকটি ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত। কলতাবাজার ছোট মসজিদসংলগ্ন একটি মেসে থাকেন কয়েকজন শিবিরকর্মী। ওই মেসের নিয়ন্ত্রণের দায়িত্বে রয়েছেন সূত্রাপুর থানা জামায়াতের সাধারণ সম্পাদক।

২৬ ভজহরি সাহা স্ট্রিটের একটি বাড়ির দ্বিতীয় তলায় সিঁড়ির পাশে দুই কক্ষের একটি মেসের থাকেন ১০-১২ জন শিবিরকর্মী। সিঁড়ির কাছে প্রথম কক্ষটির দরজায় সব সময়ই তালা ঝোলানো থাকে। মেসের সদস্যরা কৌশলে প্রথম কক্ষের দরজা দিয়ে না ঢুকে ঘুরে দ্বিতীয় কক্ষ দিয়ে ভেতরে প্রবেশ করেন। এ মেসের প্রধান জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের মাস্টার্সের এক ছাত্র। তিনি শিবিরকর্মী বলে জানা গেছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সিংটোলা জামে মসজিদ-লাগোয়া মেসে ১৫-১৬ জন, ৭/৩ বি রঘুনাথ দাস লেনে (কুত্তার গলি) ২০-২২ জন; বাংলাবাজার কাজি অফিস ভবনের তৃতীয় ও চতুর্থ তলায় (সোনালী ব্যাংকের পাশে) ৩০-৩৫ জন; সুরিটোলার লুৎফর রহমান লেন সুবেদারঘাট মসজিদ-সংলগ্ন মেসে ১০-১২ জন; কোতোয়ালির ঘিপট্টির কবিরাজ লেনের ভবনের দ্বিতীয় তলায় আটজন; সূত্রাপুরের নাসিরউদ্দিন সরদার লেনের একটি ভবনের চতুর্থ তলায় ১৮ জন; দীননাথ সেন রোডের একটি বাড়িতে ২০-২৫ জন এবং ডিস্ট্রিলারি রোডের একটি বাড়ির নিচতলায় ১০-১২ জন শিবির কর্মী থাকেন।

বংশালের নবাবপুর রোডের ব্র্যাক ব্যাংক ভবনের ষষ্ঠ তলায় একটি মেসে ১৫-২০ জন শিবির কর্মী থাকতেন। গ্রেফতার-আতঙ্কে তারা ওই মেস ছেড়ে দেন। একইভাবে আলুবাজারের ওসমান গনি রোডের হাজি রহমান ভিলার একটি মেসসহ ১০-১২টি মেসের স্থান পরিবর্তন করেছেন শিবিরকর্মীরা।

পুরান ঢাকায় ছাত্রদলের কার্যক্রম স্থবির হয়ে পড়লেও থেমে নেই শিবিরের নাশকতার পরিকল্পনা। অভিনব কৌশল ব্যবহার করে গোপনে ক্যাম্পাসের আশপাশের হোটেল-রেস্টুরেন্ট, মেস বা বাসাবাড়িতে এবং ছাত্রলীগ ও ছাত্রদলকর্মী বেশে গোপনে নিজেদের সাংগঠনিক কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন তারা। গ্রেফতার এড়াতে শিবিরকর্মীরা সংশ্লিষ্ট থানা পুলিশকে নিয়মিত মাসোহারা দিয়েও থাকেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

তবে শিবিরের কাছ থেকে পুলিশ অর্থ নিচ্ছেন, এমন কোনো তথ্য জানা নেই বলে জানিয়েছেন কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) খান মোহাম্মদ কে এম ফিরোজ ও সূত্রাপুর থানার ওসি খলিলুর রহমান।

(ওএস/এস/জুলাই ০৮, ২০১৪)

পাঠকের মতামত:

২৯ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test