E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

১২০ গ্রাম পুলিশ বেতন ভাতার অর্ধেক পাচ্ছেন না 

নেপথ্যে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও প্রকৌশলীর বিরোধ!

২০১৮ মার্চ ১২ ১৭:০০:৫৬
নেপথ্যে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও প্রকৌশলীর বিরোধ!

রঘুনাথ খাঁ, সাতক্ষীরা : সাতক্ষীরার তালা উপজেলার ১০৮ জন চৌকিদার ও ১২ জন দফাদার পাঁচ মাস যাবৎ ইউনিয়ন পরিষদ থেকে প্রাপ্ত বেতন ও  থানা থেকে সাতমাস যাবৎ যাতায়াত ভাতা না পেয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছেন। প্রতিকার চেয়ে তারা রবিবার দুপুরে জেলা প্রশাসকের সঙ্গে দেখা করে লিখিত আবেদন জানিয়েছেন।

শের আলী গাজী, জালালউদ্দিন , কোমল দে, মনোরঞ্জন দত্তসহ কয়েকজন গ্রাম পুলিশ জানান, চৌকিদাররা প্রতি মাসে তিন হাজার টাকা বেতন পেয়ে থাকেন। এর অর্ধেক টাকা ইউনিয়ন পরিষদের মাধ্যমে পেয়ে থাকেন। স্থাবর সম্পত্তি হস্তান্তর করের ১ শতাংশ হিসেবে প্রাপ্য রাজস্ব সংক্রান্ত ব্যাংক হিসাব নম্বর থেকে টাকা তোলার জটিলতায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও উপজেলা প্রকৌশলীর মধ্যে বিরোধকে কেন্দ্র করে তারা ১০৮ জন চৌকিদার ও ১২ জন দফাদার গত বছরের অক্টোবর থেকে চলতি বছরের ফেব্র“য়ারি মাস পর্যন্ত অর্ধেক বেতন পাননি।

এ ছাড়া সাপ্তাহিক থানা হাজিরা বাবদ ৩০০ করে টাকা থানা থেকে পেয়ে থাকলেও গত বছরেরে আগষ্ট মাস থেকে তারা তা পাচ্ছেন না। সব মিলিয়ে তাদের ১৯ লাখ ৯২ হাজার টাকা বকেয়া রয়েছে। এ অবস্থা চলতে থাকলে তাদের অনাহারে অর্ধাহারে দিন কাটাতে হবে। এমনকি সন্তানদের লেখাপড়া ও বৃদ্ধ বাবা মায়ের চিকিৎসা খরচ যোগাড় করতে না মেরে মৃত্যু মুখে ঠলে দিতে হবে।

এদিকে তালা উপজেলা ভারপ্রাপ্ত প্রকৌশলী কাজী আবু সাঈদ মোঃ জসীম জানান, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের পরিপত্র অনুযায়ি স্থাবর সম্পত্তি হস্তান্তর করের ১ শতাংশ হিসেবে প্রাপ্য রাজস্ব ব্যয় সংক্রান্ত নির্দেশিকায় ইউনিয়ন পরিষদের স্থাবর সম্পত্তি হস্তান্তর কর সংক্রান্ত হিসাব উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও উপজেলা প্রকৌশলীর যৌথ স্বাক্ষরে পরিচালিত হবে মর্মে নির্দেশনা রয়েছে। সে অনুযায়ি ২০০৫ সাল থেকে ২০১৬ সালের ১৯ এপ্রিল সোনালী ব্যাংকের তালা শাখায় কার্যক্রম চলে এসেছে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে মাহাবুবর রহমান বদলী হয়ে যাওয়ার পর মোঃ ফরিদ হোসেন যোগদান করেন।

গত বছরের জুলাই মাসে তিনি জানতে পারেন যে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার একক স্বাক্ষরের মাধ্যমে ওই হিসাব থেকে বিপুল অঙ্কের টাকা তোলা হয়েছে। এ কারণে তিনি ব্যাংক ব্যবস্থাপকের কাছে গত বছরের ৩০ জুলাই স্টেটমেন্ট চেয়ে পাঠান। ওই দিন স্টেটমেন্ট পাওয়ার পর তিনি পরদিন টাকা স্থান্তরের ব্যাপারে আরো একটি চিঠি দেন। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর টাকা স্থানান্তরের ব্যাপারে পহেলা আগষ্ট তিনি সোনালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপককে চিঠি দেন। ব্যাংক কর্তৃপক্ষ কোন জবাব না দেওয়ায় তিনি সোনালী ব্যাংকের ডিজিএমকে ১৭ আগষ্ট একটি চিঠি দেন।

ডিজিএম সংশ্লিষ্ট ব্যংক ব্যবস্থাপককে প্রকৌশলী বরাবর তথ্য দেওয়ার জন্য চিঠি দেন। এ ছাড়া ১৬ আগষ্ট যৌথ হিসাবকে কিভাবে একক হিসাবে রুপান্তরিত করা হলো তা জানতে চেয়ে সোনালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপক বরবার চিঠি দেন তিনি। কয়েকটি চিঠি দেওয়ার পর গত বছরের ৯ নভেম্বর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা একটি অলিখিত একাউণ্ট কার্ড দিয়ে যৌথ একাউন্ট পরিচালনার জন্য তাতে নমুনা সাক্ষর করতে বললে তিনি তা করেননি। ১৬ নভেম্বর সোনালী ব্যাংক কর্তৃপক্ষ তার কাছে পাঁচ লাখ ৪৯ হাজার ৩০০ টাকার একটি চেক পাঠিয়ে দিয়ে তা সুরহা করতে বলেন। হিসাবটি কিভাবে পরিচালিত হবে তার রুপরেখা না পাওয়ায় ব্যাংক কর্তৃপক্ষ ওই চেকটি গত ১৬ জানুয়ারি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার অফিসে ফেরৎ দেন।

কাজী আবু সাঈদ মোঃ জসীম বলেন, সরকারি পরিপত্র না পেয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার একক সাক্ষরে টাকা স্থানান্তরের বিষয়ে তিনি খুলনা বিভাগীয় মুখ্য প্রকৌশলী আফজাল হোসেনকে অবহিত করেছেন । চলতি বছরের ৯ জানুয়ারি তিনি সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সচীবসহ বিভিন্ন উর্দ্ধতন কর্মকর্তাকে প্রতিকার চেয়ে চিঠি দিয়েছেন।

এ ছাড়া এ সংক্রান্ত তদন্তের অংশ হিসেবে সাতক্ষীরার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) আব্দুল হান্নান তাকে ডেকে টাকা হিসাব থেকে স্থানান্তরসহ বিভিন্ন বিষয়ে উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তার জবারের সত্যতা নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নিয়ম বহির্ভুতভাবে টাকা স্থানান্তর করে তার জবাবদিহীতা না করতে পেরে পরবর্তীকে জয়েন্ট একাউন্ট করে তাকে ফাঁসাতে চাইছেন বলে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নে জানান উপজেলা প্রকৌশলী।

তবে তালা উপজেলার একাধিক জনপ্রতিনিধি অভিযোগ করে বলেন, নিজের কাছের লোক বলে পরিচিত এমন ইউপি চেয়ারম্যানদের নামে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা চেক দিয়ে এক কোটি সাত লাখ টাকা উত্তোলন করেছেন। এ চেক দেওয়ার ক্ষেত্রে কোন রেজুলেশন, স্টেটমেন্ট বা প্রকল্প বাস্তবায়নের চিঠি নেই। যার অধিকাংশ টাকাই লুটপাট হয়েছে।

সোনালী ব্যাংকের তালা শাখার ব্যবস্থাপক ভবেশ চন্দ্র মৃধা জানান, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের স্থাবর সম্পত্তি হস্তান্তর কর সংক্রান্ত পরিপত্র সম্পর্কে তার সঠিক ধারণা ছিল না। বিষয়টি নিয়ে জটিলতা সৃষ্টি হওয়ায় পাঁচ লাখ ৪৯ হাজার ৩০০ টাকার চেকটি ফেরৎ দেওয়া হয়েছে। যদিও একক সাক্ষরে টাকা তোলার কাজটি তার আগের ব্যবস্থাপক আনছার আলীর আমলে শুরু হয়েছিল।

তালা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রোরবার রাত ৭টার দিকে এ প্রতিবেদককে জানান, স্থাবর সম্পত্তি হস্তান্তর কর ১ শতাংশ সম্পর্কিত সরকারি পরিপত্রে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও উপজেলা প্রকৌশলীর যৌথ সাক্ষরে টাকা তোলার কথা বলা থাকলেও একক সাক্ষরে টাকা তোলা যাবে না এমনটি লেখা নেই। তিনি ইউনিয়ন পরিষদ থেকে পাওয়া গ্রাম পুলিশদের বেতনের অর্ধেকাংশ সরাসরি এটিম কার্ডের মাধ্যমে ডাচ বাংলা ব্যাংকের মাধ্যমে দেওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেছিলেন। তাতে তারা ক্ষতিগ্রস্ত হতো না।

উপজেলা প্রকৌশলী বিনা ভাড়ায় সরকারি কোয়ার্টার ব্যবহার করার বিষয়টি নিয়ে সতর্ক করা বা তার বিরুদ্ধে সার্টিফিকেট কেস করার ব্যাপারে সতর্ক করলে তিনি ক্ষুব্ধ হয়ে নতুন হিসাব কার্ডে নমুনা সাক্ষর করছেন না। ফলে কিছুটা সমস্যা হলেও তিনি বিষয়টি জেলা প্রশাসকসহ উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেছেন। নিজের কাছের লোক বলে পরিচিত ইউপি চেয়ারম্যানদের কোন রেজুলেশন, স্টেটমেন্ট বা প্রকল্প বাস্তবায়নের চিঠি ছাড়াই চেক দিয়ে টাকা লুটপাট করা হয়েছে এমন অভিযোগ সঠিক নয় বলে দাবি করেন তিনি।

সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক মোঃ ইফতেখার হোসেন জানান, গ্রাম পুলিশদের বেতন ভাতা পরিশোধের বিষয়টি আগামি এক সপ্তাহের মধ্যে সমাধান করা হবে। তবে গ্রাম পুলিশদের স্বারকলিপি তিনি নেননি বলে জানান।

(আরকে/এসপি/মার্চ ১২, ২০১৮)

পাঠকের মতামত:

১৪ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test