E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

শিরোনাম:

কুমিল্লায় উন্নয়নের নামে কেটে ফেলা হচ্ছে বিপুল সংখ্যক বৃক্ষ

২০১৮ মার্চ ১৮ ২২:২৩:১৩
কুমিল্লায় উন্নয়নের নামে কেটে ফেলা হচ্ছে বিপুল সংখ্যক বৃক্ষ

হুমায়ূন কবির জীবন, কুমিল্লা : উন্নয়ন সহযোগী জাইকার অর্থে কুমিল্লায় সড়ক সম্প্রসারণ ও ড্রেনেজ ব্যবস্থার উন্নয়ন করতে গিয়ে কেটে ফেলা হচ্ছে বিপুল সংখ্যক বিশাল বিশাল বৃক্ষ। সবুজ শ্যামল ছাড়া সুনিবিড় কুমিল্লা হারাচ্ছে প্রকৃতির নির্মল সৌন্দর্য। পরিবেশ হয়ে পড়ছে ভারসাম্যহীন। পরিবেশ ধ্বংসের এই যজ্ঞ দেখে ব্যথিত কুমিল্লার মানুষের চেয়ে চেয়ে দেখা ছাড়া আর কিছুই জেন করার নেই।  শহরের প্রবীন বাসিন্দারা আক্ষেপ করে বলছেন নির্বিচারে বৃক্ষ নিধন না করেও ড্রেন্জে ব্যবস্থার উন্নয়ন সম্ভব হতো। 

কুমিল্লা জিলা স্কুল সড়কে গেলেই হাহাকার করে উঠে কুমিল্লার সচেতন মানুষের বুক। করাতে ধারে একে একে ধপাস করে রাস্তায় পড়ছে বিশাল বিশাল গাছ। কেটে টুকরো টুকরো করছে কিছু শ্রমিক। অথচ এই গাছগুলোই কুমিল্লার প্রাণ। কুমিল্লার শ্যামল সবুজ স্বীকৃতি এই গাছগুলোর জন্য। দুই ধারের এই সব গাছ আর ছায়া দেবে না। গাছ থেকে ভেসে আসবে না পাখির কিচির মিচির শব্দ। উন্নয়ন সহযোগি জাইকার অর্থের যথেচ্ছ ব্যবহার করতে গিয়ে কথিত উন্নয়নের নামে কেটে ফেলা হচ্ছে দুই ধারের বিপুল সংখ্যক কেবল অক্সিজেনের অভাবই নয় এ নিধনের ফলে বেড়ে যাবে নগরীর তাপমাত্রা বাড়বে ধূলোবালির পরিমাণ। অসহনীয় হয়ে উঠবে নগরজীবন এমনটাই মনে করছেন সচেতন নগরবাসী।

গাছ কেটে ফেলায় ক্ষুবদ্ধ মেডিকেল শিক্ষার্থী রিয়া বলেন, ‘বর্তমানে আমরা গাছকে যেভাবে অবহেলা করছি, নির্বিচারে নিধন করছি, তা একেবারে ঠিক না। এতে আমাদের বেঁচে থাকার জন্য হুমকি স্বরূপ হবে। কেননা জনসংখ্যা যেভাবে বাড়ছে আমাদের ভালোথাকার জন্য সবুজের হাতছানি গাছপালা প্রয়োজন। আমরা যেভাবে গাছ কাটার মহাউৎসব করছি, যা আগামী দিনে আমাদের টিকে থাকার জন্য হুমকি হবে।

আরেক শিক্ষার্থী রিয়াদ হোসেন বলেন, আমরা যদি দিনের পর দিন এভাবে গাছ কেটে ফেলি তাহলে আমাদের নিজেদের অনেক ক্ষতি হয়ে যাবে। গাছ থেকে আমরা অক্সিজেন পেয়ে থাকি। যা গুরুত্বপূর্ণ ।

বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী পূর্ণিমা চক্রবর্তী বলেন, এ রাস্তায় যাওয়া আসার সময় আমাদের অনেক ঝামেলা হচ্ছে। রোদ্রে অনেক কষ্ট হচ্ছে। গাছগুলো যখন ছিলো তখন ছায়া ছিলো। এখন গাছ না থাকায় আমাদের কষ্ট হচ্ছে। পথচারিদের কষ্ট হচ্ছে। পরিবেশেরও ক্ষতি হচ্ছে।

সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব চন্দন দেব রায় বলেন, রাস্তা উন্নয়নের জন্য গাছ গুলো কাটা হচ্ছে। একটি গতি না করে পুরনো গাছগুলো কাটা হচ্ছে। এটা দুঃখ জনক। তিনি মনে করেন- গাছগুলো রেখেও রাস্তা মেরামত করা যেত।

কুমিল্লা কালচারাল কমপ্লেক্সের সাধারণ সম্পাদক ফরিদ উদ্দিন সিদ্দিকি বলেন, সিটি কর্পোরেশন যেভাবে রাস্তার দুপাশের গাছ কেটে আমাদের পরিবেশকে দূষণীয় করছে তা আগেই ভেবে দেখার উচিত ছিল। এখান দিয়ে যখন জিলা স্কুলের হাজার হাজার শিক্ষার্থী বের হবে তাদের নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হবে। পূর্ব পরিকল্পনা করলে হয়তো গাছ রেখেই ড্রেন উন্নয়ন করা যেত।

বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন, কুমিল্লা জেলা শাখার সভাপতি ডা. মোসলেহ উদ্দিন বলেন, এটি একটি ট্রেম্পরারী ড্রেনেজ ব্যবস্থা। এর জন্য এতো আয়োজনের প্রয়োজন ছিলো না এবং গাছ কাটার প্রয়োজন ছিলো বলে আমার জানা নেই। এ গাছগুলো পরিবেশ শীতল রেখেছিলো। এ সড়কটি একটি জনবহুল চলাচল সড়ক। এখানে যানজট হয়, জলজট হয়, বিদ্যার্থীদের জট হয়। আমার মনে হয় এখানে সবচেয়ে বড় ভানার বিষয় ছিলো পরিবেশ। এ বৃক্ষ গুলো ছায়া দিয়ে শীতল পরিবেশসহ পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করে যাচ্ছিলো। এ বিষয়টি অবশ্যই আত্মঘাতিক বলে আমি মনে করছি।

কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশনের মেয়র মনিরুল হক সাক্কু বলেন, জাইকা প্রজেক্টের কতগুলো নিয়ম আছে। নির্দিষ্ট মাপ আছে। যা মেনে ড্রেন করতে হয়। কিভাবে ড্রেন করলে শহরের জ্বলাবদ্ধতা নিরসন হবে আমরা তা যতটা পারছি চেষ্টা করছি গাছ না কেটে করতে। আমাদের ড্রেন গুলো করতে যে গাগুলো না কাটলেও চলবে যেগুলো আমার কাটছি না। গাছ কাটার ইচ্ছা আমাদের নেই। গাছের সাথে আমাদের শত্রুতা নেই। যতটুকো সম্ভব গাছ রেখেই উন্নয়ন করা হচ্ছে। না হলে জ্বলাবদ্ধতা নিরসন হবে না।

নগরীর জন্য উন্নয়ন যেমন প্রয়োজন তেমনি সবুজ বৃক্ষও প্রয়োজন উল্লেখ করে এসব পুরনো চির সবুজ গাছ রেখেই ড্রেনেজ ব্যবস্থার উন্নয়ন করা যেত বলে মনে করছেন পরিবেশবিদরা। যে উন্নয়ন কুমিল্লার সবুজ শ্যামল প্রকৃতি কেড়ে নেয় সেই কথিত উন্নয়ন না করাই শ্রেয় মনে করেন কুমিল্লার সচেতন মানুষ। সেই সাথে অবিলম্বে জনসাধারণের কল্যাণের জন্য এসব বৃক্ষ নিধন রোধ করার দাবি জানান নগরবাসী।

(ওএস/এসপি/মার্চ ১৮, ২০১৮)

পাঠকের মতামত:

২৭ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test