E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

রূপপুর প্রকল্পের ভর্তুকির টাকা না দেয়ায় ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের মানববন্ধন 

২০১৮ এপ্রিল ১৭ ১৭:৪১:২০
রূপপুর প্রকল্পের ভর্তুকির টাকা না দেয়ায় ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের মানববন্ধন 

ঈশ্বরদী (পাবনা) প্রতিনিধি : রূপপুর পারমাণিবক বিদ্যুৎ প্রকল্পের ভর্তুকির টাকা না দেয়ায় ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকরা দ্রুত ক্ষতিপূরণের দাবিতে মানববন্ধন ও ইউএনও অফিস ঘেরাও করেছে।

ক্ষতিগ্রস্তরা এসময় বলেন, আমাদের টাকা দেয়া হোক, না হয় মেরে ফেলা হোক। পাকশী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এনামুল হক বিশ্বাসের নেতৃত্বে মঙ্গলবার দুপুরে শতাধিক ক্ষতিগ্রস্থ কৃষক উপজেলা পরিষদ চত্বরে মানববন্ধন শেষে ইউএনও অফিস ঘেরাও করেন।

পাকশীর চেয়ারম্যান এনাম বিশ্বাস জানান, পারমাণিবক বিদ্যুৎ প্রকল্পের জন্য সরকার সর্বশেষ লক্ষীকুন্ডা ও পাকশী ইউনিয়নের পদ্মা নদীর চরাঞ্চলের ৯৯৬ একর জমি কৃষকদের ক্ষতিপূরণের আশ্বাস দিয়ে অধিগ্রহন করে।

এর মধ্যে ১৯ একর ব্যক্তি মালিকানাধীন অবশিষ্ঠ সরকারের খাস খতিয়ানভূক্ত। এসব জমি লীজ নিয়ে দীর্ঘদিন যাবত এলাকার কৃষকরা চাষাবাদ করে পরিবারের ভরণ-পোষণ নিবৃত্ত করছিল। জমি অধিগ্রহনের সময় কৃষকদের তালিকা ও ক্ষতি নির্ধারণের জন্য ১১ সদস্য বিশিষ্ঠ একটি কমিটি গঠন করা হয়।

এই কমিটিতে লক্ষীকুন্ডা ও পাকশী ইউপির দুই চেয়ারম্যান, দুই তহশিলদার, সহকারী কমিশনার (ভূমি), উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা, বন কর্মকর্তা, মৎস্য কর্মকর্তা, প্রকল্পের সাইড অফিসের ইনচার্জ ও একজন প্রকৌশলী ছিলেন।

৯৯৬ একর জমির অধীনে ৭৭৫ জন কৃষকের নামে ২৭কোটি ৩৪ লাখ ৮৭ হাজার ৯৯০ টাকার ক্ষতিপূরণ প্রদানের জন্য একটি তালিকা প্রস্তুত করে প্রকল্প অফিস, জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অফিসে জমা দেয়া হয়। এই তালিকা অনুযায়ী প্রকল্প কর্তৃপক্ষ যাবতীয় আনুষ্ঠানিকত শেষ করে ক্ষতিপূরণের জন্য টাকা বরাদ্দ করেন।

বরাদ্দকৃত টাকা প্রদানের জন্য জেলা প্রশাসক কার্যালয় প্রায় বছর খানেক আগে ঈশ্বরদী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে দায়িত্ত্ব দিলেও অদৃশ্য কারণে এই টাকা ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকদের প্রদান না করায় কৃষকরা তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেন।

ক্ষতিগ্রস্থ কৃষক সাইদার হোসেন বাবু জানান, তাঁর ২৬ বিঘার পেয়ার বাগান ছিল। কৃষি ব্যাংকের সাড়ে ছয় লাখ টাকা ঋণ রয়েছে। সুদ বেড়েই চলেছে, টাকা না দেয়ায় ব্যাংক মামলা করেছে। কোন পথ খুঁজে পাচ্ছি না। কৃষক মতিউর রহমানের ১০ বিঘার বাউকূলের বাগান ছাড়্ওা ৪০ফিট লম্বা সেমিপাকা ঘরও ছিল। ক্ষতিপূরণ না পাওয়ায় ছেলেমেয়েদের পড়ালেখা বন্ধ হয়েছে। আকমল হোসেনের ১১বিঘার সবজি চলে গেছে। অনাহারে-অর্ধাহারে দিন কাটাচ্ছেন বলে তিনি জানান। রবিউল আলমের ১৮ বিঘায় ৪৫২টি আমগাছ, ৩৭টি লিচু গাছ, ১১১টি কাঠের গাছ ছিল। ক্ষতিপূরণের টাকা না পেয়ে ধার-দেনা করে সংসার চালাচ্ছেন।

কৃষকরা আরো জানান, জমি প্রকল্পভূক্ত করার সময় কর্মকর্তারা বলেছিল, প্রকল্পের কাজে তাদের নেয়া হবে। কিন্তু বিশাল কর্মযজ্ঞ চললেও ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকদের কাজে নেয়া হয়নি। কৃষক সুজন মালিথা বলেন, প্রধানমন্ত্রীর এই প্রকল্প নির্মাণে রূপপুরের মানুষ সানন্দে তাঁদের জমি-জমা দিয়ে দিয়েছে।

রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের সাইড অফিস সূত্র জানায়, এই প্রকল্পের জন্য পদ্মা নদী তীরবর্তী কিছু আবাদি, পদ্মাচরের স্বল্প সময়ে উৎপাদিত সবজির মাঠ, অনাবাদি বালু চর ও পদ্মা নদীর কোল (ক্যানেল) বর্তমানে চররূপ কণিকা মৌজার অধীনে ৯৯৬ একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়। এই জমি পদ্মা নদীর চর যার পুরোটাই খাস খতিয়ানভূক্ত। নিয়মানুযায়ী প্রকল্পের পক্ষ হতে ক্ষতিপূরণের টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। কেন টাকা দেয়া হচ্ছে না এই বিষয়টি তারা জানেন না।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার আল মামুনকে কোন ক্ষতিপূরণের টাকা প্রদান করা হচ্ছে না বলে জিজ্ঞেস করলে তিনি জানান, আমি এখানে কয়েকদিন আগে যোগদান করেছি। ক্ষতিপূরণের বিষয়টি চলমান প্রক্রিয়া। উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করব।

(এসকেকে/এসপি/এপ্রিল ১৭, ২০১৮)

পাঠকের মতামত:

১৯ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test