E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

শিরোনাম:

চিকিৎসা ও ঘর মেরামতের উদ্যোগ নিলেন ইউএনও 

চাটমোহরে শিকলবন্দি বৃষ্টির চিকিৎসা শুরু 

২০১৮ মে ০৯ ২৩:৪৯:৪৫
চাটমোহরে শিকলবন্দি বৃষ্টির চিকিৎসা শুরু 

শামীম হাসান মিলন, চাটমোহর (পাবনা) : পাবনার চাটমোহর উপজেলার ধানকুনিয়া গ্রামের ১০ বছর ধরে শিকল বন্দি থাকা মানসিক প্রতিবন্ধী শুকজান নেছা বৃষ্টির চিকিৎসা অবশেষে শুরু হলো। 

বুধবার সকালে বৃষ্টিকে আনতে বাড়ির সামনের রাস্তায় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের অ্যাম্বুলেন্স গিয়ে দাঁড়ানোর কিছুক্ষণের মধ্যেই বৃষ্টির স্বজনরা তাকে নিয়ে হাজির হয়। সকাল ১০টার দিকে পাবনা মানসিক হাসপাতালের উদ্দেশ্যে বৃষ্টিকে বহনকারী অ্যাম্বুলেন্স রওনা দেয়।

এ সময় উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) সরকার অসীম কুমার, উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. সবিজুর রহমান, উপজেলা সমাজ সেবা অফিসার মো. রেজাউল করিম, এ্যাকাডেমিক সুপারভাইজার গোলাম মোস্তফা, নিমাইচড়া ইউপি চেয়ারম্যান কামরুজ্জামান খোকনসহ অন্যান্যরা উপস্থিত ছিলেন।

সকালে বৃষ্টিকে নিতে অ্যাম্বুলেন্সটি তাদের বাড়ির সামনে দাঁড়ালে শত শত উৎসুক মানুষ ভিড় করে রাস্তার ওপর। দীর্ঘদিন শেকল বন্দি থাকা মানসিক প্রতিবন্ধী বৃষ্টিকে চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যাওয়া দেখে উপস্থিত অনেকের চোখ বেয়ে গড়িয়ে পড়ে আনন্দাশ্রু। এ সময় অনেকেই বলেন ‘কথা রাখলেন ইউএনও’। অপরদিকে বৃষ্টির মুখে ছিল অমলিন হাসি। এদিকে বৃষ্টির জীর্ণ-শীর্ণ বসতঘর মেরামতের জন্য পরিমাপ শুরু হয়েছে। আগামী দু’একদিনের মধ্যে ঘর মেরামত শুরু হবে বলে জানা গেছে।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার সরকার অসীম কুমার বলেন, ‘বৃষ্টিকে চিকিৎসকের কাছে পাঠিয়ে খুব ভাল লাগছে। তবে এই আনন্দের মাত্রা আরও বাড়বে যখন সে কিছুটা হলেও সুস্থ হবে এবং কখনই তাকে (বৃষ্টি) আর শিকল বন্দি হয়ে থাকতে হবে না।’

উল্লেখ্য, ২৯ এপ্রিল সমকালে শুকজান নেছা বৃষ্টির এমন করুণ পরিণতি নিয়ে সংবাদ প্রকাশের পর বৃষ্টির দায়িত্ব নেন ইউএনও সরকার অসীম কুমার। এছাড়া জীর্ণ-শীর্ণ বসতঘর মেরামতের ব্যবস্থাও করেন তিনি। বাবা-মা হারা বৃষ্টি নামের ১৫ বছরের শিশু দশটি বছর শিকলে বন্দি অবস্থায় কেটেছে তার। বয়স্ক ভাতা আর প্রতিবন্ধি ভাতার টাকায় বৃদ্ধা বুড়ি মায়ের ভাঙ্গা একখানা ঘরে অভাব টানাপোড়েন নিয়ে কাটছে তাদের দিন। শিকলে দু’টি তালা দিয়ে রাখা হতো তাকে। শিকল বন্দি বৃষ্টির জীবনী নিয়ে পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশ হলে ইউএনও সরকার অসীম কুমার তার বাড়িতে ছুটে যান। এসময় শিকল বন্দি জীবনের অবসান ঘটিয়ে চিকিৎসা ও ভাঙ্গা ঘর মেরামতের দায়িত্ব নেন ইউএনও। বৃষ্টির জন্মের পর মারা যান মা রোজিনা খাতুন। এরপর বাবা মনিরুল ইসলাম অন্যত্র বিয়ে করে বসবাস শুরু করেন। কোন জায়গায় ঠাঁই না পেয়ে অবশেষে শতবর্ষী বুড়া মা (মায়ের দাদি) রাহেলা বেগমের কাছে আশ্রয় মেলে মানসিক প্রতিবন্ধী বৃষ্টির। দীর্ঘ দশ বছর দিনরাত শেকল বন্দি হয়ে থাকতে হয় বৃষ্টিকে!

(এসএইচএম/এসপি/মে ০৯, ২০১৮)

পাঠকের মতামত:

২৯ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test