E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে ছাত্রী যৌন হয়রানীর অভিযোগে তোলপাড়!

২০১৮ মে ২৫ ১২:৫৮:২৩
প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে ছাত্রী যৌন হয়রানীর অভিযোগে তোলপাড়!

স্টাফ রিপোর্টার, দিনাজপুর : দিনাজপুরের হাকিমপুর(হিলি) উপজেলার ‘হিলি পাবলিক স্কুলের’ প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে ৭ম শ্রেনীর ওই দুই ছাত্রীকে যৌন হয়রানী’র অভিযোগ উঠেছে। ঘটনার পর থেকে ওই দু’ছাত্রী স্কুলে যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছে। এনিয়ে উপজেলা নির্বাহী অফিসার এক ছাত্রী’র অভিভাবক অভিযোগ দিয়েছে। এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী অফিসার শুকরিয়া পারভীন বিআরডিবি অফিসার মো: আশরাফুল আলমকে প্রধান করে ৩ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে।

অন্যদিকে এ ঘটনাকে ষড়যন্ত্রমূলক, ভিত্তিহীন, বানোয়াট ও উদ্দেশ্য প্রণোদিত বলে দাবী করেছে অভিযুক্ত ‘হিলি পাবলিক স্কুলের’ প্রধান শিক্ষক রাফেউল ইসলাম রিটন ও তার অনুসারীরা। তারা বলেছেন,স্ত্রী ও মেয়েকে অসৎ আচরনের জন্য স্কুল থেকে বহিস্কার করার পর সাগর ইসলাম রনি নামের একব্যাক্তি প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে তার মেয়েকে যৌন হয়রানী’র মিথ্যা অভিযোগ হাকিমপুর উপজেলা নিবার্হী অফিসার বরাবরে দিয়েছে। যা সত্য নয়, মিথ্যা ও বানোয়াট। একটি মহল ষড়যন্ত্র মূলক ভাবে হাতিয়ার হিসেবে সাগর ইসলাম রনি নামের ওই ব্যক্তিকে ব্যবহার করেছে।

এর আগে ২০১০ সালের ১২ নভেম্বর ওই প্রধান শিক্ষক রাফেউল ইসলাম রিটনের বিরুদ্ধে ৫ম শ্রেনীর এক ছাত্রীকে স্কুলের একটি রুমে নিয়ে ধর্ষণের চেষ্টা অভিযোগ ওঠে। ছাত্রীটির পরিবার উপজেলা নির্বাহী অফিসার সহ থানায় লিখিত অভিযোগ দেন। অভিযোগ পেয়ে উপজেলা ভ্রাম্যমান আদালত রাফেউলকে আটক করে এক বছরের বিনাশ্রম কারাদন্ড দেন।

কিন্তু অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষক রাফেউল ইসলাম রিটন ও তার অনুসারীদের দাবী, ওই ঘটনাটিও ছিলো ষড়যন্ত্রমূলক, ভিত্তিহীন, বানোয়াট ও উদ্দেশ্য প্রণোদিত। একটি বিশেষ মহল ঈশ্বার্নীত হয়ে প্রধান শিক্ষক রাফেউল ইসলাম রিটন মিথ্যা অভিযোগে ফাসিয়ে দেয়। যা পরে আদালতে নিদোশ প্রমানিত হয়।

হাকিমপুর উপজেলার দক্ষিণ বাসুদেবপুর গ্রামের বাসিন্দা সাগর ইসলাম রনি জানান, আমার মেয়ে হিলি পাবলিক স্কুলের দ্বিতীয় ক্যাম্পাসে ৭ম শ্রেনীতে পড়াশুনা করে। ওই স্কুলের প্রধান শিক্ষক রাফেউল ইসলাম রিটন প্রায় সময় আমার মেয়ের সাথে বিভিন্ন ধরণের যৌন হয়রানীমুলক আচরণ করেন। আমার মেয়ে বিষয়টি জানালে আমি রাফেউলকে সতর্ক করে দেই। কিন্তু এরপরেও গত ৭ মে দুপুরের দিকে স্কুল চলাকালিন সময়ে আমার মেয়ে ক্লাসের পড়াশুনা করে বসেছিল। এসময় রাফেউল আমার মেয়েকে ক্লাসের রুম থেকে ডেকে তার অফিসে নিয়ে যায় এবং মেয়ের গায়ে হাত দিলে মেয়ে দৌড়ে বের হলে ঘটনাটি মেয়ের বান্ধবী দেখে ফেলে।

স্কুল ছুটির পর মেয়ে বাড়ীতে এসে কান্না করতে থাকলে একপর্যায়ে আমাকে এবং তার মাকে জানায়। পরে মেয়ের বান্ধবীর কাছে ঘটনাটি শুনে স্থানিয় লোকজনকে জানালে তারা আমাকে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কাছে পাঠান। এব্যাপারে গত ১৪ মে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কাছে গিয়ে ঘটনাটি জানালে তিনি লিখিত অভিযোগ দেওয়ার পরামর্শ দেন। সেইদিনই অভিযোগটি দেওয়া হয়েছে। বর্তমানে আমার মেয়ে স্কুলে যেতে ভয় পাচ্ছে। মেয়ের ভবিষ্যত নিয়ে আমরা পরিবারের লোকজনেরা শঙ্কিত হয়ে পড়েছি।

ভূক্তভোগী ছাত্রীটি জানায়, ৬ষ্ঠ শ্রেনীতে থাকতে ওই স্যার কয়েকবার গায়ে হাত দেয়। আমি প্রতিবাদ করলে স্যার বলে আমি কত ছাত্রীদের গায়ে হাত দিয়েছি, তোর মতো তো এমন কথা বলে না। তোকে তো আমি টাকা দিবো, তুই এমন করিস কেন। আচ্ছা তুই আমার কথায় রাজী না হলে তোর বান্ধবীকে আমার জন্য ম্যানেজ করে দে। আমি এই কথাগুলি মামুন স্যারকে জানাইছি। ওই স্যারও বলে তুই আর কাউকে জানাবি না। তোর সমস্যা হবে।

প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে বান্ধবীকে উত্ত্যক্ত করার কথা স্বীকার করে আরেক ভূক্তভোগি ছাত্রী জানায়, স্যার আমার বান্ধবীকে তার রুমে ডেকে নিয়ে ঝাঁপটে ধরলে আমার বান্ধবী দৌড়ে পালিয়ে আসে। আমার সাথেও এই ধরণের আচরণ করেছে। স্যার বলে টাকা দিবো, আর তো কেউ এমন করে না। আমরা লজ্জায় ১২ মে থেকে স্কুলে যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছে।

ছাত্রীটির অভিভাবক লিয়াকত হোসেন মনা জানান, গত জানুয়ারি মাসে বাংলাহিলি পাইলট স্কুল এন্ড কলেজ থেকে এনে আমার মেয়েকে রাফেউলের স্কুলে ৭ম শ্রেনীতে ভর্তি করি। কিছুদিন পর মেয়ে আমাকে বলে রাফেউল স্যার খারাপ আচরণ করছে। আমি লজ্জায় কোথাও এ কথাটি বলতে পারিনি।

এদিকে এই ঘটনায় গত ১৪ মে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবরে লিখিত অভিযোগ দেয়া হলেও এখনও কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়নি। এব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মোসা. শুকরিয়া পারভীন জানান, ভূক্তভোগি ছাত্রীটির বাবার কাছ থেকে লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। গত ২১ মে বিষয়টি তদন্তে ৩ সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্তে দোষি প্রমানিত হলে ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এদিকে অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষক রাফেউল ইসলাম রিটন ও তার অনুসারীদের দাবী, ঘটনাটি

ষড়যন্ত্রমূলক,ভিত্তিহীন,বানোয়াট ও উদ্দেশ্য প্রণোদিত। তারা বলেছেন,স্ত্রী ও মেয়েকে অসৎ আচরনের জন্য স্কুল থেকে বহিস্কার করার পর সাগর ইসলাম রনি নামের একব্যাক্তি প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে তার মেয়েকে যৌন হয়রানী’র মিথ্যা অভিযোগ হাকিমপুর উপজেলা নিবার্হী অফিসার বরাবরে দিয়েছে। যা সত্য নয়, মিথ্যা ও বানোয়াট। একটি মহল ষড়যন্ত্র মূলক ভাবে হাতিয়ার হিসেবে সাগর ইসলাম রনি নামের ওই ব্যক্তিকে ব্যবহার করেছে।আগের যাত্রায় ব্যর্থ হয়ে ওইএকই চক্র অভিন্ব কায়দায় বহিস্কৃত আয়া এবং ওই আয়ার বহিস্কৃত ৭ম শ্রেনী পড়–য়া ছাত্রীকে হাতিয়ার হিসাবে ব্যবহার করে হিলি পাবলিক স্কুল ও স্কুল প্রধানের ভাবমুত্তি ক্ষুন্ন করার অপচেষ্টায় লিপ্ত রয়েছে।

স্কুলের প্রধান শিক্ষক এ এফ এম রাফেউল করিম বলেন, অভিযোগকারী সাগর আসলাম রনির স্ত্রী পারভীন আক্তার ওই স্কুলের আয়ার পদে অস্থায়ী ভিত্তিতে চাকরি করতেন। অদাচরনের কারনে তাকে পর পর ৩ বার বরখাস্ত করা হয়। এর পর স্থানীয় নেতৃবৃন্দের অনুরোধে তাকে চাকুরীতে পুনবহাল করা হলেও সে আরও বেপরোয়া হয়ে মদ্যপ অবস্থায় স্কুলে আসা যাওয়া করতে থাকে। এবং স্বামী স্ত্রী দু’জনে স্কুলে মদ্যপ অবস্থায় প্রবেশ করে মারামারি ঘটনাও ঘটিয়েছে। যার কারেন ওই আয়াকে গত ১ মে চাকুরী থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। সেই সাথে তার মেয়ে ৭ম শ্রেনীর ছাত্রী ও এক সহপাঠীকে প্রেম ঘটিত অভিযোগসহ উৎশৃংখল আচরনের কারণে গত ১২ মে স্কুল থেকে বহিস্কার করা হয়। ওই ছাত্রী ও তার সহপাঠির কাছ থেকে মোবাইল ও প্রেমপত্র উদ্ধার করা হয়েছে। মা ও মেয়েকে স্কুল থেকে বহিস্কার করায় ওই কুচক্রি মহল সাগর ইসলাম রনির মাধ্যমে নাটক সাজিয়ে ইউএনওর কাছে অভিযোগ দেয়।

সহকারী শিক্ষক রুহুল আমীন, আল মামুন, আব্দুল ওয়াদুদ জানান, আয়াকে বহিস্কার ও আয়ার মেয়ে ৭ম শ্রেনীর স্কুলছাত্রীকে স্কুলের শৃংখলা ভঙ্গের কারনে বহিস্কার করায় তারা স্কুল ও প্রতিষ্ঠা প্রধানের ভাবমুত্তি ক্ষুন্ন করার জন্য অভিযোগ দিয়ে মান ক্ষুন্ন করছে।

প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে ৭ম শ্রেনীর ওই দুই ছাত্রীকে যৌন হয়রানী’র অভিযোগের ঘটনায় ব্যাপক তোলপাড় চলছে। স্থানীয় সাংবাদিকরাও দু’ভাগে বিভক্ত হয়েছেন। পক্ষে বিপক্ষে চলছে লেখা-লেখি।

(এসএএস/এসপি/মে ২৫, ২০১৮)

পাঠকের মতামত:

১৫ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test