E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

আগৈলঝাড়ায় ভাইস চেয়ারম্যান জসীম সরদারের কান্ড!

২০১৮ জুন ০৭ ২০:২০:৫৩
আগৈলঝাড়ায় ভাইস চেয়ারম্যান জসীম সরদারের কান্ড!

আঞ্চলিক প্রতিনিধি, বরিশাল : আগৈলঝাড়ায় প্রধান শিক্ষিকাকে ম্যানেজ করে ক্ষমতার অপব্যবহার করে নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অর্ধ লক্ষাধিক টাকার গাছ বিক্রি করে দিয়েছেন উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান জসীম সরদার। এঘটনায় স্কুল ম্যানেজিং কমিটিসহ এলাকায় তীব্র ক্ষোভ ও অসন্তোষের সৃষ্টি হয়েছে।

খবর পেয়ে বৃহস্পতিবার সহকারী দুই জন শিক্ষা কর্মকর্তা ঘটনাস্থল গিয়ে তারও ভাইস চেয়ারম্যানের মাধ্যমে প্রভাবিত হয়ে অবৈধভাবে বিক্রি করা গাছ জব্দ না করে অভিযুক্তদের সাফাই বক্তব্য নিয়ে ফিরেছে। কাটা গাছ জব্দ করেছেন ইউএনও।

উপজেলার পশ্চিম সুজনকাঠী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভূমি দাতা ও সাবেক সদস্য ওই গ্রামের পরিমল রায় জানান, তার বাবা স্কুল প্রতিষ্ঠার সময় অন্তত ২০ বছর আগে ২৮ শতক জায়গা দান করেন। এছাড়াও স্থানীয় চিত্ত রঞ্জন মল্লিকও ৮শতক জায়গা দান করেন। তার কমিটির সময় স্কুল চত্তরে লাগানো হয় বিভিন্ন প্রজাতির গাছ।

তিনি আরও বলেন, বিদ্যালয় ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ও উপজেলা পরিষদ ভাইস চেয়ারম্যান জসীম সরদার ম্যানেজিং তার আজ্ঞাবহ প্রধান শিক্ষিকা স্মৃতিকণা দাসকে ম্যানেজ করে নিজের ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে স্কুল কমিটির কোন সভা না করে; এমনকি বিদ্যলয়ের কাউকে না জানিয়ে বিনা কারণে স্কুল চত্তরের কমপক্ষে অর্ধ লক্ষাধিক টাকা মূল্যের ২টি মেহগনি ও ৯টি চাম্বল গাছ তার ফুফাতো ভাই ফরহাদ মিয়ার কাছে বিক্রি করে দিয়েছেন। ক্রেতা ফরহাদ মিয়া বুধবার থেকে গাছ কেটে নেয়া শুরু করলে সভাপতি বা প্রধান শিক্ষিকা বিষয়টি প্রশাসনের সংশ্লিষ্ঠদের অবহিত করেনি।

জানা গেছে, চলতি মাঠ জরিপে বিদ্যালয়ের নামে ১৫০২ খতিয়ানে তিনটি দাগে ২৬.৬৬ শতক জায়গা রেকর্ড হয়। সরকারী নিয়মানুযায়ি পূর্বে ৫৫ শতক, তার পর ৫২ শতক ও বর্তমানে ৩৩ শতক জমি থাকার বাধ্য বাধকতা থাকলেও বর্তমানে ওই স্কুলে জায়গা রয়েছে ২৬.৬৬ শতক। যা বিদ্যালয় স্থাপনে পরিপত্র পরিপন্থী।

গাছের ক্রেতা ফরহাদ মিয়া সাংবাদিকদের জানান, তিনি স্কুলের সভাপতি ভাইস চেয়ারম্যান জসীম সরদারের কাছ থেকে ৬টি গাছ ১৫ হাজার টাকায় কিনেছেন। বাকী ৫টি গাছ তিনি কিভাবে কাটছেন তার কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এগুলো ধরার মধ্যে নয়। তিনি সভাপতি জসীম সরদারের কাছ থেকে গাছ কিনেছেন, স্কুল কমিটির অন্য কেউ এব্যাপারে জানেন কিনা তা তার জানা নেই বলেও জানান তিনি।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা স্মৃতিকণা দাস সাংবাদিকদের বলেন, গাছ বিক্রির ব্যাপারে স্কুল ম্যানেজিং কমিটির কোন আলোচনা বা কোন মিটিং অনুষ্ঠিত হয়নি। এব্যাপারে তিনি কিছুই জানেন না। বৃহস্পতিবার গাছ কাটা দেখে বিষয়টি তিনি শিক্ষা কর্মকর্তাকে অবহিত করেছেন।

শিক্ষা কর্মকর্তা মো. সিরাজুল হক তালুকদার জানান, স্কুলের গাছ বিক্রির খবর পেয়ে বৃহস্পতিবার দুপুরে সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা সুনীল দেবনাথ ও আবুল কালাম আজাদকে তিনি ঘটনাস্থলে পাঠিয়েছিলেন। সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তাদ্বয় এসে তাকে জানিয়েছেন যে, সভাপতি ও প্রধান শিক্ষিকা যৌথ স্বাক্ষরে লিখিত ভাবে উল্লেখ করেছেন, বিক্রি করা গাছগুলো স্কুলের নয়।

শিক্ষা কর্মকর্তার উপস্থিতিতে স্কুলের গাছ না হলে সভাপতি ও প্রধান শিক্ষিকা যৌথ স্বাক্ষরে কেন লিখিত দেবেন, এমন প্রশ্নের জবাবে সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তাগণ কোন সদোত্তর দিতে পারেন নি।
স্কুল সভাপতি ও ভাইস চেয়ারম্যান জসীম সরদার সাংবাদিকদের জানান, গাছগুলি স্কুলের নয়, ব্যাক্তি মালিকানার গাছ। যাদের গাছ তারাই বিক্রি করেছেন।

উপজেলা নিরর্বাহী কর্মকর্তা আশ্রাফ আহম্মেদ রাসেল জানান, অধিকাংশ গাছ কাটা হয়ে গেছে। বাকী দাড়ানো গাছগুলো না কাটতে ক্রেতা ফরহাদ মিয়াকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। কাটা গাছগুলো যেখানে যে অবস্থা আছে সে অবস্থায় জব্দ করা হয়েছে। সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ি বিদ্যালয়ের নামে ৩৩শতক জায়গা রেকর্ড না থাকলে আইনী জটিলতা দেখা দেবে। তাই সরকারি আমিন দিয়ে স্কুলের জায়গা মেপে পরবর্তি আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার কথাও জানান তিনি।

(টিবি/এসপি/জুন ০৭, ২০১৮)

পাঠকের মতামত:

১৮ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test