E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

১৩ মামলায় ২৩ আসামি, গ্রেফতার হয়নি কোন গডফাদার 

আগৈলঝাড়ায় ঈদকে সামনে রেখে মাদক ব্যবসায়ীদের কৌশল বদল 

২০১৮ জুন ০৯ ১৪:৩৬:৪৪
আগৈলঝাড়ায় ঈদকে সামনে রেখে মাদক ব্যবসায়ীদের কৌশল বদল 

আঞ্চলিক প্রতিনিধি, বরিশাল : ইয়াবা আর গাঁজার পাইকারী ও খুচরা বিক্রিসহ অহরহ সেবন চলছে বরিশালের আগৈলঝাড়া উপজেলা সদরসহ বিভিন্ন এলাকায়। হাত বাড়ালেই মেলে সহজলভ্য ইয়াবা ও গাঁজা। পুলিশের চলমান বিশেষ অভিযানে আগৈলঝাড়ায় ১৩টি মামলায় ২৩জনকে আসামী করা হলেও এখন পর্যন্ত গ্রেফতার হয়নি জেলা গোয়েন্দা পুলিশের তালিকাভুক্ত মাদকের কোন গড ফাদার বা পাইকারী বিক্রেতা। ঈদকে সামনে পুলিশী চোখ এড়িয়ে কৌশল বদল করে ফের বেপরোয়া হয়ে উঠেছে মাদক ব্যবসাীয়রা।

থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আব্দুর রাজ্জাক মোল্লা জানান, ১৮ মে থেকে থানা পুলিশের মাদক বিরোধী চলমান বিশেষ অভিযানে ৮জুন পর্যন্ত থানায় মাদকের মোট ১৩টি মামলা দায়ের করেছে পুলিশ। ওই মামলায় ১৫জনের উপরে আসামী গ্রেফতা হয়েছে। একাধিক মামলায় একাধিক আসামী হওয়ায় আসামীর সংখ্যা দাড়িয়েছে ২৩ জনে।

উপজেলা কমিউনিটি পুলিশিং এর সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রইচ সেরনিয়াবাত জানান, পুলিশ ও সরকারের বিভিন্ন আইন শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা খুচরা ব্যবসায়ী ও সেবনকারীদের গ্রেফতার করতে সক্ষম হলেও তালিকাভুক্ত গডফাদার ও পাইকারী ব্যবসায়িরা এখনও পুলিশের রয়েছে অধরা। পুলিমের করা তালিকানুযায়ি উপজেলায় তালিকাভুক্ত কোন বড় ব্যবসায়ি এখন পর্যন্ত গ্রেফতার হয়নি, আটক হয়নি বড় ধরনের কোন মাদকের চালানও।

জেলা গোয়েন্দা (ডিএসবি) পুলিশের তালিকানুযায়ি উপজেলায় বিভিন্ন ক্যাটাগরির তালিকায় ডিলার, পাইকারী বিক্রেতা ও সেবনকারী হিসেবে ১শ ৪১জনের নাম রয়েছে। ২০১৭সালের ১৩মার্চ পুলিশের আহ্বানে আগৈলঝাড়া থানা চত্তরে মাদক ব্যবসায়ি ও সেবনকারীদের একটি আত্মসমর্পন অনুষ্ঠান হয়। ওই অনুষ্ঠানে তালিকার মাত্র ৪৯জন মাদকসেবী, ২০জন বিক্রেতা ও দুইজন গডফাদারসহ মোট ৭১জন পুলিশের কাছে আত্মসমর্পণ করেছিল। তবে আত্মসমর্পনকরা কোন মাদক ব্যবসায়ি বা গড ফাদার তাদের হেফাজতে থাকা মাদকের কোন অংশই পুলিশের কাছে জমা দেয়নি।

এমনকি তালিকাভুক্ত অনেককে স্বাভাবিক জীবনে ফিরাতে পুলিশের নেয়া উদ্যোগ কোন কাজেই আসেনি। স্বাভাবিক জীবনে ফেরেনি কোন মাদক সেবীরা। এর ফলে অনেকেই পুনরায় মাদকসহ র‌্যাব, পুলিশের হাতে একাধিবার গ্রেফতার হয়েছে।

জেলা গোয়েন্দা পুলিশ ও আইন শৃংখলা বাহিনীর সদস্যদের হাতে বিভিন্ন সময় আটক ব্যবসায়িদের দেয়া তথ্য মতে, বেনাপোল-খুলনা থেকে যশোর-গোপালগঞ্জ হয়ে আগৈলঝাড়া উপজেলার পয়সারহাট এলাকাকে ট্রানজিট পয়েন্ট হিসেবে ব্যবহার করছে ব্যবসায়িরা। পয়সারহাট থেকে বিভিন্ন রুটে মাদকের চালান পৌছে যায় বরিশাল বিভাগীয় শহরসহ দক্ষিাঞ্চলীয় জেলাগুলোতেও।

পুলিশ প্রশাসন মাঝে মধ্যেই গাঁজা বিক্রেতা ও সেবনকারীকে গ্রেফতার করলেও মুল হোতাদের গ্রেফতারে তৎপর না হওয়ায় কোন ভাবেই মাদকের ব্যবসা ও সেবন রোধ করা যাচ্ছে না বলে উপজেলা পরিষদের মাসিক আইন শৃংখলা সভায় সরকারী বে-সরকারী কর্মকর্তা, জন প্রতিনিধি ও সুধী সজ্জনেরা অভিযোগ করে আসছেন।

জেলা পুলিশ বিশেষ শাখার সর্বশেষ তালিকানুয়ায়ী, উপজেলায় পাইকারী গাঁজা, পেন্সিডিল ও ইয়াবার পাইকারী বিক্রেতার সংখ্যা ৩৮জন। এদের মধ্যে ছাত্র শিবির, বিএনপি নেতা, জেলা পরিষদ সদস্যর সন্তান, মুক্তিযোদ্ধার সন্তান, তালিকাভুক্ত রাজাকার সন্তান থেকে শুরু করে ক্ষমতাসীন দলের একাধিক ব্যাক্তির নাম রয়েছে। ২০১৪ সনে ওই তালিকায় বিক্রেতার সংখ্যা ছিল মাত্র ২২জনে।

সূত্র মতে, এলাকায় নৌ-ডাকাত, সড়ক ডাকাত, বিদ্যুৎ ট্রান্সমিটার চোরের তালিকায় নাম রয়েছে ২১জনের। তালিকাভুক্ত ২১জনের সকলের বিরুদ্ধেই রয়েছে একাধিক মামলা। এলাকার চিহ্নিত সন্ত্রাসী ও চাঁদাবাজদের নামের তালিকায় রয়েছে ৩০জন। তবে গোয়েন্দা তালিকাভুক্ত কাউকেই বিশেষ অভিযানে পুলিশ গ্রেফতার করতে পারেনি।
সংশ্লিষ্ঠ সূত্র মতে, উপজেলায় মাদক বিক্রি ও সেবনের কয়েকটি চিহ্নিত উল্লেখযোগ্য স্থানের মধ্যে গৈলা হাসপাতাল

সংলগ্ন এলাকা, উপজেলা সদরের হেলিপ্যাড, সদর বাজারের কালিখোলা, পয়সারহাটের পূর্ব ও পশ্চিমপাড়ের ভ্যানস্ট্যান্ড, বাগধা পূর্ব ও পশ্চিমপাড় বাজার, পাকুরিতা স্কুল এলাকা, জোবারপাড়-নাঘিরপাড়ের ব্রিজ ও স্কুল এলাকা, বড়মগরার উত্তরপাড়, আস্করের বাঁশতলা, চক্রিবাড়ি, কান্দিরপাড়, ছয়গ্রাম বন্দর, মিশ্রিপাড়া হাট ও ইজগেট, কালুরপাড়, সাহেবেরহাট, মাগুরা বাজার, ভালুকশি, রাজিহার চৌরাস্তা মোড়, পোষ্ট অফিস রোড, আলোশিখা ক্লিনিক এরাকা, বাশাইলহাট ওয়াপদা রোড, পূর্ব সূজনকাঠী, রামেরবাজার, রামানন্দেরআঁকসহ বিভিন্ন স্থানে প্রতিনিয়ত মাদকবিক্রি ও সেবন চলছে। স্থানীয়দের অভিযোগ, উপজেলার কালী খোলার মুদি দোকানেও পাওয়া যায় মাদক। এসব দোকানে নির্দ্দিস্ট গ্রাহকদের কাছেই কেবল মাদক বিক্রি হয়।

সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, টেকেরহাটে পুলিশ চেকপোস্ট বসার কারণে মাদক পাচারকারীরা আগৈলঝাড়ার আশেপাশে কোন পুলিশী চেকপোস্ট না থাকায় পয়সারহাট এলাকাকে অধিক নিরাপদ ট্রানজিট পয়েন্ট হিসেবে ব্যবহার করছে। এ রুটের ব্যবসায়ীরা ত্রিমুখী ও আমবৌলা খেয়া ঘাট দিয়ে মাদকের বড় চালান পার করছে বলে একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে।

এছাড়াও রামশীল থেকে রাজিহার হয়ে চাঁদশী হয়ে গৌরনদী ও রাজিহার থেকে ঘোষেরহাট রুট ব্যবহার করছে ব্যবসায়িরা। ঘোষেরহাট ঠাকুর বাড়ি মাদকের অন্যতম একটি বড় বিক্রয় কেন্দ্র হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে। ওই এলাকার বিক্রেতারা বাশাইল ওয়াপদা এলাকায় ভ্রাম্যমান মাদক বিক্রির স্পট গড়ে তুলেছে।

থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. আব্দুর রাজ্জাক মোল্লা জানান, আগৈলঝাড়ায় মাদক বিরোধী অভিযান সন্তোষ জনক। আগৈলঝাড়ায় মাদকের কোন গডফাদার নেই। বিশেষ অভিযান ছাড়াও তালিকাভুক্ত ও তালিকা ছাড়া মাদক সেবীরা গ্রেফতার হয়ে জেল হাজতে রয়েছে। মাদকসহ আটককৃতদের বিরুদ্ধে পুলিশ মামলা দিচ্ছে।

বিশেষ অভিযান ছাড়াও মাদকের বিরুদ্ধে সর্বোচ্চ শতর্ক অবস্থায় থেকে ব্যবসায়ি ও সেবনকারীদের গ্রেফতারে তৎপর রয়েছে পুলিশ। ঈদ উপলক্ষে মাদকের বিরুদ্ধে কঠোর নজরদারি গ্রহণ করে পুলিশী প্রহরাসহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা ইতোমধ্যেই গ্রহণ করা হয়েছে। এছাড়াও ঈদকে সামনে রেখে আইন শৃংখলা স্বাভাবিক রাখতে সম্ভাব্য সকল প্রস্তুতি গ্রহণ করেছেন বলেও জানিয়েছেন তিনি।

(টিবি/এসপি/জুন ০৯, ২০১৮)

পাঠকের মতামত:

১৮ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test