E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

আগৈলঝাড়ায় বর্ষা মৌসুমের শুরুতেই জমে উঠেছে নৌকার হাট

২০১৮ জুলাই ০৫ ১৫:৪১:২২
আগৈলঝাড়ায় বর্ষা মৌসুমের শুরুতেই জমে উঠেছে নৌকার হাট

আঞ্চলিক প্রতিনিধি, বরিশাল : বরিশালের আগৈলঝাড়ার প্রত্যন্ত এলাকায় বর্ষা মৌসুমে চলাচল, জীবন জীবিকা ও পণ্য পরিবহনের অন্যতম বাহন নৌকা। দরিদ্র জনগোষ্ঠি অধ্যুষিত এঅঞ্চলের মানুষের জীবন জীবিকার প্রয়োজনে পরিবারের সাথে নিবিরভাবে জড়িয়ে রয়েছে নৌকা। তাই বর্ষা মৌসুমে নিম্নবিত্ত পরিবারগুলোর জীবন জীবিকার প্রয়োজনে অপরিহার্য অংশ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে নৌকা। 

উপজেলার বাশাইল গ্রামের নৌকা তৈরীর কারিগর মৃনাল দাস, মনু গাইন, মিঠু দাস জানান, জুন থেকে নভেম্বর পর্যন্ত এলাকার মৎস্য শিকারীরা তাদের জীবন জীবিকার প্রয়োজনে ও যাতায়াতের জন্য নৌকার উপর নির্ভরশীল থাকেন। এসময় তারা নৌকায় চড়ে জাল পেতে, চাই (মাছ ধরার ফাঁদ) অথবা বড়শি নিয়ে মৎস্য শিকার করেন। তাই বর্ষা মৌসুম এলেই বেড়ে যায় নৌকার কদর।

কাঠ মিস্ত্রী মৃনাল দাস জানান, বর্ষার সময় কাঠ মিস্ত্রীদের বাড়ি-ঘর নির্মান কাজ বা ফসলী জমিতে তেমন কোন কাজ না থাকায় এসময় তারা নিজেরা বাড়িতে বসেই নির্মান করেন বিভিন্ন আকার ও নক্সার নৌকা। ১২ থেকে ১৫ মন ধারন ক্ষমতা সম্পন্ন ১০ হাত লম্বা একটি নৌকা বানাতে তাদের তিন জন মিস্ত্রীর দুই দিন সময় লাগে। জারুল গাছের ওই নৌকা তারা ছয় থেকে সাত হাজার টাকায় বাজারে বিক্রি করেন। এতে তাদের দুই হাজার টাকা লাভ হয়।

ওই মিস্ত্রীরা আরও জানান, তাদেরমত অনেকেই উপজেলার বিভিন্ন এলাকার গ্রাম ঘুরে নৌকা তৈরীর গাছ কিনে স-মিলে চেড়াই করে বাড়িতে বসেই নৌকা তৈরি করে তা স্থানীয় বিভিন্ন হাট বাজারে বিক্রির মাধ্যমে সংসারের আড়তি আয় করছেন। উপজেলার বিভিন্ন এলাকার এভাবে সহস্রাধিক কাঠ মিস্ত্রীর পরিবার বর্ষা মৌসুমে বাড়তি আয়ের মাধ্যমে নিজেদের ভাগ্য বদল করেছেন। মিস্ত্রীদের বাড়িতে বসে এসব নৌকা নির্মানে সহায়তা করেন তাদের স্ত্রী ও সন্তানেরাও। আগৈলঝাড়ার বাটরা, বাহাদুরপুর বাশাইল, বারপাইকা, সাহেবেরহাট, থেকে শুরু করে ত্রিমুখি, রামশীল, সাদুল্লাপুর, পীরের বাড়ীসহ বিভিন্ন এলাকায় এখন নৌকা বিক্রির জমজমাট হাট বসেছে বলে জানান তারা।

মিস্ত্রীদের দেয়া তথ্য মতে, উপজেলার অসংখ্য পরিবার কাঠ মিস্ত্রী পেশায় জড়িত। তারা গ্রামাঞ্চল থেকে পাইকারদের কাছ থেকে অপেক্ষকৃত কম দামে গাছ কিনে নৌকা তৈরি করে থাকেন। এর মধ্যে জারুল, রেইনট্রি, চাম্বল, কদম, রয়না, উরিয়া আম কাঠ দিয়ে ডিঙ্গি ও ছোট-বড় আকারের নৌকা তৈরি করেন। নৌকা বিক্রির সবচেয়ে বড় হাট বাহাদুরপুর ও সাহেবের হাট। সপ্তাহে দু’দিন করে বসে এই হাট। স্থানীয়রা ছাড়াও স্বরূপকাঠি, বানারীপাড়া, উজিরপুর, মাদারীপুর থেকে পাইকাররা এসে নৌকা কিনে নিয়ে যায় তাদের ওই এলাকায় বিক্রির জন্য।

বাহাদুরপুর হাটে কথা হয় রাজিহার গ্রামের বাসিন্দা নৌকা ক্রেতা শ্যামল মধুর সাথে। শ্রামল মধু বলেন, শুধু বর্ষা মৌসুমে ব্যবহারের জন্য কমদামি নৌকাই তাদের বেশী পছন্দ। কারণ, এই সময়ে গবাদী পশুর জন্য জলাভূমি থেকে খাদ্য (ঘাষ) সংগ্রহসহ চলাচলের জন্য বছরে ১ হাজার থেকে ২ হাজার টাকার মধ্যে ডিঙ্গি নৌকা পাওয়া যায়। আকার ভেদে নৌকার দামও কম বেশী হয়ে থাকে। রাজিহার গামের মৎস্য শিকারী কালা চাঁদ জয়ধর জানান, বর্ষাকালে বড়শি দিয়ে মাছ ধরার জন্য নৌকার বিকল্প নেই। এছাড়াও শুস্ক মৌসুমে নৌকায় খালে জাল পেতে মাছ শিকার করেন তিনি।

ওই অঞ্চলের মানুষের বর্ষা মৌসুমে যাতায়াতের একমাত্র বাহন নৌকা। হাট-বাজার থেকে শুরু করে স্কুল-কলেজে যাতায়াতের জন্য তাদের নির্ভর করতে হয় নৌকার উপর।

(টিবি/এসপি/জুলাই ০৫, ২০১৮)

পাঠকের মতামত:

০৪ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test