E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

ভেগাই হালদার পাবলিক একাডেমী

২৬ মাস স্কুলের প্রাপ্য অংশ ও বোনাস না পেয়ে ৩০ শিক্ষক কর্মচারীর আন্দোলনের প্রস্তুতি 

২০১৮ জুলাই ১৭ ১৫:৩৩:১৫
২৬ মাস স্কুলের প্রাপ্য অংশ ও বোনাস না পেয়ে ৩০ শিক্ষক কর্মচারীর আন্দোলনের প্রস্তুতি 

আঞ্চলিক প্রতিনিধি, বরিশাল : কর্তৃপক্ষের উদাসীনতা ও বিমাতা সুলভ আচরণের কারণে দীর্ঘ ২৬মাস যাবত স্কুলের প্রাপ্য অংশের বেতন ভাতা ও বোনাস না পেয়ে অর্থকষ্টে জীবন যাপন করছেন আগৈলঝাড়া উপজেলা সদরের স্বনামধন্য বিদ্যাপীঠ ‘ভেগাই হালদার পাবলিক একাডেমী’র ৩০জন শিক্ষক কর্মচারী। বিদ্যালয়ের প্রাপ্য বেতন ভাতার অংশ পেতে সাধারণ শিক্ষক ও কর্মচারিরা আন্দোলনে যাবার প্রস্তুতি নিচ্ছেন বলে জানা গেছে।

সংশ্লিষ্ট বিদ্যালয়ের গুরুত্বপূর্ন দ্বায়িত্বে নিয়োজিত একাধিক শিক্ষক নাম না প্রকাশের শর্তে জানান, বিদ্যালয়ে ২৩জন শিক্ষক, ৫জন কর্মচারী ও চুক্তিভিত্তিক ১জন শিক্ষক, ১জন কর্মচারীসহ মোট ৩০জন শিক্ষক কর্মচারী গত ২৬মাস যাবত স্কুলের প্রাপ্য বেতন ভাতা অংশের কোন টাকা পাচ্ছেন না। এমনকি বছরের দু’টি ঈদ ও পূজায়ও তারা স্কুলের প্রাপ্য বোনাস থেকেও বঞ্চিত হয়ে আসছেন।

শিক্ষকেরা অভিযোগে বলেন, কর্তৃপক্ষের উদাসীনতা ও বিমাতাসুলভ আচরনের কারণে স্কুলের প্রাপ্য বেতন ভাতার অংশ ও বোনাস থেকে বঞ্চিত রয়েছেন তারা।

সূত্র জানায়, ৯৯ বছরের ঐতিহ্যবাহী বিদ্যালয়ে ২০১৬ সালের মার্চ মাস পর্যন্ত শিক্ষক কর্মচারীরা স্কুলের বেতন ভাতার অংশের টাকা হাতে পেলেও ওই বছরের এপ্রিল মাস থেকে চলতি বছরের জুলাই মাস পর্যন্ত ২৮ মাস বেতন ভাতার প্রাপ্য অংশ ও বোনাস থেকে বঞ্চিত আছেন তারা।

এরমধ্যে প্রধান শিক্ষক যতীন্দ্র নাথ মিস্ত্রী ও তার আস্থাভাজন কয়েকজন শিক্ষক সভাপতির কাছ থেকে রেজুলেশনে স্বাক্ষর করিয়ে অনৈতিকভাবে নিজেদের জন্য অর্থনৈতিক সুবিধা আদায় করেছেন। এরমধ্যে প্রধান শিক্ষক যতীন্ত্র নাথ মিস্ত্রী নিজের জন্য ৪৫শ টাকা থেকে আনুসাঙ্গিক খরচ বাবদ ৯হাজার টাকা পর্যন্ত সুবিদা আদায় করে নিয়েছেন। রেজুলেশনের ব্যাপারে তারা বলেন, প্রধান শিক্ষক রেজুলেশন লিখে তাতে শুধু সদস্যদের স্বাক্ষর আদায় করা হয়। ওই রেজুলেশন পড়ার ও জানার সুযোগ থাকেনা ম্যানেজিং কমিটির সদস্যদেরও।

সুবিধা বঞ্চিত সাধারণ শিক্ষকেরা সভাপতির মাধ্যমে অনৈতিক সুবিধা প্রদানের বিরোধিতা করলেও প্রধান শিক্ষক ‘সুবিধা দেয়া শিক্ষকদের’ “অভিজ্ঞতার আলোকে” সুযোগ দেয়া হয়েছে জানিয়ে অন্য শিক্ষকদের বিদায় দেন। কর্তৃপক্ষের বিমাতা সুলভ আচরণের কারণে ১২জন শিক্ষক চরম বৈষম্যের শিকার হয়েছেন বলে অভিযোগ করেন। দীর্ঘ দিন চুক্তি ভিত্তিক কাজ করেও কোন আর্থিক সুবিধা না পেয়ে সাবেক শিক্ষক সুধীর রঞ্জন কর ও কর্মচারী শ্যামল চন্দ্র বাড়ৈ কাজে ইস্তেফা দিয়ে বাড়ি চলে গেছেন। তবে তাদের প্রাপ্য অর্থ আজও দেয়নি স্কুল কর্তৃপক্ষ।

এদিকে বিশেষ সুবিধা প্রাপ্ত শিক্ষকদের মধ্য থেকে আবাসিক ও অনাবাসিক শিক্ষক, প্রধান শিক্ষকের বিশেষ আস্থাভাজন হয়ে সুবিধা নেয়া কতিপয় শিক্ষক স্কুলের সাধারণ বঞ্চিত শিক্ষকেরা এখন একাধিক গ্রুপে বিভক্ত হয়ে পরেছেন। অনেকেই কর্র্তৃপক্ষের মন রক্ষায় লেজুরবৃত্তি করলেও আবার তারাই পিছনে কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে বিষোদ্গার করছেন বলেও অভিযোগ করেন শিক্ষকেরা।

নাম না প্রকাশের শর্তে স্কুলের দ্বায়িত্বশীল পদে অধিষ্ঠিত একাধিক শিক্ষক জানান, বিদ্যালয়ে ৬ষ্ঠ থেকে ১০ম শ্রেণিতে অধ্যয়নরত মোট ৮শ ২২জন শিক্ষার্থী রয়েছে। এরমধ্যে সাড়ে তিনশ রয়েছে ছাত্রী।
উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামীলীগ নেতা গোলাম মোর্তুজা খান ধীর্ঘ দিন ম্যানেজিং কমিটির সভাপতির দ্বায়িত্ব পালন করায় তাঁর সম্মানে সাধারণ শিক্ষকেরা এত দিন কিছু না বললেও স্কুলের প্রাপ্য বেতন ভাতার অংশ ও বোনাস আদায়ের জন্য সহসাই আন্দোলনে যাচ্ছেন তারা।

তারা আরও বলেন, বর্তমানে বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির মেয়াদ শেষ হয়েছে চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহে। এতদিন তার মনে করেছিলেন প্রধান শিক্ষক তাদের কষ্ট বুঝে সভাপতির মাধ্যমে প্রাপ্য বেতন ভাতা ও বোনাস পরিশোধের ব্যবস্থা নেবেন। কিন্তু বর্তমানে সে আশা দূরাশায় পরিণত হওয়ায় আন্দোলনে যাচ্ছেন তারা।

এ ব্যাপারে প্রধান শিক্ষক যতীন্দ্র নাথ মিস্ত্রী বলেন, শিক্ষকদের কাছে স্কুলের আবাসিক ভবনের ভাড়া পাওনা রয়েছে। বর্তমানে কমিটির মেয়াদ শেষ, নতুন এডহক কমিটি অনুমোদনের জন্য বোর্ডে আবেদন করা হয়েছে। বোর্ড অনুমোদন দিলে পরবর্তি কমিটির কাছে বিষয়টি উত্থাপন করা হবে।

এ ব্যাপারে ম্যনেজিং কমিটির সদ্য বিদায়ী সভাপতি ও উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান গোলাম মোর্তুজা খান বলেন, শিক্ষকদের বেতন ভাতার প্রাপ্য অংশ ও বোনাস থেকে বঞ্চিত হওয়ার অভিযোগ সত্য নয়।

স্কুলের আয় কম জানিয়ে তিনি আরও বলেন, শিক্ষকদের সম্মানে নামমাত্র ভাড়ায় তাদের আবাসিক সুবিধা প্রদান করা হয়েছে। সেই নামমাত্র ভাড়া তারা দীর্ঘ দিনেও পরিশোধ করছে না। ফান্ডে টাকা থেকে চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহে তিনি শিক্ষকদের প্রাপ্য অংশ থেকে দুই মাসের টাকা প্রদানের অনুমোদন করেছেন। বর্তমানে শিক্ষকেরা যে বেতন পাচ্ছেন তাতে সন্তুস্ট থাকা যায়। শিক্ষকদের বানিজ্যিক মনোভাব পরিহার করারও আহ্বান জানান তিনি।

(টিবি/এসপি/জুলাই ১৭, ২০১৮)

পাঠকের মতামত:

২৮ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test