E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

কাপাসিয়ার বিয়ে পাগল জজ মিয়া এখন কারাগারে

২০১৮ সেপ্টেম্বর ২৪ ১৫:৩০:৩৭
কাপাসিয়ার বিয়ে পাগল জজ মিয়া এখন কারাগারে

কাপাসিয়া (গাজীপুর) প্রতিনিধি : গাজীপুরের কাপাসিয়ার ‘বিয়ে পাগল’ জজ মিয়াকে গ্রেফতার করেছে থানা পুলিশ। শুক্রবার সকালে তাকে গ্রেফতার করা হয়। পরে তাকে গাজীপুরের জুডিসিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে আনা হয়। আদালত তার জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠায়।  

রবিবার বিকেলে প্রথম শ্রেণির ম্যাজিষ্ট্রেট নাজমুন নাহারের নিকট সংশিস্ট আইনের ২২ ধারায় কারাবন্দি জজ মিয়ার বিরুদ্ধে জবানবন্দি প্রদান করেছে নির্যাতিত কিশোরী বন্যা। এর আগে জজ মিয়ার কুকীর্তি নিয়ে দৈনিক জাগরন সহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রচার হলে ভিকটিমের পাশে দাঁড়ায় আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন ওয়ার্ল্ড হিউম্যান রাইটস ডিপার্টমেন্ট। পরে সংগঠনটির সহযোগিতায় কাপাসিয়া থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ১০ ধারায় এজাহার দায়ের করে ভিকটিমে পিতা রতন মিয়া। মামলা নং-২১(৯)২০১৮।

এজাহারে বলা হয়, ভিকটিমের পরিবার ময়মনসিংহ জেলার নান্দাইল উপজেলার মোয়াজ্জেমপুর গ্রাম থেকে প্রায় ২০ বছর আগে কাজের সন্ধানে গাজীপুরের কাপাসিয়ায় চলে আসে। তার পিতা দিনমজুর রতন মিয়া কাপাসিয়া বাসস্ট্যান্ড এলাকায় ফকির মজনু শাহ ব্রিজের নিচে একটি ছোট ঘর ভাড়া নিয়ে সপরিবারে বসবাস করে আসছে। দারিদ্র্যতার কারণে তারা কিশোরী মেয়েকে প্রতিবেশী কফিল উদ্দিনের রিক্সার গ্যারেজে কাজে লাগিয়ে দেন। সংসারের অভাব অনটন লাঘব করতে সৌদি আরবে চলে যান কিশোরীর মা।

কিশোরীর বাবা-মার সাথে কথা বলে জানা যায়, মোবাইল না থাকায় মায়ের সাথে কথা বলতে প্রতিবেশী জজ মিয়ার মোবাইল ব্যবহার করতো ওই কিশোরী। সেই থেকে কিশোরীর উপর জজমিয়ার কু-নজর পড়ে। জজ মিয়া মাঝে মধ্যেই তাকে বিয়ের প্রস্তাব দিত। এতে সাড়া না দেওয়ায় গত ৯ আগস্ট অ্যাডভোকেট তাকী প্রধান নামীয় সীল স্বাক্ষর সংবলিত গাজীপুর নোটারি পাবলিকের মাধ্যমে সম্পাদিত একটি বিয়ের দলিল এলাকায় ছড়িয়ে দিয়ে কিশোরীকে নিজের স্ত্রী বলে প্রচার দিতে থাকে জজ মিয়া। সেখানে কিশোরীর বয়স ২৪ বছর বলে উল্লেখ করা হয়।

এমনকি ওই দলিলের স্বাক্ষরের সাথে কিশোরীর হাতের লেখার কোনো মিল নেই। আর সেখানে যে ছবিটি ব্যবহার করা হয়েছে তা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ইমু থেকে নেয়া। এলাকাবাসীর সাথে কথা বলে জানা যায়, কাপাসিয়া বাসস্ট্যান্ড কুলুপাড়া এলাকার আ. মজিদের ছেলে জজ মিয়া (৫২) এ পর্যন্ত কতটি বিয়ে করেছে তার সঠিক পরিসংখ্যান কারোর জানা নেই।

তবে বর্তমানেও তার অন্তত ৪ জন স্ত্রী রয়েছে। কেউ থাকে বিদেশে, কেউ তৈরী পোশাক কারখানায়, কেউবা নির্মাণ শ্রমিক, আবার কেউ অন্য কোনো পেশায় জড়িত। প্রত্যেককেই সে আলাদা স্থানে রাখে। সে নিজের ছেলেকে বিয়ে করিয়েছে এবং মেয়ের ঘরে নাতনীও রয়েছে। তারপরেও সে নিজের নাতনীর বয়সী মেয়েকে নিজের স্ত্রী হিসেবে দাবি করছে এবং কিশোরীকে তার ঘরে উঠিয়ে দেয়ার জন্যে তার বাবা-মাকে চাপ প্রয়োগ ও হুমকি দেয়। অসহায় বাবা-মা তার পায়ে ধরে আর্তনাদ করেও রেহাই পায়নি।এলাকাবাসী তার এমন জঘন্য অপরাধের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করছে।

তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই মুরাদ জানান, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে শুক্রবার সকালে তার বাড়ি থেকে জজ মিয়াকে গ্রেফতার করে থানায় নিয়ে আসি। বর্তমানে জজ মিয়া গাজীপুর কারাগারে রয়েছে।

জানতে চাইলে ওয়ার্ল্ড হিউম্যান রাইটস ডিপার্টমেন্ট এর চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট মোঃ সাইফুল ইসলাম মোল্লা এই ডিফেন্ডারকে বলেন, অভিযুক্ত জজ মিয়ার প্রতারণার ফাঁদে পড়ে ১৪ বছর বয়সী ওই শিশু। ভুয়া নোটারি পাবলিকের কাগজ তৈরী করে জজ মিয়া শিশুটিকে নিজের ৫ম স্ত্রী হিসেবে দাবি করে তার উপর নির্যাতন চালায়। যা আইনত শাস্তিযোগ্য অপরাধ।

(এসকেডি/এসপি/সেপ্টেম্বর ২৪, ২০১৮)

পাঠকের মতামত:

১৯ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test