E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

কুষ্টিয়ায় এগিয়ে মহাজোটের হেভিওয়েট প্রার্থীরা, শূন্যে বিএনপি-জোটে

২০১৮ ডিসেম্বর ১৩ ১৪:৪৭:২৭
কুষ্টিয়ায় এগিয়ে মহাজোটের হেভিওয়েট প্রার্থীরা, শূন্যে বিএনপি-জোটে

কুষ্টিয়া প্রতিনিধি : প্রতীক বরাদ্দের পর কুষ্টিয়ার ৪টি সংসদীয় আসনেই জয়ী হতে আটঘাট বেঁধে মাঠে নেমেছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগসহ মহাজোট থেকে মনোনয়ন পাওয়া প্রার্থীরা। যে কোন মূল্যে আসন ধরে রাখায় তাদের সামনে মূল চ্যালেঞ্জ। কৌশল নির্ধারন করে ইতিমধ্যেই জেলার ৪টি সংসদীয় আসনে প্রচার যুদ্ধে মাঠে রয়েছে প্রার্থীরা। আর মনোনয়ন নিয়ে নানা নাটকীয়তার পর শুক্রবার বিএনপি ও তাদের মিত্রদের মাঝে মনোনয়ন দেয়া হয়েছে। এতে করে ভোটের মাঠে প্রচারনায় এমনিতেই তারা পিছিয়ে আছে। কোথাও এখানো মাঠে নামতে পারেনি। মাঠে নামার রাস্তা খুঁজছে প্রার্থীরা। তবে মাঠে নেতাকর্মী না থাকায় বিপদে পড়েছে প্রার্থীরা। বিএনপির এক সময়কার ঘাঁটি কুষ্টিয়ার আসনগুলো এখন আওয়ামী লীগের দখলে। এসব আসনে জয়ের কথা ভাবছে বিএনপি। অন্যদিকে কুষ্টিয়ার চারটি আসনে অন্যদলের প্রার্থী থাকলেও এখন পর্যন্ত কাউকে মাঠে দেখা যায়নি। 

এদিকে দলীয় কোন্দল না থাকায় সমন্বিত প্রচারে ঐক্যবদ্ধভাবে দলীয় নেতা-কর্মিরা মাঠে নামায় অনেকটা চিন্তামুক্ত আওয়ামী শিবির। দুটি আসনে নতুন মুখকে মনোনয়ন দেয়া হলেও তাদের পক্ষে দলের সর্বস্তরের নেতা-কর্মিরা ঐক্যবদ্ধ। আর কুষ্টিয়া-২ আসনে বিএনপি জোট থেকে আহসান হাবিব লিংকন মনোনয়ন পাওয়ায় মহাজোটের প্রার্থী জাসদ সভাপতি তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনুর জন্য জয় পাওয়া অনেকটা সহজ হয়ে গেছে। পাশাপাশি কুষ্টিয়া-৩ সদর আসনেও আওয়ামী লীগের হেভিওয়েট প্রার্থী মাহবুব উল আলম হানিফও আছেন ফুরফুরে মেজাজে। বিএনপি থেকে জাকির হোসেন সরকার মনোনয়ন পাওয়ায় হানিফের জন্য জয় পাওয়া অনেকটাই সহজ। শিল্পপতি জাকির হোসেন সরকার বিএনপির মনোনয়ন পাওয়ায় নৌকার বিজয়ের পথ অনেকটা সহজ হয়ে গেছে বলে মনে করছেন নেতা-কর্মিরা। তারপরও জয় ঘরে তুলতে ঐক্যবদ্ধ হয়ে ভোটের দিন পর্যন্ত মাঠে থাকার ঘোষনা দিয়েছে আ’লীগ।

আওয়ামী লীগ নেতারা জানান, সদরের মানুষের কাছে হানিফ এক আস্থার প্রতীক। দলমত নির্বিশেষে সবাই ব্যক্তি হানিফের অনুগত হয়ে গেছেন। তাই হানিফ ভাই জিতলে উন্নয়ন হবে মানুষ এটা বুঝতে পেরেছে। তাইতো সবাই তার জয় চাই। ইতিমধ্যে হানিফের পক্ষে মাঠে নেমেছেন বর্ষিয়ান আওয়ামী লীগ নেতা আনোয়ার আলী। এর পাশাপাশি জেলা, উপজেলা ও শহর আওয়ামী লীগের নেতারা নৌকাকে বিজয়ী করতে ভোটের মাঠে কাজ করছেন।

কুষ্টিয়া-১(দৌলতপুর) আসনেও একাট্টা হয়েছে আওয়ামী লীগ। সরওয়ার জাহান বাদশার মনোনয়নকে ঘিরে সাবেক এমপি আফাজ উদ্দিন ও বর্তমান এমপি রেজাউল হক চৌধুরী মাঠে নেমেছেন। তারা বাদশাকে জয়ী করতে ঐক্যবদ্ধ মাঠে থাকার ঘোষনা দিয়েছে। দৌলতপুরে প্রতিটি এলাকায় সরওয়ার জাহান বাদশার পক্ষে মানুষ মাঠে নেমেছে। এতে নৌকার বিজয়ে আর কোন সমস্যা থাকবে না বলে করেন নেতা-কর্মিরা। এ আসনে আশরাফুজ্জামান (বিএনএফ) টেলিভিশন, মাওলানা নাজমুল হুদা (ইসলামী আন্দোলন) হাতপাখা, (জাতীয় পার্টি এরশাদ) শাহরিয়ার জামিল জুয়েল লাঙ্গল প্রতীকে নির্বাচন করছেন।

কুষ্টিয়া-২(মিরপুর-ভেড়ামারা) আসনে মহাজোটের প্রার্থী হাসানুল হক ইনু নৌকা প্রতীকে লড়ছেন। তার পক্ষেও দীর্ঘদিন থেকে প্রচার-প্রচারনা চালাচ্ছে নেতা-কর্মিরা। তবে এখনো আওয়ামী লীগের কর্মিরা মাঠে নামেনি। এ আসনে বিএনপি জোটের প্রার্থী আহসান হাবিব লিংকন ধানের শীষ নিয়ে লড়বেন। এতে ইনুর জয় পাওয়া সহজ হবে অনেকটায়। তবে আওয়ামী লীগের সাথে এখনো সমন্বয় না হওয়ায় প্রচারে তেমন গতি আসেনি এখানে। এ আসনে সাম্যবাদী দলের আনোয়ার হোসেন বাবলু(চাকা), বিএনএফের সাইফুল ইসলাম(টেলিভিশন),এনপিপির মোহাম্মদ সোহাগ হোসেন(আম), সিপিবির ওয়াহিদুজ্জামান-(কাঁচতে), মোজাম্মেল হক (ইসলামী আন্দোলন) হাতপাখা ও মারফত আলী মাষ্টার (মুসলীম লীগ) হারিকেন প্রতিকে নির্বাচন করছেন।

কুষ্টিয়া-৩(সদর) আসনে আওয়ামী লীগের হেভিওয়েট প্রার্থী মাহবুব উল আলম হানিফের বিকল্প কেউ নেই বলে মনে করেন সাধারন ভোটাররা। এ আসনে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি ছাড়াও সম্মিলিত বাম দল (বাসদ) শফিকুর রহমান শফি-মই, বিএনএফের আশাদুল হক-টেলিভিশন, (এনপিপি) উজ্জল আহসান-আম, ইসলামী আন্দোলনের আমিনুল ইসলাম-হাতপাখা প্রতীক পেয়েছেন।

কুষ্টিয়া-৪ (খোকসা-কুমারখালী) আসনেও সেলিম আলতাফ জর্জ নির্বাচন দৌড়ে এগিয়ে আছেন। নতুন মুখ হিসেবে প্রাথমিকভাবে তাকে মানতে না পারলেও দলের স্বার্থে তার সাথেও দুই উপজেলার আওয়ামী লীগের নেতারা একযোগে কাজ করছেন। এ আসনে জাতীয় পার্টি (জাপা-এরশাদ) আশরাফুল হক লাঙ্গল, এনপিপির তাছির উদ্দিন-আম,বিএনএফের আওলাদে পীরজাদা ইদ্রীস-টেলিভিশন ও ইসলামী আন্দোলনের হাজী এনামুল হক-হাতপাখা প্রতীক পেয়েছেন।

এদিকে একমাত্র কুষ্টিয়া-১ আসন ছাড়া বাকি তিনটিতে বিএনপি প্রার্থীরা বেকায়দায় আছেন। রেজা আহমেদ বাচ্চু মাঠে নামলেও নানা প্রতিকুল পরিস্থিতিতে কাজ করতে হচ্ছে।

এছাড়া কুষ্টিয়া-২ থেকে আহসান হাবিব লিংকন মনোনয়ন পেলেও তার জন্য নানা চ্যালেঞ্জ রয়েছে। বিগত ১০ বছর এলাকার মানুষের সাথে তার তেমন সম্পর্ক নেই। এছাড়া জাতীয় পার্টি (জাফর)’র তেমন কোন ভোটও নেই এ আসনে। বিএনপি নেতারা তার সাথে পুরোপুরি ভোটের নামবে না বলে মনে করেন অনেকে। দুই উপজেলা মিরপুর ও ভেড়ামারায় লিংকনের দলীয় লোকজন না থাকায় ভোটের মাঠে তাকে বেকায়দায় পড়তে হতে পারে।

কুষ্টিয়া-৩ সদরে এমনিতেই বিপদে আছেন জাকির হোসেন সরকার। তার সাথে এখনো দলের বড় অংশ মাঠে নামেনি। দু’একদিনের মধ্যে সবাইকে নিয়ে মাঠে নামতে পারবেন বলে জানিয়েছেন জাকির। তবে তার প্রচারনায় নানাভাবে বাধা দেয়ার অভিযোগ করেছেন। সুষ্ঠু নির্বাচনের দাবি জানিয়েছেন তিনি। কুষ্টিয়া-৪ (কুমারখালী-খোকসা) আসনেও দলীয় মনোনয়ন পাওয়া জেলা বিএনপির সভাপতি সৈয়দ মেহেদী আহমেদ রুমী প্রচারনায় নেমেছেন। তিনি বিভিন্ন এলাকায় গনসংযোগ করছেন। তবে তার পক্ষেও এখনো দুই উপজেলার বেশির ভাগ নেতা-কর্মি মাঠে নামেনি।

বিএনপি নেতারা মনে করছেন, সুষ্ঠ ভোট হলে বেশির ভাগ আসনে তারা জয়ী হবে। তবে সাংগঠনিকভাবে বিএনপি ভেঙ্গে পড়ায় জয় ঘরে তোলা তাদের জন্য চ্যালেঞ্জ। বেশির ভাগ নেতা-কর্মি ভোটের মাঠে নামতে ভয় পাচ্ছে। এছাড়া হয়রানীর ভয় থাকায় কেউ প্রকাশ্যে ভোট চাচ্ছে না ধানের শীষে। এতে প্রচার-প্রচারণায় পিছিয়ে পড়ছে ধানের শীষের প্রার্থীরা।

(কেকে/এসপি/ডিসেম্বর ১৩, ২০১৮)

পাঠকের মতামত:

২০ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test