E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

ব্রহ্মপুত্র নদে নৌরুটে অতিরিক্ত ভাড়া ও টোল আদায় !

২০১৪ জুলাই ২১ ১৮:৩৪:৩১
ব্রহ্মপুত্র নদে নৌরুটে অতিরিক্ত ভাড়া ও টোল আদায় !

রাজীবপুর (কুড়িগ্রাম) প্রতিনিধি : কুড়িগ্রামের রাজীবপুর থেকে গাইবাদ্ধা ও চিলমারী, রৌমারী থেকে চিলমারী ও কুড়িগ্রাম সদর নৌরুটে যাত্রিভাড়ার নামে গলাকাটা ভাড়া আদায় করা হচ্ছে। ব্রহ্মপুত্র নদের নৌরুটে যাতায়াতকারি ইঞ্জিন চালিত নৌকার (ট্রলার) যাত্রি ও পন্য ভাড়া আদায়ে সরকারি কোনো নিয়মনীতি মানা হচ্ছে না।

এসব নৌকাঘাটে ইজারাদার যেমন তাদের ইচ্ছামতো টোল আদায় করে তেমনি নৌকার মালিকরাও তাদের ইচ্ছেমতো ভাড়া আদায় করছে। অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ে যাত্রিদের সঙ্গে নৌকার মাঝি ও ইজারাদার লোকের সঙ্গে প্রায় ঝগড়া ও মারামারির ঘটনা ঘটছে। উপজেলা ও জেলা প্রশাসনের কোনো নিয়ন্ত্রন নেই বলে জানা গেছে।

কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসনের সংশ্লিষ্ট সূত্রে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চিলমারী, রৌমারী ও রাজীবপুর নৌকাঘাটকে লটঘাট হিসেবে ইজারা প্রদান করা হয়েছে। আর রৌমারী থেকে কুড়িগ্রামের মোঘলবাসা ও রাজীবপুর নৌকা ঘাট থেকে গাইবান্ধার বালাসি ঘাটে পৃথক ইজারা দেওয়া হয়েছে। এতে লটঘাটে যাতায়াতকারি ট্রলারে যাত্রিভাড়া ৫০ টাকা আর গাইবান্ধার বালাসি ও কুড়িগ্রামের মোঘলবাসা নৌরুটে যাতায়াতকারি ট্রলারে যাত্রি ভাড়া ৬০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। এর বেশি যাত্রিভাড়া কেউ আদায় করতে পারবে না। একই ভাবে বিভিন্ন প্রকার পন্যসামগ্রী নিদির্ষ্টহারে টোল আদায় করার নিয়ম রয়েছে। প্রতিটি ঘাটে যাত্রিভাড়া ও টোল ভাড়ার তালিকা টানিয়ে রাখতে সরকারি ভাবে নির্দেশ দেওয়া রয়েছে।

কিন্তু সরেজমিনে নৌকাঘাট গুলোতে ঘুরে কোনো টোল ভাড়ার তালিকা টানানো পাওয়া যায়নি। নৌকা ঘাট সংশ্লিষ্ট ও সাধারণ যাত্রিদের কাছ থেকে জানা গেছে, গত ৫ বছরে ৬বার ভাড়া বৃদ্ধি করা হয়েছে। ২০ টাকার ভাড়া এখন ৭০ টাকা করে আদায় করা হচ্ছে। সরকারি ভাবে রৌমারী, চিলমারী ও রাজীবপুর নৌরুটে যাতায়াতকারি ট্রলারে যাত্রি ভাড়া ৫০ টাকা সেখানে আদায় করা হচ্ছে ৭০ টাকা করে। গাইবাবান্ধা, রাজীবপুর, রৌমারী ও কুড়িগ্রামের মোঘলবাসা নৌরুটে যাতায়াতকারি ট্রলার ভাড়া ৬০ টাকা করে আদায়ের সরকারি নিয়ম থাকলেও সেখানে আদায় করা হচ্ছে জনপ্রতি ৯০ টাকা করে। একই ভাবে অতিরিক্ত টোলা আদায় করা হয় বিভিন্ন পণ্যসামগ্রীরও।

গত মঙ্গলবার (১৫জুলাই) চররাজীবপুর গ্রামের কৃষক আমেজ উদ্দিন রাজীবপুর নৌকা ঘাট থেকে ট্রলারে চিলমারীতে রওনা হয়েছেন। নদের মাঝপথে ভাড়া আদায় করা হয় জনপ্রতি ৭০ টাকা। অথচ দুইদিন আগেও ৫০ টাকা ভাড়া ছিল। এনিয়ে আমেজ উদ্দিনের সঙ্গে নৌকার মাঝির ঝগড়া ও এক পর্যায়ের মারামারির ঘটনা ঘটে। এভাবে আমেজ উদ্দিনের মতো প্রতিদিনই ভাড়া টোল নিয়ে গন্ডগোলের খবর পাওয়া যায়। ভাড়া নেওয়া হলেও কোনো রশীদ দেওয়া হচ্ছে না বলেও অভিযোগ আছে। আমজাদ হোসেন নামের এক যাত্রি অভিযোগ করে জানান, ঘাটের ইজারাদার ও নৌকার মালিকরা তাদের ইচ্ছামতো ভাড়া ও টোল আদায় করে থাকে। কেউ প্রতিবাদ করলে ঘাটে নিয়ে তাকে চরম অপমান অপদস্ত করা হয়ে থাকে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক নৌকার মালিক বলেন, ‘ইজারাদার আমাদের কাছ থেকে নৌকা প্রতি ৫০ হাজার টাকা করে ঘুষ গ্রহণ করেছে। আর প্রতিদিন তো টোল দেওয়াই হয়। ওই টাকা তুলতে আমাদের ভাড়া বাড়ানো ছাড়া কোনো উপায় নেই।’ একই কথা জানান, সকল নৌকার মালিকরা। তবে সংশ্লিষ্ট লট ঘাটের ইজারাদার শাহজাহান মন্ডল নৌকা (ট্রলার) প্রতি ৫০ হাজার টাকা করে ঘুষ গ্রহণের কথা অস্বীকার করে বলেন, ‘এবছর অনেক বেশি টাকায় ঘাট ইজারা নেওয়া হয়েছে। আমার টাকা তুলতে ভাড়া বৃদ্ধি ছাড়া কোনো উপায় নেই।’

এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে রাজীবপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আব্দুল লতিফ খান বলেন, ‘যাত্রিভাড়া বৃদ্ধির বিষয়টি আমার কানে এসেছে। এ বিষয়ে ইজারাদারকে ভাড়া কমানোর কথা বলা হয়েছে।’ তবে রৌমারীর ইউএনও আব্দুল হান্নান ও চিলমারীর ইউএনও আহসান হাবীব জানান, টোল ও যাত্রিভাড়া বাড়ানোর বিষয়টি আমাদের কেউ অবহিত করেনি।’

(অারএইচ/এটিঅার/জুলাই ২১, ২০১৪)

পাঠকের মতামত:

১৯ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test