E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

জরুরী চিকিৎসা কেন্দ্র নাই

রূপপুর প্রকল্পে একের পর এক রাশিয়ান নাগরিকের মৃত্যু 

২০১৯ জানুয়ারি ২৫ ১৭:৫৯:৫৯
রূপপুর প্রকল্পে একের পর এক রাশিয়ান নাগরিকের মৃত্যু 

ঈশ্বরদী (পাবনা) প্রতিনিধি : জরুরী চিকিৎসার জন্য চিকিৎসা কেন্দ্র প্রতিষ্ঠিত না হওয়ায় রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পে একের পর এক রাশিয়ানের মৃত্যুর ঘটনা ঘটছে।

প্রকল্পের নির্মাণ কাজ শুরু হওয়ার পর ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের অধীনে কর্মরত বেশ কয়েকজন শ্রমিকও দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছে। নির্মাণাধীন এই প্রকল্পে শুক্রবার আবারো হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে শেরগিন ভ্যাইলি (৫৯) নামের এক রুশ নাগরিকের মৃত্যু হয়েছে। তিনি রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের রাশিয়ার ঠিকাদারী ‘রোসেম’ নামের প্রতিষ্ঠানে কর্মরত ছিলেন বলে জানা গেছে।

প্রকল্পের নতুনহাট মোড়ে নির্মাণাধীন গ্রিন সিটির একটি কক্ষে ভ্যাইলি থাকতেন।

স্থানীয়রা জানায়, শুক্রবার সকালে গ্রীণ সিটির ১ নম্বর ভবনের ৫১ নম্বর কক্ষের বাথরুমের ভেতরে তাঁকে পরে থাকতে দেখা যায়। বাথরুমের দরজা ভেতর হতে বন্ধ ছিল। পরে দরজা ভেঙে তাঁকে উদ্ধার করা হয়। কিন্তু আগেই ভ্যাইলির হৃদস্পন্দন বন্ধ হয়ে গিয়েছিল।

সূত্র জানায়, এসময় গ্রীন সিটির মেডিকেল কো-অর্ডিনেটর ডাঃ ফকরুল ইসলামকে খবর দেয়া হলে তিনি এসে পরীক্ষা করে জানান, আগেই তাঁর মৃত্যু হয়েছে। ভ্যাইলি হৃদ্রোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেছেন বলে তিনি ধারণা করছেন।

ঈশ্বরদী থানার অফিসার ইনচার্জ বাহাউদ্দিন ফারুকী জানান, শেরগিন ভ্যাইলি রোসেম কোম্পানিতে কর্মরত ছিলেন। তিনি রূপপুর প্রকল্পের সাব-ঠিকাদার ‘রোসেম’ কোম্পানিতে রাশিয়া হতে বাংলাদেশে এসে প্রকল্পের ‘ইন্সট্রলার’ পদে কাজ করতেন।

উল্লেখ্য, প্রকল্পের কাজ শুরু হওয়ার পর এ পর্যন্ত ৬-৭ জন রাশিযান নাগরিকের মৃত্যু হয়েছে নির্ভরযোগ্য সূত্র জানিযেছে। এছাড়া ইতোমধ্যে বেশ কয়েকজন নির্মাণ কাজে নিয়োজিত শ্রমিকের মৃত্যু ঘটলেও তাৎক্ষনিকভাবে কোন সুচিকিৎসার ব্যবস্থা নেই। স্থানীয়রা জানান, বেশীরভাগ রাশিয়ানের মৃত্যু হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে ঘটেছে বলে বলা হলেও মুলত: অতিরিক্ত মদ্যপানের কারণেই তাঁরা হৃদরোগে আক্রান্ত হয়েছে।

রূপপুর পারমাণবিক প্রকল্পে কর্মরতদের জন্য জরুরী চিকিৎসা কেন্দ্র প্রতিষ্ঠার কথা রয়েছে। কবে নাগাদ এই কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা হবে তা জানা যায়নি।

প্রকল্পের সাইট ইনচার্জ রুহুল কুদ্দুস জানান, প্রকল্পের কোন নিজস্ব চিকিৎসক নেই। কেউ অসুস্থ হলে ঈশ্বরদী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে অথবা প্রাইভেট চিকিৎসকের স্মরণাপন্ন হতে হয়। তবে রাশিয়ান ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান এ্যাটমষ্ট্রয় এক্সপোর্টের পক্ষ হতে রাশিয়ানদের দেখভালের জন্য ডাঃ ফখরুল ইসলাম নামে একজন চিকিৎসক নিয়োগ দেয়া আছে বলে তিনি জানিয়েছেন।

সাম্প্রতিক সময়ে এই প্রকল্পে ১,৩০০ হতে ১,৪০০ রাশিযান কর্মরত রয়েছে। এসকল বিদেশীরা অসুস্থ হলে প্রকল্প এলাকা হতে প্রায় ৭ কিলোমিটার দূরের ঈশ্বরদী উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্রে নিযে আসতে হয। এই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক না থাকায় জরুরী ভিত্তিতে ঝুঁকিপূর্ণ রুগির সুচিকিৎসার ব্যবস্থা নেই। ঝুঁকিপূর্ণ রুগিকে রাজশাহী বা অন্যত্র পাঠানো হয। এসব রুগি পথিমধ্যেই মৃত্যুবরণ করে। তাছাড়া ঈশ্বরদীতে বিশেষজ্ঞ ডাক্তারদের নিয়ে পরিচালিত উন্নতমানের বেসরকারী হাসপাতাল বা ক্লিনিকও না থাকায় বিদেশীরা সুচিকিৎসা সেবা প্রাপ্তি হতে বঞ্চিত হচ্ছে।

উল্লেখ্য, রূপপুর পারমাণবিক প্রকল্পে কর্মরত রাশিয়ান ছাড়াও ইপিজেড এবং ঈশ্বরদীর অন্যান্য প্রতিষ্ঠানেও বেশ কিছু বিদেশী নাগরিক কর্মরত রযেছেন। রূপপুর প্রকল্পে এখন শুধু রাশিয়ান বা অন্য কোন বিদেশী নাগরিকই নয়, নিউক্লিয়ার পাওয়ার গ্রীড কোম্পানী এবং পরমাণু শক্তি কমিশনের নিযোগপ্রাপ্ত বিজ্ঞানী ও কর্মকর্তা কর্মরত রযেছেন।

(এসকেকে/এসপি/জানুয়ারি ২৫, ২০১৯)

পাঠকের মতামত:

১৬ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test