E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

চার বছর আগের জমাট বাঁধা সার পেষাই করে ভরা হচ্ছে নতুন বস্তায়!

২০১৯ এপ্রিল ২৭ ১৫:৩৩:১৯
চার বছর আগের জমাট বাঁধা সার পেষাই করে ভরা হচ্ছে নতুন বস্তায়!

ঈশ্বরদী (পাবনা) প্রতিনিধি : চার বছর আগে চীন হতে আমদানিকৃত ইউরিয়া সার দীর্ঘদিন ঈশ্বরদীর পাকশীতে নর্থ বেঙ্গল পেপার মিলস লিমিটেডের স্কুলের পাশে পরিত্যক্ত আবাসিক এলাকায় খোলা আকাশের নীচে পড়েছিল। এই সারের বেশীরভাগই এখন জমাট বেঁধেছে। জমাট বাঁধা সার পেষাই যন্ত্রে গুঁড়ো করে এখন নতুন বস্তায় ভর্তি হচ্ছে। এজন্য খরচও হচ্ছে প্রায় কোটি টাকা। জমাট বাঁধা সারের মান কতটা ব্যবহার উপযোগী, বিনষ্ট হয়ে থাকলে এই সার জমি বা ফসলের জন্য ক্ষতিকর কিনা, এই কাজের জন্য নতুন করে যে বিপুল অংকের টাকা খরচ হচ্ছে তা স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় হচ্ছে কিনা- এসব বিষয় নিয়ে স্থানীয়ভাবে বিভিন্ন মহলে প্রশ্নের সৃষ্টি হয়েছে ?

দীর্ঘদিন পড়ে থাকা এই সারের বিষয়ে অনুসন্ধান করতে গিয়ে জানা যায়, ২০১৬ সালে বিসিআইসি’র ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে সাড়ে ২৭ হাজার টন খোলা গ্র্যানুলার ইউরিয়া (বাল্ক) সার চট্টগ্রাম বন্দরে আমদানি করা হয়। পরে ৫০ কেজির প্যাকেট করে বিসিআইসি’র বিভিন্ন স্থানের গোডাউনে পাঠানো হয়। এরমধ্যে ৫০ কেজির বস্তায় ১০ হাজার টন সার ঈশ্বরদীর টিজিতে সংরক্ষণের কার্যাদেশ দেয়া হয়।

টিজিতে আসা সারের বস্তার ওজন ৫০ কেজির পরিবর্তে ৩৫, ৪১ ও ৪৮ কেজি ধরা পড়ে। ওজনে কম থাকায় গুদাম কর্তৃপক্ষ সারগুলো গ্রহনে অপারগতা প্রকাশ করে এবং বিসিআইসি’র নিকট অভিযোগ জানায়। কিন্তু বিসিআইসি অভিযোগের বিষয়টি আমলে না নিয়ে গুদামের ওজন যন্ত্রে ত্রুটি আছে উল্লেখ করে সারগুলো গ্রহনের জন্য চিঠি পাঠায়।

চিঠিতে আরো বলা হয়, বৃষ্টি বা বন্যায় সারের ক্ষতি হলে গুদাম ইনচার্জকে ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। এরপর গুদাম কর্তৃপক্ষ বিসিআইসিকে আবারো অভিযোগপত্র পাঠায়। ঠিকাদাররা সারগুলো আকাশের নিচেই ডাম্পিং করে রাখে। এ পর্যায়ে বিসিআইসি বিষয়টি খতিয়ে দেখার জন্য সারগুলো দেশি ও বিদেশি পরিবহনকারী প্রতিষ্ঠানকে নিয়ে (আন্তর্জাতিক ও স্থানীয়ভাবে পরিবহন করে সাউথ ডেল্টা শিপিং অ্যান্ড ট্রেডিং লিমিটেড) একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে। চার বছর পেরিয়ে গেছে। সারগুলো আকাশের ছিল নিচে।

প্রশ্ন উঠেছে, তদন্তের কি হলো ? চীন হতে আমদানি করা সারের ওজনে কম হওয়ার নেপথ্যে কারা ? দীর্ঘদিন স্কুলের পাশে আকাশের নিচে রাসায়ানিক এই সার ডাম্পিং করে রাখায় ী বারংবার শিক্ষার্থী ও এলাকাবাসীরা পরিবেশের বিষয় নিয়ে মৌখিক অভিযোগ জানালেও কোন পদক্ষেপ গ্রহন করা হয়নি।

বুধবার বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ করপোরেশন এর অধীনস্থ পে-অফ ঘোষিত দেশের সাদা কাগজ উৎপাদনকারী পাকশী নর্থ বেঙ্গল পেপার মিলস লিমিটেড এলাকা ঘুরে বিভিন্ন কর্মকর্তা ও শ্রমিকদের সাথে কথা বলে জানা যায়, এরই মধ্যে অনেক সার বিনষ্ট হয়েছে। বিপুল সংখ্যক বস্তায় জমাট বেঁধেছে। সেগুলো এখন পাওয়ার ক্রাশার যন্ত্রের মাধ্যমে গুঁড়া করে নতুন বস্তায় ভর্তি করা হচ্ছে। এই কাজে প্রায় কোটি টাকা ব্যয় হবে। বিসিআইসি এই ব্যয় বহন করবে। এই কাজ দেখার এবং দায় গ্রহনের কেউ নেই।কেউ নেই।

এসময় কর্মরত শ্রমিক সর্দার সাহাজুদ্দিন জানান, তাঁরা দিন হাজিরায় কাজ করেন। তাঁদের সুকান্ত লিটন নামের এক ব্যক্তি তাদের ভাড়া করে এনেছেন।

সুকান্ত লিটন জানান, জামালপুরের সরিষাবাড়ী উপজেলার তারাকান্দির যমুনা সার কারখানার ঠিকাদার কাজী আলমগীরের নির্দেশে সার ভেঙ্গে নতুন বস্তায় ভর্তি করা হচ্ছে। এর বেশি তিনি কিছুই জানেন না।
পাকশীর টিজি উপব্যবস্থাপক (বিক্রয়) ইকবাল আমিন রতন জানান, বস্তায় সারের পরিমাণ কম ছিল। এ কারণে বিসিআইসির কাছে অভিযোগ করা হয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে ডাম্পিং করে রাখায় সারগুলো জমাট বেঁধেছে। চীন থেকে আমদানি করা সার মূলত শক্তই হয়ে থাকে। তাই বিসিআইসির নির্দেশে পাওয়ার ক্রাশারে ভেঙে নতুন ব্যাগে ভর্তি করা হচ্ছে। তবে এতে সারের পরিমাণে আরো ঘাটতি হতে পারে।

সারগুলো বিনষ্ট হয়েছে কি-না এবিষয়ে জানতে চাইলে তিনি জানান, ‘খোলা জায়গায় সার পড়ে থাকলে বিনষ্ট হওয়ার কারণেই তো কোটি কোটি টাকা খরচ করে গোডাউন নির্মাণ করা হয়।’

(এসকেকে/এসপি/এপ্রিল ২৭, ২০১৯)

পাঠকের মতামত:

১৭ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test