E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

ধর্ষণে বাধা দেয়ায় শাজেনূরকে পুড়িয়ে মেরে বেলাল নিজেও আত্মহত্যা করে!

২০১৯ জুন ২৩ ১৪:৪১:০৫
ধর্ষণে বাধা দেয়ায় শাজেনূরকে পুড়িয়ে মেরে বেলাল নিজেও আত্মহত্যা করে!

অমল তালুকদার, পাথরঘাটা (বরগুনা) : বরগুনার পাথরঘাটায় চাঞ্চল্যকর মা ও মেয়েকে পুড়িয়ে মারার ঘটনা রহস্য উদঘাটন করতে একান্ত কথা হয়েছে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে নিহত শাজেনূরের সাথে থাকা বড় বোন তাজেনুর ও ভগ্নিপতি ইব্রাহিমের সাথে। তারা জানিয়েছেন নিহত শাজেনূর তার পরিবারের কাছে ধর্ষণের চেষ্টা কথা বলে গেছেন। এ বিষয়টি পাথরঘাটা উপজেলা পরিষদের মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান ফাতিমা পারভিন ও নিশ্চিত করেছেন।

গত ২০ জুন সকালে শাজেনূরকে বার্ন ইউনিটের চিকিৎসক মৃত্যু ঘোষণা করা পর শাহবাগ থানায় জিডি করে ময়নাতদন্তের পর লাশবাহি এ্যাম্বুলেন্স যোগে বাবার বাড়ি বরগুনার পাথরঘাটায় এনে জানাজা শেষে একমাত্র মেয়ে কারিমার পাশে ২১ জুন দুপুরে দাফন করা হয়েছে শাজেনূরকে।

ওইদিন (২১ জুন) রাতে স্থানীয় একটি অনলাইন (পাথরঘাটা নিউজের) প্রতিনিধির সাথে একান্ত কথা হয় ইব্রাহিমের। তখন ইব্রাহিম জানান, ঢাকা বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শাজেনূরের কাছে সে সময়ে বর্ননা জানতে চাইলে শাজেনূর ইব্রাহিমকে বলেন, ‘১২ জুন অনুমানিক রাত ১২টার দিকে তার সাবেক স্বামী বেলাল হোসেন ফোন দিয়ে ঘর থেকে বাহিরে বের হতে বলে। তখন শাজেনূর তাকে জানায় "কেন বের হবো আমি"বের হতে পারবোনা। তখন বেলাল তাকে জানায় শেষ বারের মত তোমার সাথে একটু কথা বলবো তুমি বাহিরে আস। এতে শাজেনুর রাজি না হয়ে সে বলেছে; সকালে জাহাঙ্গীর চাচার বাড়ীতে এসে যা বলার বলিও আমি সেখানে আসবো রাতে বের হতে পারবোনা। এতটুকু কথা বলে শাজেনুর ফোন কেটে দেন বলেও জানায় তারা।

শাজেনূর আরও বলেন, "ফোনে কথা শেষ হওয়ার কিছুক্ষণ পর আমি বাহিরে আগুনের ফুলকি দেখে দরজা খুলে বাহিরে বের হলে পিছনের দিক থেকে দু তিন জন মুখে কাপড় ঢুকিয়ে মাটিতে ফেলে জাপটে ধরে এসময় বেলাল আমাকে ধর্ষণের চেষ্টা করে। আমি মটর সাইকেল ড্রাইভার ফারুক মোল্লা ও রহমানকে চিন্তে পারছি। বাকি দুজন কে চিনি নাই। এরপর আমি বেলালকে লাথি মেরে উঠে দৌড়ানোর সময় পিছন থেকে গায়ে পেট্রল দিয়ে আবার আমাকে ঝাপটে ধরে ধর্ষণের চেষ্টা করে। এসময়ে আমি চিৎকার দিয়ে আমার ঘরে থাকা বাবা মাকে ডাক দিলে তাদের মধ্যে থেকে একজন আমার গায়ে আগুন ধরিয়ে দেয়। এ সময় আমি বেলালকে ঝাপটে ধরে জোরে জোরে চিৎকার দিলে ঘরের লোক টের পেলে তারা আমার বাবার ঘরেও পেট্রল দিয়ে আগুন ধরিয়ে দেয়। আমার গায়ের আগুন বাড়তে থাকলে আমি বেলালকে ছেড়ে দেই এতে বেলালের গায়ে ও আগুন ধরে যায়।

একপর্যায়ে বেলালের গায়ে আগুন নিভে গেলে সে পালিয়ে যায়। আমার ডাক চিৎকার শুনে আশপাশের লোকজন এসে আমার আগুন নিভায়।"

শাজেনুর মৃত্যুর আগেও বার বার একমাত্র মেয়ে ছকিনা আক্তার কারিমাকে দেখতে চেয়েছিলেন। কিন্তু ছকিনার মৃত্যুর সংবাদ শাজেনূরকে জানান নি তার পরিবার।

ইব্রাহিম গতকাল শনিবার সকাল ১০ টার দিকে মুঠোফোনে জানায়, বাড়ির পাশের পুকুরে মাছ ধরার সময় পুকুর থেকে একটি মোবাইল উদ্ধার করা হয়। এই ফোনের সিম নম্বর হলো 01736818646। ইব্রাহিমের ধারণা ওই ফোন থেকেই শাজেনূরকে ফোন করে ঘর থেকে বাহিরে আসতে বলেছিলো বেলাল।

নিহত শাজেনুরের মা আজিয়া বেগম জানান, আমার মেয়ে, নাতি ও বসতঘর পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। পরনের কাপড় ছাড়া কিছুই রক্ষা করতে পারি নাই। এঘটনার পর পুলিশ একবার আমার বাড়িতে এসে গেছে এরপর আর কোনো খোঁজখবর নেয়নি। আমরা এই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত নিয়ে সংশয়ে আছি।

এব্যাপারে মামলায় তদন্ত কর্মকর্তা পাথরঘাটা থানা পুলিশের উপপরিদর্শক এস আই নুরুল আমিন সিকদার জানান, বরিশাল শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে অবস্থান কালে শাজেনূর পুলিশের কাছে যে জবানবন্দি দিয়েছে তাতে ধর্ষণের চেষ্টার কোন অভিযোগ করেন নি। তখন ঘটনাস্থলে থাকা শুধু বেলালের নাম উল্লেখ করেছেন

এস আই নুরুল আমিন সিকদার নিহত শাজেনূরের মা আছিয়া বেগমের অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, মামলার তদন্তের জন্য পুলিশ বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন ভাবে পরিচয় গোপন রেখে তদন্ত করে। এই মামলায় তদন্তে সর্বোচ্চ নিরপেক্ষ হবে বলে জানান এই পুলিশ কর্মকর্তা।

স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য খলিলুর রহমান বলেন, শাজেনূর বেলাল দম্পতি নিয়ে ঝামেলার কথা আগে থেকেই জানতেন। আগুনের ঘটনায় ঘটার পর থেকেই আমি সার্বক্ষণিক তাদের সাথে যোগাযোগ রাখছি। তারা বর্তমানে মানবেতর জীবনযাপন করছে। একদিকে তাদের স্বজনদের হারোনোর শোক অপরদিকে লক্ষাধিক টাকা সহ কয়েক মন ধান চাল পুড়ে যাওয়ায় পরিবার টি এখন নিঃস্ব।

তিনি বলেন আমি ব্যক্তিগতভাবে প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কিনে দিয়েছি। এছাড়াও স্থানীয় সংসদ সদস্য শওকত হাচানুর রহমান রিমন, উপজেলা চেয়ারম্যান মোস্তফা গোলাম কবির, ও ইউএনও হুমায়ুন কবির তাদের ব্যাক্তিগত ভাবে সহযোগিতা করেছে।

এখন পরিবারটি পোড়া ঘরে রোদবৃষ্টির মধ্যে পলিথিনের ছাপড়া দিয়ে এক দুর্বিসহ জীবনযাপন করছে।

পারিবারিক অশান্তির আগুনের সাথে যোগ হওয়া পেট্রোলের আগুন কেড়ে নিলো তিন তিনটি জীবন। এমন আগুন যেনো আর কোনো পরিবারের অশান্তির কারন না হয়, এমনটাই প্রত্যাশা পাথরঘাটাবাসীর।

(এটি/এসপি/জুন ২৩, ২০১৯)

পাঠকের মতামত:

১৯ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test