E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

যমুনায় পানি বৃদ্ধির সাথে পাল্লা দিয়ে হারিয়ে যাচ্ছে ফসলি জমি ও ঘর-বাড়ি 

২০১৯ জুলাই ০৪ ০০:১১:২৭
যমুনায় পানি বৃদ্ধির সাথে পাল্লা দিয়ে হারিয়ে যাচ্ছে ফসলি জমি ও ঘর-বাড়ি 

রঞ্জন কৃষ্ণ পন্ডিত, টাঙ্গাইল : জোয়ারের পানি আসায় যমুনায় ভাঙন দেখা দিয়েছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড জরুরিভাবে জিও ব্যাগ ফেলে ভাঙন রোধের চেষ্টা করলেও তা ঘুর্ণন স্রোতের তোপে যমুনায় ভেসে যাচ্ছে। ফলে বর্ষার শুরুতেই টাঙ্গাইল সদর উপজেলার মামুদনগর ইউনিয়নের ঘর-বাড়ি ও ফসলি জমি যমুনার পেটে চলে যাচ্ছে। ভাঙনের শিকার হয়ে ইতোমধ্যে সহস্রাধিক পরিবার অন্যত্র চলে যেতে বাধ্য হচ্ছে।

টাঙ্গাইল পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানাগেছে, বৃষ্টির পানির প্রবাহে যমুনার পানি বেড়ে যাওয়ায় মামুদ নগর ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায় ভাঙন দেখা দেয়। ভাঙনরোধে পাউবো’র আপদকালীন তহবিল থেকে ১২টি স্প্যানের জায়গা নির্ধারণ করে প্রতি স্প্যানে তিন হাজার পিস করে জিও ব্যাগ ডাম্পিং করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। জরুরি কার্যক্রম হিসেবে গত ১৭ জুন থেকে ওইসব স্প্যানে জিও ব্যাগ ফেলা হচ্ছে। তবে তা প্রয়োজনের তুলনায় নিতান্তই কম।

সরেজমিনে দেখা গেছে, যমুনার বাম তীরে অবস্থিত টাঙ্গাইল সদর উপজেলার মামুদ নগর ইউনিয়নের সাতটি গ্রাম ভাঙনের শিকার হয়েছে। গ্রামগুলো হচ্ছে- কুকুরিয়া, কেশব মাইঝাইল, মাইঝাইল, সোনা মাইঝাইল, বার বাড়িয়া, চালা বাকলা ও বানিয়াপাড়া। এসব গ্রামের পাঁচ শতাধিক পরিবার বর্ষার শুরুতেই ভাঙনের শিকার হয়ে অন্যত্র চলে গেছে। ভাঙনের কবলে পড়ে পাট, ধান, বাদাম সহ বিপুল পরিমাণ ফসলি জমি ইতোমধ্যে যমুনার গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। এর আগে বৃষ্টির কারণে যমুনায় পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় অসময়ে ভাঙনের শিকার হয়ে আরো পাঁচ শতাধিক পরিবার অন্যত্র চলে যায়। ভরা বর্ষায় যমুনার যৌবনী ¯্রােতে ভেসে যাওয়ার আশঙ্কায় অনেকেই গবাদিপশু সহ ঘর-বাড়ি অন্যত্র সরিয়ে নিচ্ছেন।

ভাঙন কবলিত এলাকার আব্দুল হাই, করিম শেখ, জুলহাস, বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল জলিল, আবু সাইদ, সিরাজুল ইসলাম, মো. কছির উদ্দিন মন্ডল, রাজ্জাক প্রামাণিক, আ. খালেক রোশনাই, সাবেক মেম্বার আজমত আলী, আরমান, মান্নান, জিন্নত সরকার, আ. সামাদ, রহম আলী সরকার সহ অনেকেই জানান, প্রমত্ত্বা যমুনা সর্বগ্রাসী। প্রতিবছরই এসব অঞ্চলের ঘর-বাড়ি ও ফসলি জমি কেড়ে নেয়। মামুদ নগর ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ডের পুরোটাই বর্তমানে যমুনার পেটে। এ ওয়ার্ডের দুই হাজার ৭০০ ভোটারের প্রত্যেকের পরিবারই আত্মীয়-স্বজনের বাড়ি কিংবা নিজেরা অন্যত্র বাড়ি নির্মাণ করে বসবাস করছেন। দুইটি হাইস্কুল, চারটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, মাদ্রাসা, মসজিদ, কবরস্থান সহ অনেক প্রতিষ্ঠান নদী গর্ভে বিলীন হয়েছে। পাঁচটি মসজিদ, তিনটি কবরস্থান সহ পাঁচ শতাধিক ঘর-বাড়ি ও বিপুল পরিমাণ ফসলি জমি ভাঙনের আশঙ্কায় রয়েছে।

কুকুরিয়া গ্রামের আব্দুল হালিম জানান, তার নিজের ৫ একর আবাদি জমি যমুনা গ্রাস করেছে। তিনি আগেই বাজারের পাশে বাড়ি করেছিলেন। বর্তমানে সেই বাড়িটিই তাঁর একমাত্র সম্বল। একই গ্রামের আবু সাইদ জানান, তাদের পরিবারের ১৫০ বিঘা জমি ছিল সবই যমুনার পেটে চলে গেছে। তিনি করটিয়ায় বাড়ি নির্মাণ করে সেখানে বসবাস করছেন। তিনি আরো জানান, মাটির টান বড় টান। কাউকে যেন ঘরবাড়ি হারাতে না হয়। তাদের সবার দাবি কুকুরিয়া থেকে উজানে চার কি.মি. এলাকায় স্থায়ী বাঁধ নির্মাণ করা হোক। তারা আরো জানায়, বর্ষার শুরুতেই ভাঙন শুরু হওয়ায় পানি উন্নয়ন বোর্ড জরুরিভাবে ভাঙন কবলিত ৫৫০ মি. এলাকায় ১২টি স্প্যানে ৩৬ হাজার জিও ব্যাগ ফেলছে। পাউবো’র ধারণা ছিল, এতে পানির স্রোতের গতি পরিবর্তিত হয়ে পশ্চিম দিকে সরে যাবে। পানির স্রোতের গতি কিছুটা পরিবর্তিত হলেও ওই স্প্যানগুলোর মাঝখানেও ভাঙন দেখা দিয়েছে। কোন কোন স্প্যানের জিও ব্যাগ দেবে যমুনার তলদেশে চলে গেছে। ফলে জিও ব্যাগের অন্য স্প্যানগুলোও যমুনায় দেবে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

মামুদ নগর ইউপি চেয়ারম্যান মো. মাজেদুর রহমান তালুকদার জানান, যমুনা ও ধলেশ্বরীর ভাঙনে মামুদ নগর ইউনিয়নের মানুষ দিশেহারা। একদিকে যমুনার করাল গ্রাস অন্যদিকে ধলেশ্বরীর বিরামহীন ভাঙনে ইউনিয়নবাসীর নাভিশ্বাস ওঠেছে। কুকুরিয়া থেকে উজানে চার কিলোমিটার এলাকাব্যাপি স্থায়ী বাঁধ নির্মাণ করা হলে যমুনার ভাঙন থেকে এ ইউনিয়নের মানুষ রেহাই পেত। তিনি দ্রুত ওই বাঁধ নির্মাণের জন্য প্রধানমন্ত্রীর সুদৃষ্টি কামনা করেন।

টাঙ্গাইল পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সিরাজুল ইসলাম জানান, কুকুরিয়া থেকে উজানে স্থায়ী বাঁধ নির্মাণের জন্য উর্ধতন কর্তৃপক্ষের কাছে প্রকল্প পাঠানো হয়েছে। অনুমোদন পেলেই স্থায়ী বাঁধের কাজ শুরু হবে। জরুরি ব্যবস্থা হিসেবে ওই এলাকায় ১২টি স্প্যানে ৩৬ হাজার জিও ব্যাগ ফেলা হচ্ছে। স্প্যানে জিও ব্যাগ ফেলার কারণে পানির স্রোতের গতি অনেকটা পরিবর্তিত হয়ে পশ্চিম দিকে সরে গেছে। তবে দুই স্প্যানের মাঝে ঘুর্ণাবর্তের সৃষ্টি হয়ে ভাঙন দেখা দেয়ায় সেখানেও জিও ব্যাগ ডাম্পিং করা হচ্ছে। এলাকাবাসীর দাবির পরিপ্রেক্ষিতে আরো পাঁচ হাজার জিও ব্যাগ মজুদ রাখা হয়েছে। ভাঙন কবলিত এলাকার মানুষের সাহায্যে পাউবো সব সময় প্রস্তুত রয়েছে।

(আরকে/এসপি/জুলাই ০৪, ২০১৯)

পাঠকের মতামত:

০৩ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test