E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

১১ বছর ধরে শিকলবন্দি জীবন কিশোর মুন্নার 

২০১৯ জুলাই ১১ ১৬:৩৭:৪৭
১১ বছর ধরে শিকলবন্দি জীবন কিশোর মুন্নার 

ফরিদুল ইসলাম (রঞ্জু) : ৭ বছর বয়সে হঠাৎ করেই মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলে মনোয়ারুল ইসলাম মুন্না। এরপর  প্রাথমিক চিকিৎসা করা হলে কিছুদিন সুস্থ থাকার পর আবার আগের মতো অসুস্থ হয়ে পড়ে। পারিবারিক অসচ্ছলতার কারণে আর চিকিৎসা করা সম্ভব হয়নি মুন্নার। তার বয়স বর্তমানে ১৮ বছর। ১১ বছর ধরে পায়ে শিকল দিয়ে তাকে বেঁধে রাখা হয়েছে বারান্দার খুঁটির সাথে।তার বাড়ি ঠাকুরগাঁওয়ের পীরগঞ্জ উপজেলার জাবরহাট গ্রামে। সেখানেই ১১ বছর ধরে শিকল বন্দী জীবন পার করছে মুন্না।

তার মা মনোয়ারা বেগম জানান, অর্থের অভাবে তার চিকিৎসা করাতে পারেনি। মানসিক ভারসাম্যহীন হওয়ায় গত কয়েক বছর থেকে সে এলাকাবাসীর বিভিন্ন লোকসান করে। কারো গরু ছাগল মারধর, মানুষ মারধর, অনেকের সবজি-ক্ষেত নষ্ট করে। মেয়ে মানুষ দেখলে জাপটে ধরার চেষ্টা করে এমনকি নিজের পরিবারের লোকজনদের কাছে পেলে আঘাত করার চেষ্টা করে। এজন্যই পায়ে শিকল দিয়ে বেঁধে রাখা হয়েছে তাকে।

সরেজমিনে তার বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, টিনের চালার একটি ঘরের বারান্দায় শিকল পায়ে মাটিতে বসে আছে মুন্না। শরীরে শুধু প্যান্ট পরা আর কোন কাপড় নেই। ৩ বোনের মধ্যে মুন্না সবচেয়ে বড়। তাঁর বাবা মুনসুর আলী (৫৫) একজন সামান্য গরু ব্যবসায়ী।বর্তমানে পরিবারের খরচ চালাতে হিমশিম খাচ্ছেন তার বাবা মুনসুর আলী ।

মুনসুর বলেন,সামান্য একজন গরুর দালালির (ব্যবসায়ী) কাজ করি আমি। কাজ না থাকলে আমি দিনমজুরের কাজ করি। দৈনিক ৩০০-৩৫০টাকা এই টাকা দিয়ে সংসার চালাবো না মুন্নার চিকিৎসা করবো ভেবে পাচ্ছিনা। তারপরেও সে টাকা দিয়ে বিভিন্ন ভাবে তার চিকিৎসা করছি। দৈনিক ১০০ টাকার ঔষুধ লাগে মুন্নার । অবশিষ্ট টাকায় সংসারের খরচ চালাই। এভাবেই কষ্টের মধ্যে চলছে আমাদের জীবন। অর্থের অভাবে পুরোপুরি ভাবে ছেলের চিকিৎসা করাতে না পেরে ছেলেকে শিকলে বেঁধে রাখতে হচ্ছে। আমি বাবা হয়ে আর ছেলের কষ্ট সইতে পারিনা। সেই সাথে ছোট খাটো নানা সমস্যার মধ্যে দিন পার করছি। সরকারিভাবে আমাদের কোন ভাতাও দেওয়া হচ্ছে না। যদি কিছু সহযোগিতা পেতাম তাহলে ছেলেমেয়েদের লেখাপড়ার খরচসহ পরিবারের খরচ চালাতে পারতাম। প্রতিবন্ধী মুন্নার

চিকিৎসা এবং পরামর্শ আশা করেন তার অসহায় বাবা। তিনি সরকারি সহায়তা চান ছেলের চিকিৎসার জন্য।এ ব্যাপারে ১০নং জাবরহাট ইউপি চেয়ারম্যান হুমায়ুন কবির বলেন,তার পরিবারকে বিভিন্ন ভাবে সহযোগিতা করার চেষ্টা করি। মুন্নাকে চিকিৎসার জন্য পাবনা মানসিক হাসপাতালে নেওয়ার জন্য তার বাবাকে সহযোগিতা করবো। সেখানে গেলে হয়তো সে ভালো হতে পারে।

(এফ/এসপি/জুলাই ১১, ২০১৯)

পাঠকের মতামত:

২১ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test