E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

‘বুলবুল‘র আঘাতে লণ্ডভণ্ড শ্যামনগর : সরকাারি পরিসংখ্যানের সঙ্গে বাস্তবতার ভিন্নতা

২০১৯ নভেম্বর ১২ ১৫:৫৪:২১
‘বুলবুল‘র আঘাতে লণ্ডভণ্ড শ্যামনগর : সরকাারি পরিসংখ্যানের সঙ্গে বাস্তবতার ভিন্নতা

রঘুনাথ খাঁ, সাতক্ষীরা : বুলবুল আঘাতে লণ্ডভণ্ড সাতক্ষীরার শ্যামনগরে  সরকাারি পরিসংখ্যানের সঙ্গে বাস্তবতার ভিন্নতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। দাবি উঠেছে ক্ষয়ক্ষতির পরিমান সঠিক জেনে প্রয়োজনীয় ত্রান সহায়তার।

এদিকে ঘূর্ণিঝড় বুলবুল এর আঘাত আনার পর রোববার থেকে লণ্ডভণ্ড সাতক্ষীরার শ্যামনগরে উদ্ধার ও ত্রাণ তৎপরতা চালাচ্ছে সেনাবাহিনীসহ বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান।

সরেজমিনে সোমবার দুপুরে শ্যামনগরের গাবুরা ইউনিয়নের ডুমুরিয়া, মধ্যম খলিষাবুনিয়া, লক্ষীখালি, আড়পাঙাসিয়াসহ বিভিন্ন স্থান ঘুরে দেখা গেছে,ুিট সোলিং ও কাঁচা রাস্তার উপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। রাস্তার দু’ ধারে ভেঙে পড়ে আছে বিভিন্ন প্রজাতির গাছ। বৃষ্টির পানিতে ভেসে গেছে বিস্তীর্ণ অঞ্চলের চিংড়ি ঘের। ঘেরের মাছ খালে ভেসে যাওয়ায় সাধারণ মানুষ তাতে জাল ফেলে মাছ ধরছে। কিছু ুকছু আধা পাকা ঘরের চাল উড়ে গেছে। গোলপাতা বা মাটির বেশ কিছু ঘর পড়ে গেছে। সুপেয় পানির পুকুরগুলো লোনা পানিতে ভরে খাওয়ার অনুপযোগী হয়ে উঠেছে।

মধ্যম খলিষাবুনিয়া গ্রামের আব্দুল মান্নান বলেন, তার ৫৭ বিঘা চিংড়ি ঘের বৃষ্টির পানিতে ভেসে গেছে। ভেঙে পড়েছে আইলা পরবর্তী লাগানো বিভিন্ন প্রজাতির শতাধিক গাছ। এলাকায় কিছু কিছু ঘর বাড়ি আংশিক ভেঙে গেছে। তবে চিংড়ি ঘের ভেসে যাওয়ায় অনেকে কর্মহীন হয়ে পড়েছেন। তবে প্রাণহানি না ঘটায় আল্লাহকে ধন্যবাদ দিয়ে তিনি বলেন, শ্যামনগরে যেভাবে ঘরবাািড়র ক্ষতির কথা টিভিতে প্রচার হচ্ছে প্রশাসনের বরাদ দিয়ে বাস্তবে তা ঠিক নয়।

একই গ্রামের সালমা খাতুন জানান, বুলবুলির আঘাতের হাত থেকে বাঁচতে সাইক্লোন শেল্টারে গিয়েছিলন। এসে দেখেন রান্না ঘর ও গোয়ালঘর ভেঙে গেছে। পানিতে ডুবে গেছে পায়খানা ঘর। তবে স্লুইজ গেটের পাটা তুলে দেওয়ায গতকালের চেয়ে আজ একটু পানি কমে গেছে। সরকারি বা বেসরকারি কোন জায়গা থেকে ত্রাণ মেলেনি।

গাবুরা ইউপি’র সাবেক চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা জিএম শফিউল আযম লেনিন বলেন, সুন্দরবন ও নদীতে ভাটা থাকার কারণে আইলার মত বুলবুলি ক্ষতি করতে পারেনি। শনিবার দিবাগত রাত তিনটার দিকে নদীতে জোয়ার থাকলে ও একই দিক থেকে নদীর স্রোত ও বাতাস হলে ক্ষয়ক্ষতির কুল কিনারা থাকতো না। ইউনিয়নে নদী বাঁধের নাজুক অবস্থার বর্ণনা দিতে যেয়ে তিনি বলেন এখানকার মানুষ ত্রাণ চায় না, বাঁধ চায়।

ইউনিয়নে ১৫টি সাইক্লোন শেল্টার পর্যান্ত নয় দাবি করে তিনি বলেন, ৪২ হাজার মানুষের জন্য কমপক্ষে আরো ৩০টি সাইক্লোন শেল্টার দরকার। সুপেয় পানির পুকুরগুলো উদ্ধার করে আবারো পূর্বের অবস্থায় ফিরিয়ে না গেলে সাধারণ মানুষের পানির জন্য দুর্ভোগের অন্ত থাকবে না। একইভাবে স্যানিটেশান ব্যবস্থা ভেঙে পড়ার অভিযোগ করেন তিনি।

বুড়িগোয়ালিনি ইউনিয়নের কলবাড়ি গ্রামের ইউনুস আলী বলেন, তার ঘর ভেঙে গেছে ঝড়ে। ছোট ব্যবসা প্রতিষ্ঠানটি ভেঙে গেছে। সংসার চালাবো কি করে। তবে টিভিতে প্রচারিত ঘরবাড়ি ভাঙচুর ও মানুষের ক্ষতির পরিমানের সঙ্গে প্রশাসনের দেওয়া তথ্য মিল আছে। যদিও বাস্তবে তা ঠিক নয়।

ছোট ভেটখালি গ্রামের শেখ আফজাল হোসেন বলেন, তার বাড়ির পাশে শেখপাড়া জামে মসজিদের সামনে মাহমুদা নদীর বেড়িবাঁধ শুক্রবার সকাল ১১টার দিকে ১২০ ফুটের মত বসে গেলেও পানি ঢোকেনি। তওব বাতাসে তার চিংড়ি ঘের সহ বেশ কিছু ঘের বাতাসের তোড়ে ভেসে গেছে। এখন তারন মাথায় হাত।

এলাকায় ব্যাপক গাছপালা ভেঙেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, আল্লার ইচ্ছায় বেশি ঘরবাড়ি ভাঙেনি। জীবনহানি হয়নি । তবে তিনি বলেন, শ্যামনগরের চেয়ে সাতক্ষীরায়ও কম ক্ষতি হয়নি।

শ্য্যামনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো” কামরুজ্জামান বলেন, উপজেলায় অনেক কাঁচা ঘরবাড়ি ভেঙে গেছে। আবার কিছু ঘরবাড়ি আংশিক ক্ষতি হয়েছে। তিন হাজার ৫০০ চিংড়ি ঘরে ভেসে যেয়ে ছয় কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। নয় হাজার ৫০০ হেক্টার জমির ফসল নষ্ট হয়েছে। তবে প্রশাসন তৎপর থাকায় নদীবাঁধে ভাঙন দেখা দেয়নি। তবে সম্প্রতি ত্রাণ ও দুর্যোগ মন্ত্রণালযের সচীব মহোদয় এস সমগ্র এলাকা ঘুরে বলেছেন যে, খুব শ্রীঘ্রই গাবুরা থেকে খুলনার বটিয়াঘাটা পর্যন্ত দীর্ঘ এলাকারবেড়িবাঁধ সংস্কারে পাঁচ হাজার কোটি টাকা খরচের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।

সাতক্ষীরা ত্রাণ ও দুর্যোগ কমিটির সভাপতি জেলা প্রশাসক এমএম মোস্তফা কামাল জানিয়েছেন, বুলবুলের তান্ডবে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্থ শ্যামনগরের গাবুরা,রমজাননগর, কৈখালী ও মুন্সিগঞ্জ ইনিয়ন । এখানে বেশ কয়েকটি নদীর বেড়ীবাধে ফাটল দেখা দিয়েছে। জেলায় দু;লাখ ২৬ হাজার মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ৩২ হাজার কাঁচা ও পাকা ঘর বাড়ী আংশিক ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। পুর্ণ ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে ২৬ হাজার ঘরবাড়ী।

দুর্যোগ পরবর্তী সময়ে রোববার দুপুর থেকে নৌবাহিনী, কোস্টগাট, ফায়ার সাভিস, সিপিপি, স্বেছাসেবদের পাশাপাশি সেনাবাহিনী উদ্ধার ও ত্রাণ তৎপরাতা শুরু করেছে। রাস্তার দু’পাশ থেকে ভেঙে পড়া গাছ সরানোর কাজ করছে তারা। বিতরণ করছে ত্রাণ। ভেঙে পড়া ঘরবাড়ি মেরামত শুরুর কাজ ও করছে তারা।

প্রসঙ্গত, শনিবার দিবাগত রাত তিনটার দিকে ঘুর্ণিঝড় বুলবুল আঘাত হানে সাতক্ষীরার সুন্দরবন সংলগ্ন উপকুলবর্তী এলাকায়। এর প্রভাবে সারা জেলায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হলেও শ্যামনগরের গাবুরা, মুন্সিগঞ্জ, কৈখালি ও রমজাননগরে সবচেয়ে বেশি ক্ষয়ক্ষতি হয়।

(আরকে/এসপি/নভেম্বর ১২, ২০১৯)

পাঠকের মতামত:

২১ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test