E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

আশাশুনিতে চেয়ারম্যান ডালিমের ভাইকে হত্যার চেষ্টা, ২৫ জনের নামে মামলা

২০২০ এপ্রিল ১৪ ২২:২৫:৩৬
আশাশুনিতে চেয়ারম্যান ডালিমের ভাইকে হত্যার চেষ্টা, ২৫ জনের নামে মামলা

রঘুনাথ খাঁ, সাতক্ষীরা : আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগের দু’ গ্রুপের সংঘর্ষে এক জন নিহত, উভয়পক্ষের ১০ জন আহত ও উভয়পক্ষের ১৫টি বাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনায় আরো একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে।

সোমবার রাতে সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলার গদাইপুর গ্রামের মোজাহার সরদারের ছেলে ওবায়দুল্লাহ ডাবলু বাদি হয়ে থানায় এ মামলা দায়ের করেন। মামলায় ২৫ জনের নামসহ অজ্ঞাতনামা ১২জনকে আসামী করা হয়েছে।

এ মামলার অন্য আসামীরা হলেন খাজরা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক চেয়ারম্যান গদাইপুর গ্রামের রুহুল কুদ্দুস, একই গ্রামের ঠিকাদার অহিদুল ইসলাম মোল্লা, মমিন মোল্যা, নিহত শরবত মোল্লার ছেলে শিমুল মোল্লা ও সবুজ হোসেন মোল্লা, আনারুল ইসলাম, ফেরদৌস হোসেন, কাপষণ্ডার হারু মোড়ল, মফিজুল ইসলাম, মনজু মোল্লা, কামরুল সরদার, জাকিরুল মোল্ল্যা, রব্বানী মোল্লা, প্রিন্স, রবিউল, রাসেল, নূরুজ্জামান মোল্ল্যা (মুকুল), হাফিজুল, জামিনদার, আসাদুজ্জামান, আবুল কালাম, আক্তার মোল্ল্যা, নরিম মোল্লা, হাসান ও ইসমাইল।

ঘটনার বিবরনে জানা যায়, দাবিকৃত চাঁদার টাকা না পেয়ে গদাইপুর পশ্চিম বিলে মঞ্জুরুল ইসলাস ও নূর ইসলামের যৌথ ঘের দখল করার জন্য চেয়ারম্যান ডালিম হুমকি দিলে গত শুক্রবার সকালে আহসান হাবিব টগর গদাইর্পু সেটে মাছ বিক্রি করতে গেলে সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা রুহুল কুদ্দুস ও রমজান আলীর লোকজন তার উপর হামলা চালায়।

এ সময় টগরকে লোহার রড দিয়ে হত্যার চেষ্টা করে তার কাছে থাকা মাছ বিক্রির টাকা লুট করা হয়। তাকে রক্ষায় এগিয়ে আসা সালামের মোটর সাইকেল কেড়ে নেওয়া হয়। টগর বর্তমানে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। এ ঘটনায় পাল্টা হামলা হলে উভয়পক্ষের সংঘর্ষে শরবত মোল্লা, তার স্ত্রী শেফালী খাতুনসহ কমপক্ষে সাতজন আহত হন। শুক্রবার দিবাগত রাত একটার দিকে খুলনা ৫০০ শয্যা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শরবত মারা যান। শরবতের মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়ার পরপরই কুদ্দুস ও রমজান বাহিনীর সদস্যরা পুলিশের উপস্থিতিতে চেয়ারম্যান ডালিমের বাড়ি ও গাড়ি ভাঙচুর করে।

এ সময় তার বাড়ির ভিতরে থাকা আলমারি, ফ্রিজ, টিভি, মোটর সাইকেলসহ বিভিন্ন জিনিসপত্র ভাঙচুর করা হয়। লুটপাট করা হয় নগদ টাকা, সোনার গহনাসহ বিভিন্ন প্রয়োজনীয় কাগজপত্র। শরবতের মৃত্যু ও তার বাড়িসহ তার সমর্থকদের কয়েকটি বাড়িতে ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনায় শনিবার রাতে তার ছেলে সবুজ মোল্লা বাদি হয়ে চেয়ারম্যান ডালিমসহ ৫৭জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা ২৫ জনের বিরুদ্ধে মামলা(১৪নং) দায়ের করেন। এ ঘটনায় পুলিশ ১০জনকে গ্রেপ্তার করে জেল হাজতে পাঠায়।

রবিবার সাতক্ষীরার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ইলতুৎ মিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শণ করেন। তিনি ক্ষতিগ্রস্ত ডালিম চেয়ারম্যান ও তার সহযোগীদের মামলা দিলে তা রেকর্ড করা হবে বলে আসেন। একপর্যায়ে সোমবার রাতে ডালিম চেয়ারম্যানের ভাই ওবায়দুল্লাহ ডাবলু বাদি হয়ে রুহুল কুদ্দুস, আওয়ামী লীগ নেতা ও ঠিকাদার অহিদুল মোল্লা, নিহতের দু’ ছেলে সবুজ ও শিমুলসহ হত্যা মামলার কয়েকজন সাক্ষীর বিরুদ্ধে এ মামলা (১৫নং) দায়ের করা হয়। তবে আওয়ামী লীগ নেতা রমজান আলীর নাম না থাকলেও তার প্রতিপক্ষ হারু মোড়লসহ কয়েকজন এ মামলার আসামী শ্রেণীভুক্ত হয়েছেন। আবার হত্যা মামলায় রমজান আলী পক্ষের ওয়াচ কুরনিসহ কয়েকজন আসামী হয়েছেন।

তবে আশাশুনি উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান অসীম বরণ চক্রবর্তী সাংবাদিকদের বলেন, ডালিম চেয়ারম্যানের বাড়িতে যে হামলা হয়েছে তা ১৯৭১ সালের রাজাকার ও আলবদরদের বর্বরতাকে হার মানিয়েছে।

তবে খাজরা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও চেয়ারম্যান ডালিমের মামাত ভাই রুহুল কুদ্দুস বলেন, ১৯৭১ এর মুক্তিযুদ্ধে চেয়ারম্যান শাহানেওয়াজ ডালিমের বাবা মোজাহার সরদার রাজাকার ছিলেন। এ নিয়ে
মোজাহার সরদারের নামে দায়েরকৃত যুদ্ধাপরাধীর মামলা চলাকালে তিনি মারা যান। মোজাহার সরদারের বিরুদ্ধে এলাকার সংখ্যালঘুদের উপর হামলা, নির্যাতন ও জমি জবরদখলসহ নানা অভিযোগ ছিল। ডালিমের চাচা সোবহান সরদার জালিয়াতির হোতা হওয়ায় তিনি জাল সোবহান বলে জেলার বাইরেও পরিচিতি লাভ করেন।

২০১৫ সাল থেকে চেয়ারম্যান ডালিম ও তার বাহিনীর নির্যাতনে এলাকার বহু মানুষ মিথ্যা মামলায় হয়রানি হচ্ছে। অনেকে পঙ্গুত্ব নিয়ে এলাকা ছেড়েছে। অথচ দীনেশ নামের এক মুক্তিযোদ্ধাকে সামনে রেখে সাতক্ষীরা প্রেসক্লাবে সংবাদ সস্মেলন করে চেয়ারম্যান ডালিম তার বাবাকে সহযোগী মুক্তিযোদ্ধা করানোর চেষ্টা করেছে। শরবত মোল্লাকে হত্যার পর মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের শক্তি দীর্ঘ নির্যাতন ও নিপীড়নের বদলা নিয়েছে। তবে ঘটনাকে ফুলিয়ে ফাঁপিয়ে বড় করা হচ্ছে। ডাবলুর দায়েরকৃত মামলায় ডালিমের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মামলার অধিকাংশ বাদিকে আসামী করা হয়েছে।

রুহুল কুদ্দুস আরো বলেন, ২০১৫ সালের এপ্রিল মাসে খাজরা ইউপি চেয়ারম্যান হিসেবে জয়লাভ করার পর এলাকার উন্নয়নের কোটি কোটি টাকার কাজ না করে ভুয়া মাষ্টার রোলের মাধ্যমে টাকা তুলে বড় অংশ আত্মসাৎ করার অভিযোগে গদাইপুরের হাজী আবুল হোসেন মোল্লা বাদি হয়ে ২০১৯ সালে হাইকোর্টে রিট পিটিশন দাখিল করেন।

তুয়ারডাঙার শহীদুল ইসলাম, আওয়ামী লীগ নেতা রমজান আলী ও আবুল হাজী ইউনিয়নের উন্নয়নের টাকার কাজ না করে লুটপাট করার অভিযোগ এনে শাহানেওয়াজ ডালিমের বিরুদ্ধে গত ফেব্র“য়ারি মাসে জেলা ও দায়রা জজ আদালতে পৃথক মামলা দায়ের করেন। মামলার তদন্তভার দুদকের উপর ন্যস্ত করা হয়েছে। এ ছাড়া ডালিম ধর্মান্তরিত পিরোজপুরের টুম্পা গণধর্ষণ ও আগুনে পুড়িয়ে হত্যা মামলার আসামী।

এ ছাড়াও ডালিমের বিরুদ্ধে গদাইপুর গ্রামের শুকুর আলীর স্ত্রী মহিলা ইউপি সদস্য নাসিমাকে ধর্ষণের চেষ্টা, শহরের কামাননগরের চিত্তর মোড় এর শফিকুল ইসলামের কর্মচারির দায়েরকৃত চাঁদাবাজির মামলা, গদাইপুরের জাকির হোসেন মোল্লার দায়েরকৃত ঘেরে বোমাবাজি ও চাঁদাবাজির মামলা, খাজরার আফছার আলীর বাড়িতে চুরির মামলা, চাপড়ার এক ঠিকাদারের চাঁদাবাজির মামলা, তুয়ারডাঙার আনারুল মেম্বরের চাঁদাবাজি মামলা, পিরোজপুরের ইসমাইল হোসেনের ডাকাতি মামলা গদাইপুরের সিরাজুল ইসলামের চাঁদাবাজির মামলা, খাজরার রাহাজান মাষ্টারের চাঁদাবাজির মামলা ও ফটিকখালির বিজন কুমার সানার চাঁদাবাজির মামলাসহ কমপক্ষে এক ডজনের বেশি মামলা রয়েছে।

তবে সরেজমিনে মঙ্গলবার সকালে গদাইপুর গ্রামে গেলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন নারী ও পুরুষ সাংবাদিকদের বলেন, শরবত হত্যা মামলায় ১০ জন জেলে যাওয়ার পর অন্য আসামীরা এলাকার বাইরে চলে যায়। এ সময় ডালিম ও তার সমর্থকদের বিভিন্নভাবে হুমকি ধামকি দিয়ে আসছিল নির্যাতিত মানুষজন। তবে সোমবার রাতে ডালিমের ভাই মামলা করায় হত্যা মামলার আসামীরা আবার প্রকাশ্যে এসেছে। ফলে গদাইপুরে যে কোন সময় আবারো রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হতে পারে।

শরবত হত্যা মামলার তদন্তকারি কর্মকর্তা আশাশুনি থানার উপপরিদর্শক হাসানুজ্জামান বলেন, তিনি পলাতক আসামীদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা করছেন।

একই কথা বলেন, ওবায়দুল্লাহ ডাবলু’র দায়েরকৃত মামলার তদন্তকারি কর্মকর্তা উপপরিদর্শক জাহাঙ্গীর হোসেন।
আশাশুনি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুস সালাম দুই পক্ষের পাল্টাপাল্টি মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে রয়েছে।

(আরকে/এসপি/এপ্রিল ১৪, ২০২০)

পাঠকের মতামত:

৩০ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test