E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

শিরোনাম:

নওগাঁয় চালের দাম কেজিতে কমেছে ৫ টাকা 

২০২০ মে ১১ ১৬:৫৩:০৭
নওগাঁয় চালের দাম কেজিতে কমেছে ৫ টাকা 

নওগাঁ প্রতিনিধি : নওগাঁয় মনের আনন্দে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত চলতি মৌসুমে বোরো ধান কাটা মাড়াইয়ের কাজ করছে কৃষক। কাটা মাড়াইয়ের শুরুতেই কৃষকরা তাদের কষ্টের ধান বাজারে ভালো দামে বিক্রি করতে পেরে খুশি। এদিকে ধান কাটা মাড়াই শুরু হওয়াতে এর প্রভাব পড়েছে নওগাঁর চালের বাজারে। সকল ধরণের চাল প্রতি কেজিতে গত এক সপ্তাহ থেকে ৪ টাকা থেকে ৫ টাকা কমে কেনা বেচা হচ্ছে। 

নওগাঁ কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, আবহাওয়া অনুকূলে থাকা, স্বল্প মূল্যে সার, তেল ও কৃষিতে সরকারের ভূর্তকী দেয়ায় নওগাঁয় ১ লাখ সাড়ে ৮২ হাজার হেক্টর জমিতে বোরো ধান চাষ করা হয়েছে। লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে আড়াই হাজার হেক্টর জমিতে ধান চাষ বেশী করা হয়েছে। চলতি মৌসুমে প্রাকৃতিক দুর্যোগ এবং ধানে রোগবালাই না দেখা দেয়ায় বোরো ধানের বাম্পার ফল হয়েছে।

ইত্যেমধ্যে ধান পেকে যাওয়ায় ১০/১২ দিন আগে থেকে খাদ্যে উদ্বৃত্ত নওগাঁ জেলায় ধান কাটা মাড়াই শুরু হয়েছে। প্রতি বিঘায় চিকন জাতের ধান ২২ মণ থেকে ২৭ মণ এবং মোটা জাতের ধান ২৮ মণ থেকে ৩২ মণ পযর্ন্ত ফলন হচ্ছে। গত বছরের তুলনায় প্রতি বিঘায় ধান বেশি উৎপাদন ও বাজারে বেশি দামে কেনা-বেচা হচ্ছে।

বিভিন্ন হাট-বাজার ঘুরে জানা গেছে, গত বছরের তুলনায় প্রায় ১শ’ টাকা বেশি দরে প্রতি মণ ধান কেনা বেচা হচ্ছে। মোটা জাতের ধান ৬শ’ টাকা থেকে ৭শ’ টাকা এবং চিকন জাতের ৭শ’ টাকা থেকে সাড়ে ৮শ’ টাকা পর্যন্ত প্রতি মণ কেনা বেচা হচ্ছে।

এদিকে নতুন ধান বাজারের আসতেই এর প্রভাব পড়েছে নওগাঁর চালের বাজারে। গত এক সপ্তাহ আগে থেকে নওগাঁয় সকল ধরনের প্রতি কেজি চাল ৪ টাকা থেকে ৫ টাকা কমে কেনা বেচা হচ্ছে।

নওগাঁ পৌর ক্ষুদ্র চাল ব্যবসায়ীরা জানান, বর্তমানে খুচরা বাজারে চিনি আতব ৮৫ টাকা থেকে ৯০ টাকা, বাসমতি ৬০ টাকা থেকে ৬৫ টাকা, সম্পা কাটারী ৫৮ টাকা থেকে ৬০ টাকা, পাইজাম ৫০ টাকা থেকে ৫২ টাকা, জিরাশাইল ৪৮ টাকা থেকে ৫০ টাকা, খাটো জিরা ৪৫ টাকা থেকে ৪৮ টাকা, রঞ্জিত ৪০ টাকা থেকে ৪২ টাকা, বিআর আটাশ ৪৪ টাকা থেকে ৪৫ টাকা এবং স্বর্ণা ৩৮ টাকা থেকে ৪০ টাকায় কেনা বেচা হচ্ছে।

নওগাঁ পৌর ক্ষুদ্র চাল ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক উত্তর কুমার সরকার জানান, নুতন ধান বাজারে আসায় চালের দাম কমেছে। বাজারে বর্তমানে তেমন কেনা-বেচা নেই। জেলায় পুরোদমে ধান কাটা-মাড়াই শুরু হলে চালের বাজার আরো কিছুটা কমবে বলে আশা ব্যক্ত করেন তিনি।

জেলা চাল কল মালিক গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক ফরহাদ হোসেন চকদার জানান, কৃষকদের ধানের নায্য মূল্য নিশ্চিত করতে সরকার গত বছরের তুলনায় চলতি বছরে ধান ও চাল বেশি করে কিনছে। বর্তমান ধানের বাজার যদি অব্যাহত থাকে তাহলে আগামিতে কৃষকরা ধান চাষে আগ্রহী হবেন।

জেলা চাল কল মালিক গ্রুপের সভাপতি আলহাজ্ব রফিকুল ইসলাম রফিক জানান, সরকারী ভাবে চলতি বোরো মৌসুমে ৩৬ টাকা দরে ১০ লাখ মেট্রিকটন সিদ্ধ চাল, ৩৫ টাকা দরে দেড় লাখ মেট্রিকটন আতপ চাল মিলারদের কাছ থেকে এবং ২৬ টাকা দরে ৮ লাখ মেট্রিকটন কৃষকদের কাছ থেকে ধান ক্রয় কার্যক্রম শুরু হয়েছে। অপর দিকে নওগাঁর প্রায় ১২ শ’ চাতাল মালিকরা ধান কেনা শুরু করায় কৃষকরা তাদের উৎপাদিত ধানের নায্য মূল্য পাচ্ছেন। সরকারিভাবে বেশি করে কৃষকদের কাছে থেকে ধান ও মিলারদের কাছে থেকে চাল কেনায় বাজারে ধানের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে।

জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক জিএম ফারুক হোসেন পাটোয়ারী জানান, জেলায় মিলারদের কাছে থেকে ৪৯ হাজার ২৬০ মেট্রিকটন চাল ও ৬ হাজার ৫১ মেট্রিকটন আতপ চাল কেনা হবে। অপরদিকে কৃষকদের কাছে থেকে লটারি ও সদর উপজেলায় কৃষি এ্যাপসের মাধ্যমে সরাসরি ২৩ হাজার ২৩২ মেট্রিকটন ধান কেনা করা হবে।

নওগাঁ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক সিরাজুল ইসলাম জানান, চলতি মৌসুমে নওগাঁ ১ লাখ ৮০ হাজার হেক্টর জমিতে বোরো ধান চাষের লক্ষ্যমাত্র নির্ধারণ করা হয়। কিন্তু আবহাওয়া অনুকূলে থাকায়, সার, তৈল স্বল্প মূল্য ও সরকারের কৃষি ভূর্তকী দেয়ায় আরো আড়াই হাজার হেক্টর বেশি জমিতে বোরো ধান চাষ হয়েছে।

তিনি আরও জানান, নওগাঁয় ১৬ ভাগ ধান কাটা মাড়াই শেষ হয়েছে। জেলায় চালে উৎপাদন নির্ধারণ ৭ লাখ ৩২ হাজার মেট্রিক টন ধরা হলেও ধানের বাম্পার ফলন হওয়ায় সাড়ে ৭ লাখ মেট্রিকটন চাল উৎপাদন হবে। এর মধ্যে চিকন জাতের ধান ১ লাখ ৪৬ হাজার হেক্টর জমিতে চাষ করা হয়েছে। চিকন জাতের ধান থেকে ৬ লাখ মেট্রিকটন চাল উৎপাদন ধরা হয়েছে। আর মোটা জাতের ৩৬ হাজার হেক্টর জমিতে চাষ করা হয়েছে। মোটা জাতের ধান থেকে দেড় লাখ মেট্রিক টনেরও বেশি চাল উৎপাদন হবে।

(বিএম/এসপি/মে ১১, ২০২০)

পাঠকের মতামত:

২৪ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test