E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

সম্পত্তি লিখে না দেয়ায় পিতাকে ঘরে আটকে রেখে অমানুষিক নির্যাতন  

২০২০ জুন ১০ ২৩:০৩:৫১
সম্পত্তি লিখে না দেয়ায় পিতাকে ঘরে আটকে রেখে অমানুষিক নির্যাতন  

স্টাফ রিপোর্টার, দিনাজপুর : দিনাজপুরে সম্পত্তি লিখে না দেয়ায় পিতাকে দীর্ঘ একমাস ঘরে আটকে রেখে অমানুষিক নির্যাতন করেছে নিজের দূই ছেলে। আর এই জঘন্যতম অমানবিক ঘটনায় সহায়তা করেছে, নিজের ভাই এবং ভাতিজা।  

এই ঘটনাটি ঘটেছে, দিনাজপুর সদর উপজেলার ফাজিলপুর ইউনিয়নের রানীপুর গ্রামে।

অবশেষে এলাকাবাসী ওই পিতা মোখলেছুর রহমানকে আজ বুধবার বিকেলে রক্তাক্ত অবস্থায় উদ্ধার করে দিনাজপুর কোতোয়ালি থানা নিয়ে আসে। থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (তদন্ত) বজলুর রশীদের পরামর্শে রক্তাক্ত পিতাকে দিনাজপুর এম আব্দুর রহিম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

সম্পত্তি ও বাজারের মার্কেট দুই ছেলের নামে লিখে না দেয়ায় একমাস ঘরে আটকে রেখে অমানুষিক নির্যাতনের অভিযোগে তার দুই ছেলে, ভাই ও ভাতিজার বিরুদ্ধে পুলিশকে অভিযোগ করেছে মো.মোখলেছুর রহমান(৫১) নামে ওই ব্যক্তি।

হাসপাতালে চিকিৎসাধীন মো. মোখলেছুর রহমান কান্নাজড়িত কণ্ঠে এই প্রতিবেদককে জানান, ‘আমার দুই সন্তান নাহিদ হাসান ও জাহিদ হাসান তাদের দুই চাচার সাথে হাত মিলিয়ে আমার প্রায় ৮০ লাখ টাকার সম্পত্তি লিখে নেওয়ার চেষ্টা করছে। আমার স্থানীয় রানীপুর বাজারে একটি মার্কেট ও প্রায় আড়াই একর জমি আছে। কিন্তু আমার ছেলে নাহিদ ও জাহিদ এবং আমার বড় ভাই মমিনুল ইসলাম, মেজভাই মাহবুব ও মাহবুব এর ছেলে মাহফুজুর রহমান এক হয়ে আমার বাজারের মার্কেট ও আড়াই একর জমি তাদের নামে লিখে দিতে বহুদিন ধরেই চাপ দিয়ে আসছিল।

তিনি আরও বলেন, ‘আমি মার্কেট ও জমি আমার সন্তানদের নামে লিখে না দেয়ায় তারা আমাকে একমাস ঘরে বন্দি করে অমানুষিক নির্যাতন চালিয়েছে। আমার আঙ্গুলের নখ তুলে নিয়েছে। আমার পায়ে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কোপ দিয়ে আমার পা কেটে ফেলেছে। আমি আমার সম্পত্তি তাদের নামে লিখে না দেয়ার কারণে আমাকে তারা গলায় দড়ি দিয়েও মেরে ফেলার চেষ্টা করেছে। আমাকে প্রায় বিষ এনে খাইয়ে মেরে ফেলার চেষ্টা করেছে আমার দুই সন্তান।

নির্যাতিত মোখলেছুর রহমান জানান, ‘আমার দুই ছেলে তার বড় চাচা মমিুনল ইসলাম ও মেজ চাচা মাহবুব এবং সেনাবাহিনীতে চাকরি করে আমার ভাতিজা মাহফুজুর রহমানের সাথে হাত মিলিয়ে এই কাজগুলো করছে। আমার ভাই এবং ভাতিজারাও আমাকে প্রচন্ডভাবে নির্যাতন করে আসছে। আমার পক্ষে পাড়া-প্রতিবেশিরা কেউ কথা বলতে এগিয়ে আসলে তাদেরকেও মারধর করার চেষ্টা করে। ভাগ্যক্রমে আজকে আমার পাড়তো এক ভাতিজাসহ কয়েকজন মিলে আমাকে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসে। আমি প্রশাসনের কাছে একটাই দাবি জানাচ্ছি, আমাকে নির্যাতনের বিচার চাই। আমার সন্তান ও ভাই-ভাতিজার বিচার দাবি করছি।’

দিনাজপুর কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (তদন্ত) বজলুর রশীদ ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, এক সাংবাদিকের মাধ্যমে ওই ব্যক্তিকে এলাকার কিছু মানুষ থানায় নিয়ে আসেন। সে সময় ওই ব্যক্তির ডান পায়ের হাঁটুর নিচ থেকে রক্ত গড়িয়ে গড়িয়ে নিচে পড়ছিলো। ডান হাতের আঙ্গুলের নখ এবং আঙ্গুল ফুলে ছিলো। তাই, তাকে আগে হাসপাতালে ভর্তির পরামর্শ দেয়া হয়।

ঘটনাটি অত্যন্ত দূঃজনক ও অমানবিক। এজন্য আইনগত ব্যবস্থাগ্রহণ করা হবে। ওই ব্যক্তিকে আমরা সহায়তা করবো।
হাসপাতালে চিকিৎসাধীন মোখলেছুর রহমান জানান, আমার বড় ছেলেকে দিনাজপুরের হলিল্যান্ড কলেজে ভর্তি করিয়েছিলাম। সেখানে পড়তে গিয়ে একটি মেয়েকে নিয়ে পালিয়ে যায়। আমার বড় ছেলে গত কয়েক বছরে ১১ লাখ টাকা নষ্ট করেছে। এখন আমার সম্পত্তি লিখে চাচ্ছে। আমার ছোট ছেলেকে হাফিজিয়া মাদ্রাসায় পড়িয়ে হুজুর বানিয়েছিলাম। কিন্তু আমার সন্তানেরা আজকে আমাকেই সম্পত্তির লোভে অমানুষিক নিযার্তন চালিয়েছে। আমাকে প্রতিবেশিরা উদ্ধার না করলে হয়ত আমাকে তারা মেরেই ফেলত!’

মোখলেছুর রহমানের প্রতিবেশি ভাতিজা মো. আবেদ আলী মানিক বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে তার দুই ছেলে ও ভাই-ভাতিজারা বাজারের মার্কেট ও সম্পত্তির লোভে মোখলেছুর চাচাকে ঘরে আটকে রেখে নির্যাতন করে আসছে। আজকেও নির্যাতন কররা সময় আমরা বেশ কয়েকজন এগিয়ে যাই। আমরা এগিয়ে গেলে আমাদের উপর তারা ক্ষিপ্ত হয়ে ইট দিয়ে ঢিল মারতে শুরু করে। আমাদের মধ্যেও কয়েকজনকে আঘাত করে রক্তাত্ব করে। কিন্তু আজকে মোখলেছুর চাচাকে আমরা সবাই মিলে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসি।’

এ বিষয়ে কোতয়ালি থানার ইন্সপেক্টর (তদন্ত কর্মকর্তা) বজলুর রশিদ বলেন, ‘এই ন্যাক্কারজনক ঘটনার জন্য অবশ্যই দোষীদের চরম শাস্তির আওতায় আনা হবে। একজন জন্মদাতা পিতাকে যারা অমানুষিক নির্যাতন করতে পারে তার আর যাইহোক প্রকৃত মানুষ হতে পারে না। আমরা অভিযোগের ভিত্তিতেই তাদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।

(এস/এসপি/জুন ১০, ২০২০)

পাঠকের মতামত:

১৯ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test