E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

পরিত্যক্ত টায়ার থেকে সাশ্রয়ী মূল্যের ‘গ্রীন ওয়েল’ দেশের জ্বালানী সংকটে  কার্যকর ভূমিকা রাখবে

২০২০ জুন ২২ ১৫:৫২:৩৬
পরিত্যক্ত টায়ার থেকে সাশ্রয়ী মূল্যের ‘গ্রীন ওয়েল’ দেশের জ্বালানী সংকটে  কার্যকর ভূমিকা রাখবে

ইমাম উদ্দিন সুমন, নিজস্ব প্রতিবেদক : আপনি জানেন কি, পরিত্যক্ত টায়ার হতে নবায়নযোগ্য সাশ্রয়ী মূল্যের বিকল্প জ্বালানী 'গ্রিন অয়েল' জ্বালানী সংকট মোকাবেলায় কার্যকর ভুমিকা রাখবে, সম্ভব হবে বিদ্যুৎ উৎপাদন!

আসুন জেনে নেই, অতিমূল্যবান এই গ্রিন অয়েল সম্পর্কে।

ট্রাক বাস ও গাড়ীর চাকা সচল রাখার জন্য প্রয়োজন টায়ার, আর টায়ার যখন অচল হয়, পরিত্যক্ত করা হয় তখন এই পরিত্যক্ত টায়ার কি কাজে ব্যবহার হয় আমরা কি তা জানি?

দৈনিক কি পরিমান টায়ার পরিত্যক্ত হয়, আর এই টায়ার কোথায় কি কাজে ব্যবহার হয়, তাও কি আমরা জানি?
এই টায়ার প্রকাশ্যে সংগ্রহ করে কোথায় নেয়া হচ্ছে তাও কি আমরা জানি?

আমরা কি জানি, একটা বর্জ্য পলিথিন ৩০০ বছরেও মাটিতে মিশে না, আর #একটা_বর্জ্য_টায়ার_৫০০_বছরেও মাটিতে মিশে না??

আমরা কি জানি, ফেলে রাখা পরিত্যক্ত টায়ারে বৃষ্টির পানি জমে থাকলে, এডিস মশার বংশ বৃদ্ধি পায়???

প্রতি দিন ঢাকা শহরসহ সারা দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে এক শ্রেনীর ফড়িয়া ব্যবসায়ীরা সংগ্রহ করছে পুরাতন টায়ার, তার পর বিক্রয় করা হয় ঢাকার আশেপাশের ইট ভাটায়, ইট পোড়ানোর কাজে খুব ভাল জ্বালানী হিসাবে ইট ভাটার মালিকরা অনেক চড়া দামে ক্রয় করে ইট পোড়ানোর জন্য চুল্লিতে নিক্ষেপ করেন। বিশেষজ্ঞদের ভাষ্যমতে, ইট ভাটার কালো ধোঁয়ার কারনে আমাদের শরীরে সৃষ্টি হচ্ছে ক্যান্সার, টিউমার এর মত মারত্বক রোগ।

প্রতি বছর বাংলাদেশে প্রায় ৯০ হাজার টন ট্রাক, বাস ও মটর গাড়ীর টায়ার পরিত্যাক্ত হচ্ছে।

ট্রাক বাসের উক্ত পরিত্যাক্ত টায়ার এতদিন শুধু ইটের ভাটায় সরাসরি পোড়ানো হোত, যা কিনা ভয়াবহ রকম পরিবেশ দূষন করে।

ইটের ভাটায় কয়লার পরিবর্তে পরিত্যাক্ত টায়ার সরাসরি পোড়ানোর ফলে যে হাজার হাজার টন বিষাক্ত কালো ধোঁয়া নির্গত হয় তা পরিবেশ ও মানব স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর।

ট্রাক বাসের এই সকল পরিত্যাক্ত টায়ার থেকে সাশ্রয়ী মূল্যের “গ্রীন ওয়েল” নামক নবায়নযোগ্য পরিবেশ বান্ধব বিকল্প জ্বালানি তেল উৎপাদন করে দেশের চলমান জ্বালানি সংকট মোকাবেলা করা সম্ভব।

বৈজ্ঞানিকভাবে_অবাতজারনপদ্ধতি নামক একটি বিশেষ তাপ-রাসায়নিক প্রক্রিয়ায় অক্সিজেনের অনুপস্থিতিতে বিশেষভাবে নির্মিত রি-এ্যাক্টর চেম্বারে বায়ুশূন্য মাধ্যমে বিশেষ তাপমাত্রায় বর্জ্য রাবারকে গলিয়ে বাষ্পে পরিনত করে এবং উক্ত বাষ্পকে কনডেনসার বা শীতলীকারক ব্যবহার করে তরলে পরিনত করে এই “গ্রীন ওয়েল” উৎপাদন করা হয়, যা সম্পূর্ণভাবে পরিবেশ ও প্রকৃতিবান্ধব আধুনিক প্রযুক্তিতে উৎপাদন করা হয়।

আধুনিক বৈজ্ঞানিক প্রযুক্তিতে অক্সিজেনের অনুপস্থিতিতে “গ্রীন ওয়েল” উৎপাদন করা হয় বিধায়, এই প্রক্রিয়ায় কোন প্রকার #বিষাক্ত_অক্সাইড, বিশেষ করে #সালফার_ডাই_অক্সাইড গ্যাস সৃষ্টি হয় না....

উৎপাদিত এই তেলের মান আমদানীকৃত ফার্নেস ওয়েলের চেয়ে ভালো। আমদানীকৃত ফার্নেস ওয়েল ভিত্তিক বিদ্যূৎ উৎপাদন কেন্দ্রে সাশ্রয়ী মূল্যের নবায়নযোগ্য জ্বালানি “গ্রীন ওয়েল” ব্যবহার করে বিদ্যূৎ উৎপাদন খরচ কমানো সম্ভব হবে, সেই সাথে মূল্যবান বৈদেশিক মুদ্রাও বাঁচানো সম্ভব হবে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে “গ্রীন ওয়েল” ব্যবহার করে বিদ্যূৎ উৎপাদন করা হয়

গ্যাস সংকটের কারনে যে সকল কারখানার মালিকগন উচ্চ মূল্যের ফার্নেস ওয়েল ব্যবহার করছেন তারাও এই “গ্রীন ওয়েল” নামক সাশ্রয়ী মূল্যের জ্বালানি ক্রয় করে তাদের পন্যের উৎপাদন খরচ কমাতে পারেন।

গত দুই যুগেরও বেশী সময় ধরে উন্নত বিশ্বের দেশগুলোতে এই প্রযুক্তিটি নিয়ে ব্যাপকভাবে গবেষণা হয়েছে এবং বর্তমানে এটি বিভিন্ন দেশে বানিজ্যিকভাবে উৎপাদিত হচ্ছে। বাংলাদেশ রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের যন্ত্রকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ রফিকুল ইসলাম ও উক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি মহোদয়সহ বাংলাদেশের অনেক অধ্যাপক এই প্রযুক্তিকে একটি প্রশংসনীয় উদ্যোগ হিসাব মন্তব্য করেছেন।

“গ্রীন ওয়েল” উৎপাদনের লক্ষ্যে ভারতে প্রায় ১৬০০ টি ও গণচীনে প্রায় ২২৫০ টি প্লান্ট স্থাপিত হয়েছে। বর্তমানে আমাদের দেশেও ঢাকা, বগুড়া, সিলেট ও নোয়াখালীতে বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানে আমদানীকৃত প্লান্টে সরকারের বিভিন্ন কর্তৃপক্ষ হইতে প্রয়োজনীয় #লাইসেন্স_অনুমোদন_ও_ছাড়পত্র গ্রহন করে পরিবেশ ও প্রকৃতি বান্ধব নবায়নযোগ্য সাশ্রয়ী মূল্যের বিকল্প জ্বালানি “গ্রীন ওয়েল” উৎপাদিত হচ্ছে।

ইটের ভাটায় অবৈধভাবে ট্রাক বাসের পরিত্যাক্ত টায়ার পোড়ানোর ফলে সৃষ্ট ভয়াবহ দূষন জনিত কারনে গ্রীন হাউস প্রতিক্রিয়া থেকে রক্ষা পেতে এবং চলমান জ্বালানি সংকট মোকাবেলায় পরিবেশ বান্ধব নবায়নযোগ্য সাশ্রয়ী মূল্যের বিকল্প জ্বালানি “গ্রীন ওয়েল” কার্যকর অবদান রাখতে পারবে।

ইটের ভাটায় অবৈধভাবে পরিত্যাক্ত টায়ার পোড়ানো বন্ধে ও শত শত সরকারী যানবাহনের পরিত্যাক্ত টায়ার ইটের ভাটায় বিক্রির বিরুদ্ধে সোচ্চার হই, রুখে দাঁড়াই।

(ওএস/এসপি/জুন ২২, ২০২০)

পাঠকের মতামত:

১৯ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test