E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

কামাননগরের ভূমিদস্যু টাক বাবুর দাপটে দিশেহারা জমির মালিক ও সাধারণ মানুষ

২০২০ জুন ২২ ১৮:০১:৩৩
কামাননগরের ভূমিদস্যু টাক বাবুর দাপটে দিশেহারা জমির মালিক ও সাধারণ মানুষ

রঘুনাথ খাঁ, সাতক্ষীরা : সাতক্ষীরা শহরের কামাননগর বৌবাজার এলাকার ভূমিদস্যু নূরুজ্জামান ওরফে টাকা বাবুর জালিয়াতি ও প্রতারণার শিকার হয়ে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে জমির মালিক ও সাধারণ মানুষ। এক সময়কার বেপরোয়া জামায়াত কর্মী নাশকতার মামলার আসামী হয়েও এখন নব্য আওয়ামী লীগার সেজে অন্যের জমি জবরদখলের চেষ্টা ও প্রতারণা করে যাচ্ছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

সোমবার সকালে সরেজমিনে শহরের বৌবাজার এলাকায় গেলে মোহাম্মদ আলী, আজিজুল ইসলাম, আব্দুর রাজ্জাক, আব্দুল হালিমসহ কয়েকজন জানান, শ্যামনগর উপজেলার ভুরুলিয়া ইউনিয়নের চালতেঘাটা থেকে ১৯৯২ সালে সাতক্ষীরা শহরের কামাননগর বৌবাজার এলাকায় স্বপরিবারে বসবসা শুরু করেন দিনমজুর মান্দার সরদার। ১৯৯৬ সালে বীজ ব্যবসায়ি আহম্মদ আলীর কাছ থেকে চার কাঠা জমি কেনেন তিনি। সেখানে কোন প্রকারে বাড়ি বানিয়ে নুরুজ্জামান ওরফে টাক বাবুসহ ছেলে মেয়েদের নিয়ে বসবাস করতেন তিনি। প্রাইমারী স্কুলের গণ্ডি পার হওয়া টাক বাবু ঘরবাড়িতে রং এর কাজ করতো। বিয়ে করে সদরের বালিয়াডাঙায়। তিন মেয়ে ও এক ছেলে তার। এর মধ্যে দু’ মেয়ের বিয়ে দিয়েছেন।

বর্তমানে মেঝ জামাতা ধুলিহরের সেন্টুর নামে তার (টাক বাবু) বাড়িতে কাশফুল গ্রাম উন্নয়ন সমিতি (রেজি নং-৮২) পরিচালিত করেন। আর টাক বাবু সাতক্ষীরা পৌরসভার জমি কেনা বেচার একটি ব্যবসায়ি লাইসেন্স এর মাধ্যমে দালালির পাশাপাশি ভূমিদস্যু বাহিনী গঠণ করে অনিয়ম ও দূর্ণীতির মাধ্যমে অন্যের জমি জবরদখল ও দখলের চেষ্টা করে যাচ্ছেন। জমি কেনা বেচার মাধ্যম হিসেবে কাজ করার জন্য টাক বাবু সঙ্গীতা মোড়ের কবরখোলা রোডে আশরাফ সরদারের মালিকানাধীন একটি দোকান ঘর মাসিক সাড়ে চার হাজার টাকা ভাড়া নিয়ে ভিতরে মোজাইক টাইলস বসিয়ে দৃষ্টিনন্দন ডেকরেশন করেছেন।

পৈতৃক বাড়িতে কোটি টাকা ব্যয় কওে বিলাসবহুল বানিয়ে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন স্থানীয়দের। তবে তার এত আয়ের উৎস কি এবং তিনি কোন আয়কর দেন কিনা সে সম্পর্কে নিশ্চিত করতে পারেননি স্থানীয়রা। তবে স্থানীয়দের দাবি ২০১৪ সালে নাশকতা ও সরকার বিরোধী কর্মকাণ্ডের অভিযোগে সাতক্ষীরা সদর থানায় দায়েরকৃত পুলিশের মামলার চার্জশীটভুক্ত আসামী জামায়াতের সক্রিয় কর্মী টাক বাবু। পরিস্থিতি বুঝে জেলা আওয়ামী লীগের এক প্রভাবশালী নেতাকে ম্যানেজ করে একাধিক পুলিশ কর্মকর্তার সঙ্গে সখ্যতা গড়ে তুলে তিনি নিজের অনিয়ম ও দূর্ণীতিকে জাহেজ করছেন। এখন তিনি নব্য আওয়ামী লীগার।

রসুলপুরের উলফাতুন আরা খানম এর কাছ থেকে তার ভাই আযম খানের সহযোগিতায় গত বছর ২ জানুয়ারি, ৮ জানুয়ারি ও ২৬ ফেব্রুয়ারি তিনটি ষড়যন্ত্রমূলক আমমোক্তার নামার মাধ্যমে শহরের ৫৮ শতক জমি জবরদখলের চেষ্টার অভিযোগ রয়েছে টাক বাবুর বিরুদ্ধে। তাকে পরিকল্পিত সাক্ষী রিয়াজ, তুহিন মাহমুদ ও নজরুল ইসলাম টুকুসহ কয়েকজনকে সনাক্তকারী হিসেবে দেখানো হয়েছে। আমমোক্তারনামায় ব্যবহৃত ছবি ও জাতীয় সনদপত্র টাক বাবু ও তার সহযোগীদের সংগৃহীত বলে দাবি করা হয়েছে।

চিকিৎসার জন্য টাকা নিয়ে অলিখিত নন জুডিশিয়াল স্ট্যাম্পে সাক্ষর করিয়ে টাক বাবুর সহযোগী বাকালের আব্দুস সাত্তার ২০১৭ সালের ৩০ এপ্রিল উলফাতুন আরা খানমের জমি আমমোক্তারনামা বানিয়ে দখলের চেষ্টা করছেন। এসব নিয়ে পৃথম মামলা ও আদালতের নিষেধাজ্ঞা রয়েছে টাক বাবু ও তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে। এ ছাড়া বাংলা মোটর এর স্বত্বাধিকারী পলাশপোলের তমেজউদ্দিন সরদারের নিষেধাজ্ঞাপ্রাপ্ত জমি থেকে( দেঃ ৭৩/১৯) গত বছরের ১৪ জুন সাত শতক জমি জোরপূর্বক দখল করে তার উপর স্থাপনা নির্মাণের চেষ্টার অভিযোগ রয়েছে টাক বাবু, তার সহযোগী কুকরালির সালাম ও মধুমোল্লারডাঙির নজরুল ইসলাম টুকুর বিরুদ্ধে।

স্থানীয়রা আরো জানান, অনিয়ম ও দূর্ণীতির মাধ্যমে কোন কাগজপত্র ছাড়াই হাবিব আহসান পটলের সাড়ে তিন বিঘা জমি ও চেরি খানের মেয়ের কাছ থেকে অনিয়মের মাধ্যমে তৈরি করা আমমোক্তারনামার (বর্তমানে মেয়াদউত্তীর্ণ আমমোক্তারনামার) মাধ্যমে একরামুল কবীর খানের পক্ষে গত ২৭ জানুয়ারি হাইকোর্টের নিষেধাজ্ঞা থাকার পরও প্রায় আট বিঘা জমি জবরদখলের চেষ্টা করে যাচ্ছেন টাক বাবু ও তার বাহিনীর সদস্যরা।

ভুক্তভোগী মুরগি বিক্রেতা আজিজুল ইসলাম, বৌবাজার এলাকার এক আইনজীবীর বাড়ির ভাড়াটিয়া মায়া, অহেদ আলী, চা বিক্রেতা আজিবর রহমান, দিনমজুর শাহজাহানসহ ১১জন জানান, জমি কেনার জন্য টাক বাবুর কাছে তারা এক বছর আগে টাকা দিয়েছেন। ওইসব জমি নিয়ে আদালতে নিষেধাজ্ঞা থাকায় তাদের জমি লিখে দিচ্ছে না টাক বাবু। টাকা ফেরত চাইতে গেলে নানাভাবে সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন তারা। গৃহপরিচারিকা রাবেয়াকে জমি দিলেও রাস্তা না থাকায় আবারো ১০ হাজার টাকা দাবি করেছেন টাক বাবু।

টাক বাবুর ভুয়া পাওয়ারনামা মূলে দাবিকৃত জমি দেখিয়ে তা বিক্রির কথা বলে কমপক্ষে ৩০ জনের কাছ থেকে দু’কোটি টাকারও বেশি লুটে নিয়েছেন টাকা বাবু বলে দাবি ক্ষতিগ্রস্তদের। এক সময়কার জামায়াত কর্মী হয়ে নাশকতার মামলা খেলেও টাক বাবু এখন নব্য আওয়ামী লীগার।

জানতে চাইলে নুরুজ্জামান ওরফে টাক বাবু ওরফে পাওয়ার বাবু নিজেকে জমি কেনা বেচার কাজ করার সাথে জড়িত থাকার বিষয় স্বীকার করে সাংবাদিকদের বলেন, তিনি জমির প্রকৃত মালিকদের কাছ থেকে আমমোক্তারনামা নিয়ে জমির মালিকানা দাবি করেছেন। এ নিয়ে মামলা চলতে পারে। যারা নিজেদের স্বজনদের জমি থেকে বঞ্চিত করেছে তাদের বিরুদ্ধে অবস্থান তার। তবে যারা জমি কেনার জন্য তার কাছে চুক্তিবদ্ধ হয়েছেন তাদের জমি দিতে না পারলে অবশ্যই টাকা ফিরিয়ে দেবেন। তার বিরুদ্ধে প্রতারণা, অনিয়ম ও দূর্ণীতির অভিযোগ ঠিক নয়।

(আরকে/এসপি/জুন ২২, ২০২০)

পাঠকের মতামত:

১৬ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test