E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

ধামইরহাটে ১৪ কৃষকের হত্যা দিবস আজ

২০১৪ আগস্ট ১৩ ১৬:৩৩:৩৪
ধামইরহাটে ১৪ কৃষকের হত্যা দিবস আজ

নওগাঁ প্রতিনিধি : নওগাঁ জেলার সীমান্তবর্তী ধামইরহাট উপজেলাকে পাকিস্থানী হানাদার বাহিনীর হাত থেকে স্বাধীন করতে যারা নিজের প্রাণ বিসর্জন দিয়েছেন, তাদের নাম শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করে এখনো এলাকার মানুষ। 

পাকি হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে যখন এলাকার মানুষ একজোট হয়ে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে থাকে ঠিক তখনি উপজেলার সীমান্তবর্র্তী কুলফৎপুর গ্রামে পাকি হানাদার বাহিনী নারকীয় হত্যাযজ্ঞ চালিয়ে ১৪ জন নিরীহ দরিদ্র কৃষককে ব্র্যাশ ফায়ারের মাধ্যমে হত্যা করে। সেই থেকে দিনটি উপজেলাবাসীর কাছে শোক দিবস হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে। উমার ইউনিয়ন পরিষদ থেকে দীর্ঘদিন আগে শহীদ ১৪ কৃষকের নামের তালিকা সম্বলিত একটি ফলক স্থাপন করা হলেও সেখানে আজও গড়ে তোলা হয়নি কোন স্মৃতি সৌধ।
পাকি হানাদার বাহিনী এলাকার নিরীহ মানুষের ওপর যে নির্মম অত্যাচার আর নারকীয় হত্যাযজ্ঞ, নারী ধর্ষণ, অগ্নি সংযোগ চালিয়ে যে বিভীষিকাময় পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছিল, তার জবাব দিতে এলাকার বীর মুক্তিযোদ্ধারা সাধারণ মানুষের সহযোগিতায় তাদের অধিকার ছিনিয়ে নিয়ে ধামইরহাট উপজেলাকে স্বাধীন করেছিল। সেই অকুতোভয় যোদ্ধাদের সঙ্গে সহযোগিতা করতে গিয়ে প্রাণ দিতে হয়েছিল ১৪ জন সাধারণ মানুষকে।
১৯৭১ সালের ১৪ আগষ্ট। এই দিনে ধামইরহাটে পাকি হানাদার বাহিনী ১৭ জনকে গ্রাম থেকে ডেকে এনে লাইন করে দাঁড় করিয়ে রেখে স্বয়ংক্রিয় মেশিনগানের ব্রাশ ফায়ারের মাধ্যমে ১৪ জন কৃষককে হত্যা করে। ৩ জন ভাগ্যক্রমে বেঁচে যান। উপজেলার সীমান্তবর্র্তী কুলফৎপুর গ্রামে এই নারকীয় হত্যাযজ্ঞ চালানো হয়।
গ্রামের প্রবীন ব্যক্তিরা জানান, পাকি হানাদার বাহিনী এদেশীয় রাজাকার, আলবদর, আল্ শামস্ বাহিনীর সহযোগিতায় ভারতের কোলঘেঁষে বাংলাদেশের কুলফৎপুর গ্রামে ৭১’ এর ১৪ আগষ্ট বেলা সাড়ে ১১ টার দিকে পুরো গ্রামটিকে ঘিরে ফেলে। গ্রামবাসী আগে থেকে কিছুই আঁচ করতে পারেনি। গ্রাম থেকে একে একে তরতাজা যুবকদের ধরে নিয়ে গ্রামের পূর্ব পাশে পুকুরের কাছে লাইন করে দাঁড় করিয়ে ব্রাশ ফায়ার চালানো হয়। এতে ঘটনাস্থলে ১৪ জন নিরীহ কৃষক নিহত হন। সেই বিভীষিকাময় দিনে যারা প্রাণ হারিয়েছেন তারা হলেন, আমজাদ হোসেন, চাঁনমদ্দীন, কছিমদ্দিন, ছয়েফ উদ্দিন, আফতাব হোসেন, আয়েজ উদ্দিন, মতিবুল হোসেন, আব্বাস আলী, রহিম উদ্দিন, ফয়জুল ইসলাম, তমির উদ্দিন, তমিজ উদ্দিন (বিজু), আবেদ আলী ও অবির উদ্দিন। আব্দুল মান্নান, মজির উদ্দিন, সবেদ আলী ওই দিন ভাগ্যক্রমে বেঁচে যান। আব্দুল মান্নান এখনও জীবিত রয়েছেন। সেই থেকে ১৪ আগষ্ট ওই গ্রামের জন্য একটি বেদনা বিধুর স্মৃতি হয়ে আছে। যে স্থানে ১৪ জন কৃষককে হত্যা করা হয়েছিল, সেই স্থানে আজও কোন প্রকার স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করা হয়নি। বর্তমানে জায়গাটি গো-চারণ ক্ষেত্র হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। দেশ স্বাধীন হওযার প্রাক্কালে মুক্তিযোদ্ধা ও মিত্র বাহিনীর মুহুর্মুহু আক্রমণে উপজেলার আগ্রাদ্বিগুন, মাহীসন্তোষ গড়, ফার্শিপাড়া ক্যান্টনমেন্ট, ধামইরহাট থানা ভবন, হরিতকীডাঙ্গা নয়াপুকুর, পাগলা দেওয়ান ক্যান্টনমেন্ট এলাকায় অবস্থানরত শক্তিশালী পাকি বাহিনীর ভীত কেঁপে ওঠে। তারা বিভিন্ন অস্ত্র ও খাকি পোশাক ফেলে সিভিল পোশাক পরে পালাতে শুরু করে। সে সময় গ্রামবাসী অনেক পাকি বাহিনীর সদস্যকে পিটিয়ে হত্যা করে। ১৯৭১ সালের ১২ ডিসেম্বর ধামইরহাট উপজেলা পাক হানাদার মুক্ত হয়। দীর্ঘ ৪৩ বছর পার হলেও স্বাধীনতার জন্য যারা আত্মাহুতি দিয়েছিলেন, তাদের কবরগুলো আজ গোচারণ ভূমিতে পরিণত হয়েছে। তাছাড়া নিহতের পরিবারগুলোর প্রতি খোঁজও নিতে আসেনি কেউ। ওই গ্রামগুলোতে কুকুর শিয়ালের ডাক আর নারী কণ্ঠের বিলাপ শুধু ভেসে বেড়ায়। প্রতি বছর স্বাধীনতা ও বিজয় দিবস সরকারীভাবে পালিত হলেও যারা স্বাধীনতার জন্য প্রাণ বিসর্জন দিয়েছেন তাদের শেষ স্মৃতিটুকু রক্ষা করতেও কেউ এগিয়ে আসেনি। এব্যাপারে এলাকার প্রবীণ সাংবাদিক মুক্তিযোদ্ধা মোজাম্মেল হক বলেন, স্বাধীনতার ৪৩ বছর পরও ওই স্থানে শহীদ স্মৃতিস্তম্ভ নির্মিত না হওয়ায় আমরা জাতি হিসেবে লজ্জিত। ধামইরহাট মুক্তিযোদ্ধা সংসদের নব নির্বাচিত কমান্ডার আব্দুর রউফ বলেন, শহীদদের স্মৃতি রক্ষার্থে মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এব্যাপারে ধামইরহাট উপজেলা নির্বাহী অফিসার হেমায়েত উদ্দিন বলেন, বিষয়টি আমার জানা ছিলনা। স্বাধীনতা যুদ্ধে এরকম একটি বেদনা বিধুর স্থানে আবশ্যই শহীদদের স্মৃতি রক্ষার্থে প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এলাকাবাসী মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের এই বেদন বিধূর স্থানটি যথাযথভাবে সংরক্ষণ করার জন্য সরকারের প্রতি জোর দাবি জানান।
(বিএম/এএস/আগস্ট ১৩, ২০১৪)

পাঠকের মতামত:

০৮ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test