E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

চালক মনিরুল হত্যা : আটকের ১০ দিন পর রমজানকে আদালতে সোপর্দ

২০২০ জুলাই ১১ ২৩:০৪:০৪
চালক মনিরুল হত্যা : আটকের ১০ দিন পর রমজানকে আদালতে সোপর্দ

রঘুনাথ খাঁ, সাতক্ষীরা : আইনপ্রয়োগকারি সংস্থার সদস্য পরিচয়ে ধরে নিয়ে যাওয়ার ১০ দিন পর গ্রেপ্তার দেখানো রমজান আলীকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ৫ দিনের রিমাণ্ড আবেদন জানিয়ে অবশেষে শনিবার সকাল ১১টায় আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে।

রমজান আলী (৩৮) সাতক্ষীরার কালিগঞ্জ উপজেলার নলতা ইউনিয়নের সোনাটিকারী গ্রামের শহর আলী সরদারের ছেলে।

এদিকে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে যাওয়ার পর আইন প্রয়োগকারি সংস্থার সদস্যরা মনিরুল হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকা ও ইজিবাইক উদ্ধারের স্বীকারোক্তি আদায়ের নামে যে নির্যাতন চালিয়েছে তা জজ মিয়া নাটককে হার মানিয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

শনিবার সাতক্ষীরা আদালত চত্বরে নিজের স্বজন ও সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার সময় রমজান আলী জানান, একজন সার্কেল পর্যায়ের একজন প্রশাসনিক কর্মকর্তার নেতৃত্বে গত ৩০ জুন দিবাগত রাত একটার দিকে তাকে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে দেবহাটা থানায় আনা হয়। সেখানে স্বীকারোক্তি আদায়ের নামে চোখ বেঁধে পুরুষাঙ্গসহ দু’ কান ও শরীরের বিভিন্ন স্থানে ইলেকট্রিক শক দিয়ে অমানুষিক নির্যাতন চালানো হয়।(বক্তব্য রেকডিং)। পরদিন বুধবার রাতে তাকে চোখ বেঁধে ক্রমফায়ারে দেওয়া হবে একটি নির্জন জায়গায় নিয়ে হাত ও পা বেঁধে ফেলে দেওয়া হয়।

এ সময় সেখানে টর্চের আলো অনুভব করেন। শুনতে পান দু’টি গুলির আওয়াজ। পরে তাকে সাতক্ষীরার একটি গোয়েন্দা সংস্থার কার্যালয়ে আনা হয়। সেখানেও স্বীকারোক্তি আদায়ের নামে তাকে চোখ বেঁধে নির্যাতন করা হয়। গত ৭ জুলাই মঙ্গলবার রাতে তাকে দেবহাটা থানায় আনা হয়। সেখানে স্বীকারোক্তি আদায়ের নামে মামলার তদন্তকারি কর্মকর্তা তার উপর নির্যাতন করেন।

পরে মনিরুলের গাড়ি উদ্ধার দেখাতে একটি ভাঙড়ি ইজিবাইক যোগাড় করে সেটি সাঈদুর রহমান রাজুর বাড়ির পাশে পাওয়া যাবে বলে জনগনের সামনে বলার জন্য শিখিয়ে দেওয়া হয়। সেজন্য শুক্রবার সকালে তাকে কামটা গ্রামের একটি পুকুর পাড়ে হেলমেট পরিয়ে আনা হয়।কিন্তু মনিরুল হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার কোন প্রমান না মেলায় পরে তাকে ছেড়ে দেওয়ার কথা বলা হয়। কিন্তু বিষয়টি জানাজানি হলে ঘটনা অন্য দিকে মোড় নিতে পারে ভেবে তাকে শনিবার সকালে পাঁচ দিনের রিমাণ্ড চেয়ে আদালতে পাঠানো হয়। আদালতে আসার আগে পুষ্পকাটি মাঠের পাশে তাকে নামিয়ে ভয় দেখিয়ে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি রেকর্ড করা হয়। তার উপর যে শারীরিক নির্যাতন চালানো হয়েছে তাতে তিনি সারা জীবনের জন্য কর্মশক্তি হারিয়ে ফেলতে হবে বলে আশঙ্কা করছেন।

এদিকে দেবহাটার দেবীশহর ফুটবল মাঠের পার্শ্ববর্তী কয়েকজন বাসিন্দা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, গত পহেলা জুলাই রাত আনুমানিক ১১টার দিকে প্রশাসনের তিনটি গাড়ি দাইবুড়ির ঘেরের শ্মশানঘাটের দিকে যেতে দেখেন। কিছুক্ষণ পর শ্মশানঘাট এলাকায় দু’ রাউণ্ড গুলির শব্দ শুনতে পান তারা।

তবে আদালত চত্বরে উপস্থিত থাকা দেবহাটার একজন জনপ্রতিনিধি ও আওয়ামী লীগ নেতা সাংবাদিকদের বলেন, এটা যেন জজ মিঞা নাটককে হার মানানোর মত নাটক সাজানো হয়েছে। চেয়ারম্যান মুজিবর ও মেম্বর আরমানের নাটকের শেষ পরিণতি অবশ্যই দেখতে পাবেন সাতক্ষীরাবাসি।

গ্রেপ্তারকৃত রমজানের ভাই আফফান বলেন, তারা আইনি লড়াই চালিয়ে যাবেন। ৩০ জুন তাকে ধরে নিয়ে যাওয়ার পর কয়েকটি পত্রিকায় প্রতিবেদন ছাপা হয়েছে। পুলিশের দ্বারে দ্বারে ঘুরেছেন তারা। তার ভাইয়ের উপর যে নির্যাতন করা হয়েছে তা আল্লাহ বিচার করবেন।

তবে দেবহাটা থানার পুলিশ পরিদর্শক শনিবার বিকেলে সাংবাদিকদের মোবাইল ফোনে রমজানের উপর পুলিশের পক্ষ থেকে কোন নির্যাতনের কথা অস্বীকার করে বলেন, ১০ জুলাই সকালে রমজানকে গাজীরহাট বাসস্টাণ্ড এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। তার স্বীকারোক্তি অনুযায়ি কামটা গ্রামের কৌশিক সেনগুপ্তের পুকুর তেকে ইজিবাইকের তিনটি চাকা, একটি হ্যাণ্ডেল ও একটি ছাউনি উদ্ধার করেন। তবে সেটি মনিরুলের কিনা সেটা নিয়ে তিনি কোন সদুত্তর দিতে পারেননি। রমজানকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পাঁচ দিনের রিমাণ্ড আবেদন জানিয়ে শনিবার সকালে আদালতে পাঠানো হয়েছে।

প্রসঙ্গত, ২৫ জুন রাতে বাড়ি ফিরে না আসা শিমুলিয়া গ্রামের ইজিবাইক চালককে ২৬ জুন সকালে দেবহাটার কামটা গ্রামের মিঠুর রাইস মিলের পাশ থেকে তার লাশ দেখে জনতা পুলিশে খবর দেয়। এ ঘটনায় নিহতের ভাই আমিনুর রহমান ২৬ জুন রাতে কারো নাম উল্লেখ না করে থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।

এ ঘটনায় পুলিশ ২৭ জুন নিহতের স্ত্রী রাবেয়া, নিহতের শ্বাশুড়ি ফতেমা ও কামটা গ্রামের সাঈদুর রহমান রাজুকে আটক করে। পরবর্তীতে একই এলাকার সুমন, আব্দুর রশীদ ও মামা জহুরুল হকের বাড়িতে থাকা আশাশুনির বসুখালি গ্রামের আব্দুর রাজ্জাককে আইনপ্রায়াগকারি সংস্থার সদস্য পরিচয়ে আটক করে। পহেলা জুলাই দুপুরে রশীদকে দেবহাটা থানা থেকে ও রাতে পাওয়ার হাউজ মোড় ধেকে সুমন ও রাজ্জাক মুক্তি পায়। ৭ জুলাই বিকেলে মুক্তি পায় ফতেমা।।

(আরকে/এসপি/জুলাই ১১, ২০২০)

পাঠকের মতামত:

২৪ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test