E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

শিরোনাম:

চট্টগ্রাম বিভাগে শ্রেষ্ঠ তদন্তকারী কর্মকর্তার পুরস্কার পেলেন এসআই সালাহ উদ্দিন

২০২০ জুলাই ২১ ১৬:০০:২৬
চট্টগ্রাম বিভাগে শ্রেষ্ঠ তদন্তকারী কর্মকর্তার পুরস্কার পেলেন এসআই সালাহ উদ্দিন

নোয়াখালী প্রতিনিধি : চট্টগ্রাম বিভাগে শ্রেষ্ঠ তদন্তকারী কর্মকর্তার পুরস্কার পেলেন চর জব্বার থানার এসআই মোঃ সালাহ উদ্দিন।

তিনি কুমিল্লার কচুয়ার কৃত্বি সন্তান, একটি ক্লু লেস মামলার রহস্য উদঘাটন করায় বৃহস্প্রতিবার সকালে সিভিক সেন্টার, পুলিশ লাইন্স, চট্টগ্রামে, চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি খোন্দকার গোলাম ফারুক, বিপিএম(বার) এ পুরস্কার তুলে দেন, ২০১৯ সালের নভেম্বরের ৩ তারিখের একটি মামলার তদন্তভার পালনের জন্য এই স্বীকৃতি পান।

পুকুরে ভেসে থাকা এক নারীর মরদেহ আর একটি মোবাইল কল :

বাড়ির পাশে ছোট্ট পুকুর। সময়টা সকাল ১১ টা হতে পারে। এক নারীর দেহ ভাসছে । কেউ দেখে নি। দেখলো ওই নারীর (ছদ্মনামঃ রাবেয়া) মেয়ে। চিৎকার শুনে ছুটে এল আশেপাশের সবাই। না বেচে নেই আর। মেয়েটির মা মারা গেছে। কান্নাকাটিতে বাতাস ভারী হয়ে যাচ্ছে। সবাই বলছে পুকুরে পা পিছলে পড়ে গিয়ে মারা যায় মা। অন্য কোন কারণ খুজে পাওয়া গেল না।

ঘনটাস্থলে পুলিশ আসলো। সবার ভাষ্যমতে দূর্ঘটনা হলেও পুলিশের মনে খটকা থেকে ই গেল। যদিও কোনো ক্লু পাওয়া যাচ্ছে না। তদন্তকারী কর্মকর্তা এস আই সালাউদ্দিন। খুজতে থাকেন কোনো ক্লু পাওয়া যায় কিনা? সবাইকে জিজ্ঞাবাদের পরেও কোনো ধারনা পাওয়া যাচ্ছে না। জানামতে কোন শত্রু ও নেই।

অনেক চেষ্টা করেও যখন কোনো অপরাধ বা অপরাধীর সন্ধান মিলল না তখন টেকনোলজির সহায়তায় খোজ করা শুরু করলেন তদন্তকারী কর্মকর্তা। মৃত মহিলার মোবাইল চাওয়া হলো। মোবাইল নম্বরে সর্বশেষ কল টি ধরে তদন্ত শুরু হচ্ছে। সে নম্বরে কল দেয়া হলো। না সেই মোবাইলটি বন্ধ। তাই সন্দেহ হলো ! এবার এ ক্লু ধরেই এগুতে হবে। পুলিশের মনে খটকা আরো বাড়তে লাগলো। মোবাইলের সকল তথ্য সংগ্রহ করা হলো। কিন্তু পাওয়া যাচ্ছে অন্য রকম তথ্য। যে মোবাইল নম্বর থেকে শেষ কলটি এসেছিল সেই সিমটিও মৃত ব্যাক্তির নামে ই রেজিস্ট্রেশন করা। অবস্থানও কাছাকাছি জায়গায়। তাহলে কে এই মোবাইল ব্যবহারকারী, যিনি মৃত মহিলার নামে ই রেজিস্ট্রেশন করা সিম ব্যবহার করছেন এবং মহিলার সাথে মারা যাওয়ার আগে শেষবার কল ও করেছিলেন ? এমনকী শেষ কলটিও সময়ও মারা যাওয়ার অনুমানকৃত সময়ের কিছুক্ষন আগেই।

কিন্তু সিম তো একই নামে রেজিস্ট্রেশন করা। এ অবস্থায় পরবর্তী তদন্ত কী হতে পারে ভাবছেন তদন্তকারী কর্মকর্তা এস আই সালাউদ্দিন। না, থেমে যায় নি তদন্ত। হতেও পারে এটি হত্যাকান্ড! এবার কল লিস্ট (সিডিআর) বিশ্লেষণ করা হচ্ছে, প্রতিটি কল দেখা হচ্ছে। কোন না কোনো সম্পর্ক তো অবশ্যই আছে। রহস্য আরো ঘনীভুত হচ্ছে। আরো অদ্ভুত তথ্য পাওয়া যাচ্ছে। সেই মোবাইল নম্বর থেকে শুধু এই ভিকটিমকেই কল করা হতো!! অন্য কোনো নাম্বারে কল করা হতো না। একের পর এক অনুসন্ধানী প্রচেষ্টা হেরে যাচ্ছে। হয়তো অপরাধী খুবই চালাক নয়তো এটি নিছকই একটি দূর্ঘটনা। তবুও আশা ছেড়ে দেয়া যাবে না।

আরো পূর্ববর্তী সময়ের কল রেকর্ড নেয়া হচ্ছে । এবার একটি ছোট্ট ক্লু পাওয়া গেল। শুধুমাত্র একটি কল ই করা হয়েছিল অন্য একটি নম্বরে। সেই নম্বরের ব্যাক্তিকে খোজা শুরু হলো। অপরাধী যতই চালাক হোক না কেন? কোনো না কোনো ক্লু ও সে ছেড়ে যাবেই। পাওয়া গেল অন্য একজন মহিলার নাম যাকে কল করা হয়েছিল সন্দেহকারীর মোবাইল থেকে । তাকে কৌশলে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। কারণ ধারণা করা হচ্ছে অপরাধী আশে পাশে ই আছেন। তদন্ত হচ্ছে জানতে পারলে ই হয়তো পালাবেন। কিন্তু এ ভদ্র মহিলা বলছেন সেটি রং নম্বর ছিল! আবারো আশাহত হতে হলো। কিন্তু আরো একটু চেষ্টা করা যাক। ওই মহিলাকে আরো জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে । শেষে স্বীকার করলেন একটা ছেলে কল দিয়েছিল। শুধু একবার ই কল দিয়েছিল এই নম্বর থেকে।

কিন্তু ছেলেটির আরো সিম আছে। অন্য সিম থেকে এই মহিলার সাথে যোগাযোগ করে ছেলেটি। অবশেষে পাওয়া গেল সন্দেহের ব্যাক্তির নাম।

কে এই ছেলে? কী ধরনের যোগাযোগ ছিল মৃত মহিলার সাথে? কেন ই বা কল দিত মহিলা কে??

খোজা শুরু হলো সেই ব্যাক্তিকে। তদন্তে পাওয়া যায় ব্যক্তিটি (ছদ্মনামঃ তামিম) মৃত মহিলার পাশের বাড়ির ই ছেলে।মহিলার বাড়িতে তার আসা যাওয়া ছিল। কিন্তু কেন মেরে ফেলল, নাকি দূর্ঘটনা। কিন্তু ঘটনার দিন ও মৃত দেহ পাওয়ার পর অন্য সবার মতো সে ও ছুটে আসে। লাশ কবর দেয়া পর্যন্ত সে সবসময় ই ছিলো। এরপর কিছুদিন পর থেকে আর তাকে দেখা যায় নি। কেন পালালো সে? কীসের ভয় তার? এরপর অপরাধীকে খোজার পালা। অনেক কৌশল এবং অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে অবশেষে অপরাধীকে গ্রেফতার করা হয়।

জানা গেল নেপথ্যের গল্প ! মহিলাটি বিধবা। ৩ (তিন) সন্তানের জননী। মহিলার সাথে ছেলেটির প্রণয়ের সম্পর্ক ছিল। অনেকদিন থেকেই যোগাযোগ। ঐ মহিলাটি ই ছেলেকে সিমটি দিয়েছিল। একই নামে রেজিস্ট্রেশন করা সিম থেকে কথা বলে। যেন আলাদা ট্রেস করা না যায়। যথেষ্ট বুদ্ধিমান এই ছেলিটি। ঘটনার দিন সকালে ছেলেটির সাথে উক্ত মহিলার কথা কাটাকাটি হয় পুকুর পাড়ে।

পুকুর পাড়ের আসার জন্যই কল দিয়েছিল ছেলেটি। এক সময় হাতাহাতি পর্যায়ে পৌছে যায়। ছেলেটি ওড়না দিয়ে গলা পেছিয়ে ধরে মহিলার। তাতেই কিছুক্ষণ পর মৃত্যু হয় মহিলাটির। লাশ পানিতে ফেলে চলে যায় ছেলেটি।

ভেবেছিল হয়তো কেউ জানবে না! হয়তো তাই হতো! কিন্তু এস আই সালাউদ্দিনের অসীম ধৈর্য্য ও মেধায় সত্য বেরিয়ে আসে। এভাবেই বিচারের সম্মূখীন হতে হয় অপরাধীকে। ধন্যবাদ তদন্তকারী কর্মকর্তাকে। এ ক্লুলেস হত্যাকান্ডটির রহস্য উম্মোচনের জন্য। এভাবেই সকল অপরাধীকে খুজে বের করে সমাজকে অপরাধ মুক্ত করতে ভুমিকা রেখে যায় পুলিশ।

(এস/এসপি/জুলাই ২১, ২০২০)

পাঠকের মতামত:

২৭ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test