E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

প্রাণী সম্পদের পশু পরীক্ষায় নেওয়া হচ্ছে উৎকোচ 

রাণীশংকৈল কাতিহার হাটে অতিরিক্ত হাসিল আদায়ের অভিযোগ

২০২০ জুলাই ২৫ ১৭:৩১:৫৯
রাণীশংকৈল কাতিহার হাটে অতিরিক্ত হাসিল আদায়ের অভিযোগ

খুরশিদ আলম শাওন, রাণীশংকৈল : পবিত্র ঈদ উল আযহাকে পুজি করে ঠাকুরগাঁওয়ের রাণীশংকৈল কাতিহার হাটে অতিরিক্ত হাসিল(ইজারা) আদায়ের অভিযোগ পাওয়া গেছে।

অভিযোগ উঠেছে উপজেলা হাট বাজার ইজারা কমিটির সভাপতি ও ইউএনও মৌসুমী আফরিদা অতিরিক্ত ইজারা আদায় ব্যাপার নিয়ে অজ্ঞাত কারণে কোন ব্যবস্থায় নিচ্ছেন না। অপরদিকে পশুর বর্তমানে ভাইরাসজনিত ল্যাম্পি স্কিন রোগে আক্রান্ত গরু সনাক্ত ও গাভী পশুর পেটে বাচ্চা থাকা না থাকার সনাক্তের জন্য গরু প্রতি উৎকোচ আদায়ের অভিযোগ উপজেলা প্রাণী সম্পদের মেডিক্যাল ক্যাম্প টিমের বিরুদ্বে পাওয়া গেছে। যদিও এ সেবাটি সম্পূর্ণ বিনামূল্য দেওয়ার বিধান রয়েছে।

ঐতিহ্যবাহী এ কাতিহার হাট সপ্তাহের প্রতি শনিবার হাটের নিজস্ব জমিতে বসে। হাটে গরু ছাগল সাইকেলসহ বিভিন্ন ভোগ্য পণ্যের হাসিল অতিরিক্ত নেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ হাটের ক্রেতা বিক্রেতাদের। তবে কোরবানি ঈদের কারণে কাতিহার উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে গরুর বাজারটি এবারে বসানো হয়েছে।

শনিবার সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, জেলা প্রশাসনের গবাদিপশুসহ বিভিন্ন পণ্যের হাসিল আদায়ের নির্ধারিত দরের সাথে বাস্তবের কোন মিল নেই। হাটে বিপুল সংখ্যাক গরু ছাগল সহ মানুষজনের ভিড়। কেউ গরু কেউ বা ছাগল কিনছে। কেউ আবার বিক্রি করছে। তবে ভোগান্তিরও শেষ নেই ক্রেতা বিক্রেতাদের। হাটে বিপুল সংখ্যাক গরু ছাগল থাকলেও হাসিল জেলা প্রশাসনের নির্ধারিত দরে নেওয়া হচ্ছে না।

হাটে গরু ছাগলের অনন্ত ছয়জন ক্রেতা অভিযোগ করে বলেন সরকারীভাবে গরু প্রতি টোল ২৩০ টাকা হলেও ইজারাদার নিচ্ছে ৩০০ টাকা। ছাগল ৯০ টাকা হলেও ১৩০ টাকা দরে আদায় করা হচ্ছে। এদিকে সাইকেলের ইজারা ১১০ টাকা হলেও আদায় করা হচ্ছে ২৫০ টাকা। সাইকেলের একজন পাইকার নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বলেন, আমরা যারা পাইকার তারা সাইকেল প্রতি হাসিল দেয় ৬০ টাকা বাধ্যতামুলক। আর যারা ক্রেতা তারা দেয় ২৫০ টাকা।

তাহলে সাইকেলের হিসাব দাড়ালো ক্রেতা বিক্রেতা মিলে ৩১০ টাকা। অথচ একজন সাইকেল ক্রেতা শুধুমাত্র ১১০ টাকা হাসিল দেওয়ার কথা। অথচ হাট ইজারাদার এখানে ক্রেতা বিক্রেতা দুজনের কাছেই অনিয়মভাবে জোর র্পূবক অতিরিক্ত হাসিল আদায় করছে। এছাড়াও ধানসহ বিভিন্ন খোলাবাজারের দোকানিদের কাছে অনৈতিকভাবে বেশি হাসিল আদায় করা হচ্ছে বলে বিভিন্ন সুত্রে জানা গেছে। এর প্রতিকারে কোন ব্যবস্থা নেই উপজেলা প্রশাসনের বলে অভিযোগ ক্রেতা বিক্রেতাদের।

পীরগঞ্জ উপজেলার গড়গাঁও গ্রামের গরু ক্রেতা মুনসুর অভিযোগ করে বলেন,গত মাসে একটি গরু কিনে ইজারাদারকে জমা (হাসিল) দিয়েছিলাম ২৫০টাকা। আর এখন একটি গরু কিনে দিতে হলো ৩০০ টাকা। গতবার দিয়েছিলাম ২০ টাকা বেশি এবার দিলাম পুরো ৭০ টাকা বেশি। তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন সব জায়গায় ডাকাতি নিয়ন্ত্রণের জন্য মনে হয় কেউ নেই। সাধারণ মানুষ আমরা বড় অসহায়।একইভাবে গরু ছাগল ক্রেতা আনিসুল জব্বার রিপনসহ উপস্থিত অনেকে বলেন,সাংবাদিকরা আসে ভিডিও করে সংবাদপত্রে প্রকাশ করে। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয় না।

ইজারাদারদের প্রকাশ্যে ডাকাতি কেউ রুখতে পারবে না। বর্তমানে করোনা ভাইরাসের কারণে এমনি মানুষের অভাবে দিন যাচ্ছে। অথচ ঠিক এসময় ইসলাম ধর্মের কোরবানি ঈদ অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। আর ঈদকে পুজি করে ইজারাদার হাসিল আদায় বাড়িয়ে দিয়েছে। যা সর্ম্পুণ অনৈতিক। প্রশাসনের সার্বিক পর্যবেক্ষণ ও সঠিক ব্যবস্থাপনার অভাবে ইজারাদার এ সুযোগ পেয়েছে। জেলা প্রশাসনের হাসিল(ইজারা) আদায়ের তালিকা ঘেটে দেখা যায়, সরকারী ভাবে ইজারা দেওয়া হাটে নিয়োগকৃত ইজারাদার গরু প্রতি ২৩০ টাকা ছাগল প্রতি ৯০ টাকা সাইকেল প্রতি ১১০টাকা আদায় করবে। অথচ প্রশাসনের দেওয়া দর উপেক্ষা করে আদায় করা হচ্ছে অতিরিক্ত হাসিল।

বাংলা ১৪২৭ সন অথ্যাৎ এক বছরের জন্য হাট ইজারা নেয় পীরগঞ্জ উপজেলা এলাকার বিশিষ্ট ব্যবসায়ী গোলাম আজম। তিনি গতকাল শনিবার মুঠোফোনে বলেন,বিগত ইজারাদার ২৭০ টাকা করে গরু প্রতি ইজারা আদায় করে এসেছে। আমি তাই আদায় করছি। এটা সবাই জানে উপজেলা প্রশাসনেও জানে। হাটে ইজারা সরকারী দর থেকে বেশি নেওয়ার বিষয়টি প্রশাসনসহ সকলের অবগত। এটা নিয়ে নতুন করে বলার কিছু নেই। আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন গরু প্রতি তিনশত টাকা নেওয়ার বিষয়টি আপনাদের মাধ্যমে জানলাম,আপনারা রশিদের কপিটি সংরক্ষন রাখেন আমি ব্যবস্থা নিব।

এদিকে গবাদিপশুর ল্যম্পি স্কিন পরীক্ষা গাভী গরুর পেটে বাচ্চা থাকা না থাকা পরীক্ষা নিরীক্ষা করার জন্য অস্থায়ী মেডিক্যাল ক্যাম্প বসানো হয়েছে। উপসহকারী প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা রামকৃষ্ণ দেব সর্মার নেতৃত্ব এবং এআই টেকনিসিয়ান নজরুল ইসলাম ও এলএসপি রহিমেরসহ বেশ কয়েকজন প্রাণী সম্পদ অফিসের ব্যক্তিদের তত্বাবধানে কার্যক্রম চলছে। তবে সেখানে গাভী গর্ভবতী গরু পরীক্ষার জন্য ১০০ টাকা হারে উৎকোচ নেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

দায়িত্বরত কর্মকর্তা রামকৃষ্ণ দেব সর্মা টাকা নেওয়ার সত্যতা স্বীকার করে বলেন, এ কাজটি আমাদের ক্যাম্পের কার্যক্রমের মধ্যে পড়ে না।ওরা আলাদা তাই নিচ্ছে।

এ বিষয়ে বক্তব্য নিতে উপজেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা চিকিৎসক রায়হান আলীর মুঠোফোনে গতকাল শনিবার একাধিকবার ফোন দিলেও তিনি ধরেন নি।

উপজেলা নিবার্হী অফিসার মৌসুমী আফরিদা শনিবার মুঠোফোনে বলেন, হাটে এমন অনিয়ম হলে ইজারাদারের বিরুদ্বে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

(কেএ/এসপি/জুলাই ২৫, ২০২০)

পাঠকের মতামত:

২৪ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test