E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

করোনায় উত্তাপ নেই কামারের হাপরে

২০২০ জুলাই ২৮ ১৫:৪৬:১৪
করোনায় উত্তাপ নেই কামারের হাপরে

স্টাফ রিপোর্টার, দিনাজপুর : করোনাভাইরাসের মহামারিতে আসন্ন ঈদ-উল আযহা’র ভরা মৌসুমেও কামার সম্প্রসারের জীবন-যাত্রা যেনো থমকে গেছে। হাতে কাজ না থাকায় কামারশালায় ভাপের আগুনের আর উত্তাপ নেই আগের মতো।কোরবানি ঈদকে সামনে রেখে হাঁসা, চাপাতি, বটি, দা, ছুঁরি, চাকুসহ নানা ধরনের লোহার জিনিস তৈরী করলেও বিক্রিও নেই তাতে।নানা সংকটে তাদের পরিবারগুলো মানবেতন জীবন যাপন করছে।কাজের ভরা মৌসুমেও অনেকে বাপ-দাদার পেশা ছেড়ে অন্য পেশায় জড়িয়ে।

আগের মতো আর অবিরাম ঠুং ঠাং শব্দ নেই, কামারপল্লীতে। কর্মকারের নেই আর আগের মতো কর্মচঞ্চল্য বা ব্যস্ততা।ভোরবেলা থেকে গভীর রাত পর্যন্ত আর উত্তাপ নেই, হাপরের। আগের মতো আর বেচা-বিক্রিও নেই তৈরী জিনিসের। এমন দুঃসংবাদ মিললো সরজমিনে জেলার কামার পল্লীগুলো ঘুরে।

শহরের উত্তর বালুবাড়ি কুমারপাড়া কামার পল্লীর শিল্পি (কারিগর) সচিন বর্মন জানালেন, অনেকেই এখন বাপ-দাদার এই আদি পেশা ছেড়ে অন্য পেশায়।কেউ দিন মজুর কেউ অটো রিক্সা চালক হিসেবে কাজ করছেন। কেউ কেউ আবার অভাব-অনটনের মধ্যেও আদি পেশা’র ঐতিহ্য ধরে আছেন। কিন্তু, আগের মতো আর কাজ নেই। বিক্রি নেই, তৈরী জিনিস-পত্রের। অভাবেই চলছে,তাদের সংসার।

শুধু সচিন বর্মন নয়, দিনাজপুরের অধিকাংশ কামার সম্প্রদায়ের একই অবস্থা। দিনাজপর জেলা শহরের বালুবাড়ী কুমার-কামারপাড়া,বিরলের কাঞ্চনঘাট, বোর্ডহাট, কালিয়াগঞ্জ, ঝুকুরঝাড়ি, কাহারোলের হাট, বকদুরের হাট, বলেয়াবাজার, বীরগঞ্জের কবিরাজ হাট, পার্বতীপুরের ভবাইনগর, চিরিরবন্দররের বিন্নাকুড়ি, খানসামার পাকের হাট, ঘোড়াঘাটের বানীগঞ্জ বাজার, নবাবগঞ্জের ভাদুরিয়া, চড়ারহাটসহ জেলার ১৩টি উপজেলায় প্রায় ১৫ হাজার পরিবার জড়িত ছিলো এই কামার পেশায়। সাড়া বছর না হলেও কোরবানি ঈদকে সামনে রেখে দু’মাস ব্যস্ত সময় পার করতো কামারেরা। ঠুং ঠাং শব্দে ঘুম ভাংতো এলাকাবাসীর। কিন্তু, এখন ভরা মৌসুমেও কাজ নেই তাদের। করোনাভাইরাসের মহামারিতে থমকে গেছে তাদের জীবন-যাত্রা।

পুঁজির অভাবে বছরের অন্য সময় ব্যাবসা ভাল করতে না পারলেও এই সময়টাতে প্রতিবছর কাজ আসে তাদের। কামারপল্লীতে ফিরে আসে কর্মচাঞ্চল্য। হাঁসা, চাপাতি, বটি, দা, ছুঁরি, চাক, কাচি নিড়ানি, ট্যাঙ্গীসহ অন্যান্য তৈরী লোহার জিনিস এ সময় বিক্রিও হতো ভালো। কিন্তু, এবার থমকে গেছে,তাদের কর্মকান্ড। করোনা পরিস্থিতেতে মানুষের আনাগোনা নেই কামারপল্লীতে।অনেকে পশু কোরবানি দেয়ার সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করায় আর ক্রয় করছেনা হাঁসা, বটি, দা, ছুঁরি, চাকু। অর্থ কষ্টসহ নানা সংকটে পরিবারগুলো মানবেতর জীবন যাপন করছে। জীবন-যুদ্ধে অনেকে এখন এই বাপ-দাদার পেশা ছেড়ে অন্য পেশায় ঝুকছে।

ঐতিহ্যবাহী এই কামার শিল্প হারিয়ে যাওয়ার কথা স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরাও ভাবছেন। বিবল উপজেলা ১০ নং রানীপুকুর ইউপি’র চেয়ারম্যান মো. ফারুক আ্রম জানান,তার এলাকার অধিকাংশ কামার শিল্পীদের করুণ দশা। মানববেতর জীবন যাপন করছেন, এই কামার সম্প্রদায়ের পরিবারগুলো। তিনি ব্যক্তিগত উদ্যোগে তাদের অনেককে সহায়তার চেষ্টা করেও তা কুলিয়ে উঠতে পারছেন না।সরকারিভাবে সহায়তার মাধ্যমে তাদের পূণর্বাসন করা প্রয়োজন বলে তিনি মন্তব্য করেছেন।

তিনি বলেন, সরকারিভাবে এই কামার সম্প্রদায়কে আর্থিক সহায়তা করা না হলে এই ঐতিহ্যবাহী শিল্প হারিয়ে যাবে। কোরবানি ঈদের ভরা মৌসুমেও তারা ভালো নেই,তাদের হাতে কাজ না থাকায় এবং তৈরিকৃত মালামাল বিক্রি না হওয়ায়। কারণ হিসেবে তিনি জানান,করোনার এই মহামারিতে অনেকেই কোনবানি দিতে পারছেন না। সামর্থ থাকা সর্ত্বেও অনেকে পরিস্থিতি বিবেচনা করে কোরবানি দিচ্ছেন না। তাই, কামারের শিল্পজাত হাঁসা, চাপতি, বটি, দা, ছুঁরি, চাকুসহ নানা ধরনের লোহার জিনিস তৈরি ও বিক্রি কমে গেছে।

সরজমিনে বেশ কয়েকটি কামার পল্লী ঘুরে দেখা গেছে, করোনা পরিস্থিতে আসন্ন কোরবানি ঈদের ভরা মৌসুমেও থমকে গেছে, কামার সম্প্রদায়ের জীবন-যাত্রা। হাতে কাজ না থাকায় আগের মতো আর উত্তাপ নেই তাদের ভাপের আগুনে। নানা সংকটে মানবেতর জীবন যাপন করছে এই কামার সম্প্রদায়ের পরিবারগুলো। এ অবস্থা অব্যাহত থাকলে ঐতিহ্যবাহী এই কামার শিল্প বিলুপ্ত হওয়ার আশংকাই করছেন,ঐতিহ্যধারক সংশ্লিষ্টরা।

(এস/এসপি/জুলাই ২৮, ২০২০)

পাঠকের মতামত:

০৮ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test