E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

বিশ্ব বাঘ দিবস আজ 

২০২০ জুলাই ২৯ ০০:২৭:৩০
বিশ্ব বাঘ দিবস আজ 

শেখ আহসানুল করিম, বাগেরহাট : আজ ২৯ জুলাই বিশ্ব বাঘ দিবস। বাংলাদেশসহ বাঘের বসবাস এমন দেশগুলোতে আজ বিশ্ব বাঘ দিবস পালিত হচ্ছে। বাংলাদেশে এবার ‘বাঘ বাড়াতে করি পন, রক্ষা করি সুন্দরবর’ এই প্রতিপাদ্যতে সামনে রেখে বন বিভাগ সুন্দরবনের ৪টি রেঞ্জে করোনার কারনে স্বস্থ্যবিধি মেনে সিমিত আকারে আলোচনা সবায় আয়োজন করেছে। সুন্দরবন অংশে গত ৩ বছরে বাঘের সংখ্যা ১০৬ থেকে বেড়ে বর্তমানে ১১৪ হয়েছে। অর্থাৎ ৩ বছরে সুন্দরবনের বাঘ বেড়েছে ৮টি। গত বছরের ২২ মে সর্বশেষ বাঘ জরিপে সুন্দরবনে ১১৪ বাঘ রয়েছে বলে ক্যামেরা ট্রাকিং জরিপে উঠে এসেছে। সুন্দরবনে চোরা শিকারীদের দৌরাত্ব কম হওয়ায় রয়েল বেঙ্গল টাইগার বা বাঘের সংখ্যা বেড়েছে বলে জানিয়েছে সুন্দরবন বিভাগ।

ওয়ার্ল্ড হ্যারিটেজ সাইড সুন্দরবনের বাংলাদেশ অংশের আয়তন ৬ হাজার ১৭ বর্গকিলোমিটার। গত বছরের ২২ মে সর্বশেষ বাঘ জরিপে সুন্দরবনে ১০৬ থেকে বেড়ে বর্তমানে বাঘের সংখ্যা দাড়িয়েছে ১১৪ টিতে। ২০০১ সাল থেকে এপর্যন্ত বন বিভাগের হিসেবে ৫৩টি বাঘের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে স্বাভাবিক ভাবে মারা গেছে মাত্র ১৫টি। লোকালয়ে ঢুকে পড়া ১৪টি বাঘকে পিটিয়ে মেরেছে স্থানীয় জনতা, একটি নিহত হয়েছে ২০০৭ সালের সুপার সাইক্লোন সিডরে ও বাকী ২৫ বাঘ হত্যা করেছে চোরা শিকারীরা। অধিক মুনাফার আশায় বাঘের অঙ্গ-প্রতঙ্গ, চামড়া, হাড়, দাত,নখ পাচার ছিল নিত্য দিনের ঘটনা । আর এটি দেশ ও দেশের বাইরে চলে যেত চোরকারবারী সিন্ডিকেটের মাধ্যমে। তবে আশার খবর হচ্ছে সুন্দরবনে একের পর এক বনদস্যুদের আতœসর্মাপনে বাঘ নিধন কমে এসেছে। সুন্দরবনে চোরা শিকারি পাশাপাশি বাঘের আবাসস্থল ক্ষতিগ্রস্ত হবার কারনে হুমকির মুখে রয়েছে বাঘ। পাশাপাশি বিশ্বব্যাপী জলবায়ু পরিবর্তন ও বৈশ্বিক উষ্ণায়নে বাড়ছে সমদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা।

এ অবস্থায় হারিয়ে যেতে পারে সুন্দরবনের রয়েল বেঙ্গল টাইগার। ২০৭০ সালের মধ্যে বাংলাদেশে বাঘের জন্য কোনো উপযুক্ত জায়গা থাকবে না। কেননা, বিশ্বের তাপমাত্রা ক্রমাগত বৃদ্ধিসহ উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন সুন্দরবনে টিকে থাকা কয়েক শত বাঘ বিলীন হওয়ার জন্য যথেষ্ট। এই অবস্থায় সুন্দরবনে বাঘের আবাসভূমি এখন চরম হুমকির মুখে পড়েছে। সুন্দরবনে একসময় চোরা শিকারী আর বনদস্যুদের হাতে একের পর এক বাঘ নিধন হতো। তবে, ২০০৮ সাল থেকে এপর্যন্ত সুন্দরবন ও লোকালয়ে বাঘের হামলায় ২ শতাধিক মানুষ মারা যায় ও প্রায় এক শত জেলে-বনজীবী আহত হয়েছে বলে বন বিভাগ সুত্রে নিশ্চিত হওয়া গেছে।

তবে, আশার কথা হলো বর্তমানে সুন্দরবন সুরক্ষাসহ বাঘের প্রজনন, বংশ বৃদ্ধিসহ অবাধ চলাচলের জন্য গোটা সুন্দরবনের আয়তনের ২৩ ভাগ থেকে ৫১ ভাগ এলাকাকে সংরক্ষিত বন হিসেবে ঘোষনা করা হয়েছে। এতে করে বাঘের প্রজনন, বংশ বৃদ্ধিসহ বাঘ অবাধ চলাচলের ব্যবস্থা নেয়ায় বাঘ কিছুটা হলেও স্বস্তির মধ্যে রয়েছে।
খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের জীববিজ্ঞান ও সাইক্লোজী বিভাগের ডিন প্রফেসর একে ফজলুল হক বলেন, তিনি বলেন, বাঘ কমার অন্যতম কারন চোরা শিকারী ও বনদস্যুদের দ্বারা বাঘ নিধন। বাঘের মূল্য অনেক বেশী। তাই দ্রুত চোরা মার্কেটে চলে যাচ্ছে। সুন্দরবনের বাঘের সংখ্যা বাড়াতে আবাস স্থল খাবার ও প্রজনন নির্বিঘ্নে ও নিরাপদ নিশ্চিত করা প্রয়োজন। সুন্দরবনে বাঘ কমে যাবার অন্যতম কারন চোরা শিকারি। এজন্য বন বিভাগকে দায় স্বীকার করতে হবে।

বন ভবনের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (প্রশানস) ডিএফও মো. মাহমুদুল হাসান জানান, বাঘের সংখ্যা বাড়াতে তাদের বিচরন ও প্রজনন নিবিঘ্ন করতে প্রজনন মৌসুমের ৩ মাস পর্যটন বন্ধের ষিদ্ধান্ত নিতে নিচ্ছে বন বিভাগ। বর্তমানে বাঘ মারা যাচ্ছেনা। বর্তমানে সুন্দরবন পাহারায় স্মার্ট প্রেট্রোলিং টিম কাজ করছে। এতে করে সুন্দরবনে প্রজনন, বংশ বৃদ্ধিসহ বাঘ অবাধ চলাচল করতে পাবে।

প্রধান বন সংরক্ষক (সিসিএফ) মো. আমীর হোসাইন চৌধূরী জানান, সুন্দরবনে বনদস্যুদের আত্মসর্ম্পপন করে স্বাভাবিক জীবনে ফেরা ও চোরা শিকারীদের দৌরাত্ব কম হওয়ায় রয়েল বেঙ্গল টাইগার বা বাঘের সংখ্যা সর্বশেষ জরিপে বেড়েছে। ইতিমধ্যেই বাঘের প্রজনন, বংশ বৃদ্ধিসহ অবাধ চলাচলের জন্য গোটা সুন্দরবনের আয়তনের ২৩ ভাগ থেকে ৫১ ভাগ এলাকাকে সংরক্ষিত বন হিসেবে ঘোষনা করা হয়েছে। এতে করে বাঘের প্রজনন, বংশ বৃদ্ধিসহ বাঘ অবাধ চলাচলের ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। বাঘ রক্ষায় বন বিভাগের পাশাপাশি কোস্টগার্ড ও র‌্যাব তৎপর রয়েছে।

(এসএকে/এসপি/জুলাই ২৯, ২০২০)

পাঠকের মতামত:

২৪ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test