E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

ভুয়া জমির মালিকসহ দালাল চক্র গ্রেফতার

২০২০ জুলাই ৩০ ১৮:০২:১৬
ভুয়া জমির মালিকসহ দালাল চক্র গ্রেফতার

ইন্দ্রজিৎ কুমার সাহা, কালিয়াকৈর (গাজীপুর) : কালিয়াকৈরে ভুয়া মালিক সাজিয়ে জমি দলিলের চেষ্টার অভিযোগে মঙ্গলবার বিকেলে জালিয়াত চক্রের চার সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। আর জালিয়াতির মাধ্যমে এভাবেই কোটিপতি বনে যাচ্ছেন কিছু অসাধু দলিল লেখক ও ভুমি জালিয়াতি চক্ররা। এতে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন জমির দলিল করতে আসা লোকজন।

দলিল দাতা-গ্রহিতা, পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, গত মঙ্গলবার বিকেলে কালিয়াকৈর উপজেলা দলিল লেখক সিরাজুল ইসলামের সেরেস্তায় হৈচৈ গোলমাল শুরু হয়। খবর পেয়ে অন্য দলিল লেখক ও কালিয়াকৈর থানা পুলিশ সেখানে হাজির হন। প্রাথমিক তদন্তে একে একে বেড়িয়ে আসে জালিয়াতির তথ্য।

জানা যায়, উপজেলার মধ্যপাড়া ইউনিয়েনের কুয়ারচালা মৌজার ৯০ শতাংশ জমি জালিয়াতির মাধ্যমে আম-মুক্তার নামা দলিলের সম্প্রাদনের চেষ্টা করা হচ্ছিল। যার সরকারি মুল্য প্রায় দেড় কোটি টাকা। ওয়ারিশ সূত্রে ওই জমির প্রকৃত মালিক কফিল উদ্দিন, তার বোন রিজিয়া বেগম ও আছিয়া বেগম। কিন্তু জমসের মিয়াকে কফিল উদ্দিন, সাহানা বেগমকে রিজিয়া বেগম ও আছিয়া বেগমকে মোসা: বেগম ভুয়া জমির মালিক সাজানো হয়।

পরে দলিল লেখক সিরাজুল ইসলামের সেরেস্তায় বসেই দু-ধাপে চার লক্ষ টাকা আদান-প্রদান করা হয়েছে। মঙ্গলবার দুপুরে ওই দলিল লেখকের সেরেস্তায় কোনো রকম ভোটার আইডি কার্ড ছাড়ায় আম-মুক্তার নামা দলিল লেখাও হয়েছে। সেখানে দলিল গ্রহিতা ও ভুয়া মালিক ও স্বাক্ষীগণের স্বাক্ষরও গ্রহণ করা হয়। এসয়ম দলিল গ্রহিতা মোহাম্মদ আলী কানু ও আবুল কালাম মোহাম্মদ জহিরুল হকের সন্দেহ হলে জমির মালিকগণের ভোটার আইডি কার্ড দেখতে চান। কিন্তু তারা তা দেখাতে পারে নাই।

সেখানে গোলমাল হলে পুলিশ জমসের, জুয়েল, সাহানারা, মোসা: বেগম নামে জালিয়াত চক্রের চার সদস্যকে গ্রেপ্তার করে। এসময় দলিল লেখক সিরাজুল ইসলামসহ অন্য আসামীরা কৌশলে সেখান থেকে পালিয়ে যেতে সক্ষম হন। এ ঘটনায় জমি গ্রহিতা মোহাম্মদ আলী কানু বাদী হয়ে দলিল লেখক সিরাজুল ইসলামসহ ৯ জনের নাম উল্লেখ করে কালিয়াকৈর থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। বুধবার দুপুরে গ্রেপ্তারকৃত জালিয়াতির সদস্যদের গাজীপুর জেল হাজতে পাঠানো হয়েছে।

এর আগের ওই দলিল লেখক বিরুদ্ধে ভূমি জালিয়াতি চক্রের সাথে যোগসাজোস মাধ্যমে জমি জালিয়াতির একাধিক অভিযোগ রয়েছে বলেও উপস্থিত লোকজন জানিয়েছেন। এছাড়া একইভাবে উপজেলা দলিল লেখক সমিতির কিছু অসাধু সদস্য ভূমি জালিয়াতির চক্রের সাথে আততা করে বড়ইছুটি মৌজার ৫০০ বিঘা জমি জালিয়াতির মাধ্যমে বিক্রি করে কোটি কোটি হাতিয়ে নিয়েছে। এ ঘটনায় একাধিক মামলাও রয়েছে। আর জালিয়াতির মাধ্যমে এভাবেই কোটিপতি বনে যাচ্ছেন কিছু অসাধু দলিল লেখক ও ভূমি জালিয়াতি চক্ররা। এতে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন জমির দলিল করতে আসা লোকজন। এ থেকে পরিত্রান চান তারা।

গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন, গাজীপুর মহানগরের কাশিমপুর থানার বারেন্ডা গ্রামের মৃত মনাই মিয়ার ছেলে জমসের মিয়া (৭০), শেরপুর জেলার শ্রীবদী থানার কুরুয়া দক্ষিণপাড়া গ্রামের এমতাজ আলীর ছেলে জুয়েল মিয়া (৪০), টাঙ্গাইলের সদর থানার বেগুনটাল গ্রামের খসরু মিয়ার স্ত্রী সাহানা বেগম (৩৫), একই জেলার সখিপুর থানার টামাত গ্রামের বজরত আলীর স্ত্রী মোসা: বেগম (৪০)। এদের মধ্যে মোসা: বেগম হাসেন আলীর ভাড়াটে বলেও জানা গেছে।
ভূমি জালিয়াতি চক্রের শিকার মোহাম্মদ আলী কানু বলেন, তারা ভুয়া মালিক সেজে ৯০ শতাংশ জমির ৪০ লাখ টাকা ঠিক করেন। পরে ওই দলিল লেখকের অফিসে দুই ধাপে ৪ লাখ টাকাও দিয়েছি। আম-মুক্তার নামা দলিলের সময় সন্দেহ হলে পুলিশকে জানানো হয়েছে।

এ ব্যাপারে অভিযুক্ত দলিল লেখক সিরাজুল ইসলাম জানান, আমার অফিসে বসে টাকা-পয়সা লেনদেন হয়েছে। কিন্তু আমি দলিলে স্বাক্ষর করি নাই। এছাড়া আমার বিরুদ্ধে অন্য সব অভিযোগ মিথ্যা।

কালিয়াকৈর থানার ওসি (তদন্ত) রাজীব চক্রবর্তী জানান, ভূমি জালিয়াতি চেষ্টার ঘটনায় কালিয়াকৈর থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। এছাড়া ভুমি জালিয়াতির চক্রের চার সদস্যকে গ্রেপ্তারের পর গাজীপুর জেল হাজতে প্রেরণ করা হয়েছে।

(আইএস/এসপি/জুলাই ৩০, ২০২০)

পাঠকের মতামত:

১৯ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test