E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

শিরোনাম:

আশাশুনিতে কওমী মাদ্রসার ছাত্র-গ্রামবাসীদের সশস্ত্র তাণ্ডব : নিরাপত্তাহীনতায় মা ও মেয়ের পরিবার

২০২০ আগস্ট ০৯ ২৩:৩৪:০৩
আশাশুনিতে কওমী মাদ্রসার ছাত্র-গ্রামবাসীদের সশস্ত্র তাণ্ডব : নিরাপত্তাহীনতায় মা ও মেয়ের পরিবার

রঘুনাথ খাঁ, সাতক্ষীরা : শুক্রবার সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলার তেতুলিয়া গ্রামের  কোহিনুর বেগম ও রোজিনা খাতুনের বাড়িতে কওমী মাদ্রাসার ছাত্র ও গ্রামবাসিদের মধ্যযুগীয় সশস্ত্র হামলার ঘটনার পর থেকে নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছে ওই দু’ পরিবারের সদস্যরা। এ ঘটনায় মামলার খবর পেয়ে হামলাকারিরা বিভিন্নভাবে হুমকি ধামকি অব্যহত রাখায় ভাঙা বাড়িতে তালা লাগিয়ে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে কখনো সাংবাদিক ও কখনো পুলিশের দ্বারে দ্বারে ঘুরে বেড়াচ্ছে । 

রবিবার দুপুরে তেতুলিয়া গ্রামে গেলে এ পরিস্থিতি দেখে উদ্বেগ প্রকাশ করেন বাংলাদেশ মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউণ্ডেশনের সাতক্ষীরা জেলা শাখার আহবায়ক অ্যাড, আবুল কালাম আজাদ, সদস্যসচিব অ্যাড. মনিরউদ্দিন, সদস্য রঘুনাথ খাঁ, স্বদেশ এর নির্বাহী পরিচালক মাধব চন্দ্র দত্ত, আলী নুর খান বাবুল ও সাংবাদিক মুনসুর আলী।

কথা বলতেই কোহিনুরের বাড়ির পাশে দাঁড়িয়ে থাকা কয়েকজন নারী ও পুরুষ বলে ওঠেন কোহিনুর ও তার মেয়ে রোজিনার কোন সামাজিক সম্মান নেই। তাদেরকে এখানে থাকতে দেওয়া হবে না। মসজিদ ও কওমী মাদ্রাসার পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে। ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনায় মামলা করায় সকালে স্থানীয়রা ব্রীজের পাশে মানবন্ধন করতে চেয়েছিল।

পুলিশের বাধার কারণে তা বন্ধ রাখতে হয়েছে। দেশে বিচার নেই, তাই কোহিনুর ও রেজিনার বিচার হবে না। বাধ্য হয়ে তারা শুক্রবার আইন হাতে তুলে নিয়েছেন। তবে কোহিনুর ও রোজিনাকে উচ্ছেদের জন্য তারা গণসাক্ষর গ্রহণ করে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে পাঠাবেন। তবে যারা মানবাধিকার কর্মীদের সঙ্গে কথা বললেন তারা সকলেই হামলকারিদের আত্মীয় স্বজন বলে জানা গেছে। তবে ইচ্ছা থাকার পরও হামলাকারিদের তাণ্ডবের দৃশ্যের কথা মনে রেখে মুখ খুলতে চাননি অনেকেই।

জানতে চাইলে গ্রাম পুলিশ রুহুল আমিন বলেন, মেয়ে কোহিনুরকে সদর হাসপাতালে দেখতে গেছেন তার স্ত্রী। নাতনি রোজিনা চার বাচ্চা নিয়ে রাস্তায় রাস্তায় কাটাচ্ছে। তাদেরকে আর বাড়িতে ঢুকতে দেওয়া হবে না বলে বার বার হুমকি দেওয়া হচ্ছে। আগে পুকুর দখলে নিয়েছি, এবার বাড়ির জায়গা মাদ্রাসার সাইন বোর্ড তুলে দখলে নেওয়ার কথা জানিয়েছে হামলাকারিরা।

আশাশুনি প্রেসক্লাবে দেখা হওয়া রোজিনা খাতুন বলেন, নিরাপত্তা ও আশ্রয়ের জন্য সন্তানদের নিয়ে সাংবাদিকদের কাছে এসেছেন। গিয়েছিলেন থানায়ও। থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা তাদের নিরাপত্তা ও বাড়িতে থাকার পরিবেশ তৈরির জন্য আপ্রাণ চেষ্টা চালাচ্ছেন।

রবিবার সন্ধ্যায় সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে পাগলের প্রলাপ বকছিলেন কোহিনুর। তিনি বলেন, যতদিন হাসপাতালে থাকবেন ততদিন হয়তো বা জীবন নিয়ে বেঁচে থাকবেন। বাড়িতে গেলে তাদের শেষ পরিণতি যে ভাল হবে না সে আশঙ্কার কথা সাংবাদিকদের জানতে ভুল করেননি তিনি।

আশাশুনি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা গোলাম কবীর বলেন, বর্বরোচিত হামলার ঘটনায় কোন রাজনৈতিক নেতা হামলাকারিদের পক্ষে নেই। নির্যাতিতদের নিরাপত্তা ও বসতবাড়িতে থাকার ব্যবস্থা করতে তিনি সব ধরণের চেষ্টা চালাচ্ছেন। মামলাযখন রেকর্ড হয়েছে যথাসময়ে আসামীর গ্রেপ্তার করা হবে। শান্তির উদ্যোগ নেওয়া মানে পুলিশের দুর্বলতা নয়। রবিবার রাত ৮টার দিকে তিনি ঘটনাস্থলসহ পার্শ্ববর্তী এলাকায় যেয়ে সুশীল সমাজের নেতৃবৃন্দের সঙ্গে কথা বলেছেন।

প্রসঙ্গত,ঘরের চালে ঢিল ছোঁড়ার অভিযোগে শুক্রবার ভোরে তেতুলিয়া হামিইউছুনুর কওমি মাদ্রাসার নজরান বিভাগের ছাত্র নজরুলকে ডেকে নিয়ে আটক করার পর তার শরীরে আলকাতরা মাখানোর অভিযোগে কোহিনুর ও তার মেয়ে রোজিনার বাড়ি, একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও পোল্ট্রি ফার্মে হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাট চালায় একই গ্রামের মাদক ব্যবসায়ি রুবেলের নেতৃত্বে পার্শ্ববর্তী ব্রাহ্মন তেতুলিয়া, মিত্র তেতুলিয়া, তেতুলিয়া, ফকরাবাদ, ও মোকামখালি থেকে আসা প্রায় পাঁচ’শ জামায়াত কর্মী সমর্থক ও কওমি মাদ্রাসার ছাত্ররা।

তারা হাতে চাইনিজ কুড়াল, লোহার রড, দা, শাবল, বাঁশের লাঠি ইত্যাদি নিয়ে ‘নারয় তকবির , আল্লাহ হু আকবর ’ স্লোগান দিতে দিতে শুক্রবার সকাল ৯টা থেকে দুৃপুর ১২টা পর্যন্ত তাণ্ডব চালায়। হামলায় ওই দু’ পরিবারের ছয়জনসহ ১০জন আহত হন। লুটপাট করা হয় নগদ টাকা ও সোনার গহনাসহ দু’ লক্ষাধিক টাকার মালামাল। ভাঙচুর করা হয় চার লক্ষাধিক টাকার জিনিসপত্র।

পুলিশ হামলা বন্ধ করতে গেলে তাদেরকেও ধাওয়া করে সন্ত্রাসীরা। আহতদের উদ্ধার করে পুলিশ হাসাপাতালে ভর্তির ব্যবস্থা করে। এ ঘটনায় তেতুলিয়া গ্রামের আবু হাসানের স্ত্রী রোজিনা খাতুন বাদি হয়ে ১৭জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা ২২ জনের বিরুদ্ধে শনিবার থানায় একটি মামলা দায়ের করেছেন।

(আরকে/এসপি/আগস্ট ০৯, ২০২০)

পাঠকের মতামত:

২৭ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test