E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

প্রেমের ফাঁদে ফেলে বিয়ে, ১২ লাখ টাকা নিয়ে উধাও প্রবাসী!

২০২০ সেপ্টেম্বর ২৭ ১৫:০৩:২৩
প্রেমের ফাঁদে ফেলে বিয়ে, ১২ লাখ টাকা নিয়ে উধাও প্রবাসী!

স্টাফ রিপিার্টার, চট্টগ্রাম : স্যোশাল মিডিয়ায় নারীদের প্রেমের ফাঁদে ফেলে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে সর্বস্ব হাতিয়ে নেবার অভিযোগ উঠেছে ওমান প্রবাসী এক যুবকের বিরুদ্ধে।

চট্টগ্রাম মীরসরাই উপজেলার উত্তর কচুয়া গ্রামের ওমান প্রবাসী মো. ইউনুস মিয়ার (৩৬) সাথে ২০১৭ সালে ফেসবুকে পরিচয় ঘটে সুন্দরী রোকসানার (২৮)। রোকসানা বসবাস করে ঢাকায়।

অনুসন্ধানে জানা যায়, ২০১৭ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর ওমান থেকে দেশে আসে ইউনুস।পরে ঢাকা নোটারী পাবলিক হলফনামায় ১০ লক্ষ টাকা কাবিনে বিয়ে করে রোকসানাকে। কয়েকমাস ঘুরাঘুরি করেন ঢাকা ও নরসিংদীর বিভিন্ন এলাকায়।

তার কয়েক মাস পরে বিভিন্ন কৌশলে রোকসানার কাছ থেকে টাকা নিতে শুরু করে। এক সময় বিশাল অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিয়ে ওমান চলে যায়। এরপর বিদেশে গিয়ে সব ধরনের যোগাযোগ বন্ধ করে দেয়।

পরে নিরুপায় হয়ে রোকসানা হাজির হয় ইউনুসের গ্রামের বাড়ি মীরসরাই উপজেলার ১১নং মঘাদিয়া ইউনিয়নের উত্তর কচুয়া। বিয়ের নামে প্রতারণার বিষয়টি জানিয়ে ন্যায় বিচার দাবি করে এলাকার জনপ্রতিনিধিদের কাছে। ফেরত চায় তার দেওয়া নিজের স্বর্ণ ও বাবার দোকান বিক্রির টাকা! কিন্তু ইউনুস টাকা না দিয়ে উল্টো হুমকি দেন।

ইউনুসের বাড়িতে গেলেও তার পরিবার রোকসানাকে নাজেহাল করে। এমনকি জীবন নাশের হুমকি দেয়। এনিয়ে গত ৬ আগষ্ট মীরসরাই থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) হয়। যার জিডি নং-৪১৭। জিডিতে অভিযোগ আনা হয়-রবিউল ইসলাম রবি (৩৬), আব্দুল করিম (৪১), আবুল কালাম (৬৫), মো. জসিম উদ্দিন (৪৫), রুমা আক্তার রুমু (৩৫), মনি আক্তার (৩৫)। পরে জিডির তদন্ত কর্মকর্তা প্রতিবেদন দেন, ভালো সম্পর্ক তৈরি করার সুবাদে রোকসানার কাছ থেকে অভিযুক্তরা বাড়ি নির্মাণের কথা বলে বিভিন্ন ধাপে ১০ লক্ষ টাকা ধার নিয়েছেন। পরিবর্তীতে তা ফেরত চাইলে তাঁকে প্রাণনাশের হুমকি দেন।

ইউনুস বিয়ে অস্বীকার করে বসে।যদিও রোকসানার দাবি বিয়ের কাগজপত্র ইউনুসের কাছে রয়েছে। হয়তো সে বিদেশ নিয়ে গেছে। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে সব জানা যাবে। এদিকে, সরল বিশ্বাসে প্রেমের ফাঁদে পড়ে প্রবাসী ইউনুসের কাছে সব কিছু সপে দিয়েও রোকসানা এখন সর্বশান্ত। বর্তমানে রোকসানা মানসিকভাবে অসুস্থ। আর প্রতারক ইউনুস ওমানের সাইহুদ হাইপার মার্কেটে সেলসম্যান হিসেবে কর্মরত রয়েছেন।

জানা যায়, এরমধ্যে গত মাসে রোকসানা বাদি হয়ে ঢাকার সিএমএম কোর্টে ৪২০/৪০৬/৫০৬ ধারায় একটি প্রতারণা মামলা দায়ের করেন। যার মামলা নং- ৮৩৬/২০ইং। মামলায় আসামি করা হয়-মীরসরাই উপজেলার উত্তর কচুয়া গ্রামের আবুল কালামের ছেলে ওমান প্রবাসী মো. ইউনুস মিয়া (৩৬) ও তার আপন বড়ভাই আব্দুল করিম (৪১) ও বোন জামাই মো. জসিম উদ্দিন (৪৫)কে।

মামলার এজাহার সূত্রে জানা গেছে, ওমান প্রবাসী মো. ইউনুসের ভালেবাসার মজে রোকসানা সরল বিশ্বাসে ইউনুসের ভগ্নিপতি মো. জসিমের ব্যাংক হিসাব নং-৩৪৮৪ ইসলামি ব্যাংক শাখা মীরসরাই, ঢাকাস্থ ফরেন এক্সচেঞ্জ কর্পোরেট ব্রাঞ্চ মতিঝিল শাখা ও বিকাশ নং ০১৮১৭-৬৩১৭৬৫, ০১৯৯২-৪৮০৬৯৫, ০১৮৩৮-৪৪২৫৪১, ০১৭২২-৬৫১০৫৪, ০১৭১৫-৯৬২৩৮৫, ০১৬১৪-২৮০৬৭৪, ০১৩১২-২৮০৬৭৪, ও ইউনুসের সোনালী ব্যাংক হিসাব নং-৬৩৪৩ মীরসরাই শাখা, সদরঘাট শাখায়, ব্রাক ব্যাংক ঢাকা বনানী শাখা, সিটি ব্যাংক চৌদ্দ গ্রাম শাখাসহ বিভিন্ন একাউন্টে মোট ১২ লাখ টাকা প্রদান করে।

টাকা নেওয়ার পর আর যোগাযোগ না করায় রোকসানা বুঝতে পারেন তিনি প্রতারণার স্বীকার হয়েছেন। এরমধ্যে তিনি কয়েকবার মীরসরাই আসলেও ইউনুস পরিবার হুমকি ধমকি দিয়ে তাড়িয়ে দেন।

প্রতারণার শিকার রোকসানা আক্তার বলেন, 'টাকা লেনদেনের সব কাগজপত্র আমার কাছে রয়েছে। কিন্তু আমার মনে হচ্ছে, মানুষকে বিশ্বাস করা পাপ। যদি জানতাম সে আমার সাথে প্রতারণা করে আমার টাকা পয়সা হাতিয়ে নিবে। তাহলে কোনোদিন এ পথে পা বাড়াতাম না। রোকসানা আরো বলেন, ইউনুস এখন কেরানিগঞ্জের আরেক মেয়ের সাথে সম্পর্ক গড়েছে বলে খবর পেয়েছি। এখন সে বিদেশ থেকে বিভিন্নভাবে মামলা তুলতে হুমকি দিচ্ছে। তাই আমি ন্যায় বিচারের আশায় আদালতে মামলা করেছি।'

মীরসরাই উপজেলা কচুয়া গ্রামের নুরুল গণি ও একাধিক স্থানীয় লোকজনের সাথে কথা বলে জানা গেছে, 'ঘটনাটি সত্য প্রতারক ইউনুস এবং ওর পরিবারের অন্য সদস্যরা মিলে মহিলাকে ফাঁদে ফেলে বিয়ের প্রলোভনে অর্থ হাতিয়ে নিয়েছে। এলাকার মেম্বার চেয়ারম্যান ও আ'লীগ নেতাদের কাছে বহু সালিশ হয়েছে। সমাধান হয়েছে কিনা আমরা জানি না। তবে
মীরসরাইতে ঐ পরিবার নিয়ে অনেক মুখরোচক নারী কেলেংকারীর ঘটনা অতীতেও ঘটেছে। কয়েকমাস আগে ইউনুসের বড়ভাই করিমও মনি নামে একটা মহিলার সাথে কেলেংকারী ঘটিয়ে মারধরের শিকার হন। ঐ মহিলার স্বামীও প্রবাসে থাকে। এনিয়ে বহু ঝামেলা হয় এলাকায়।

জানতে চাইলে ইউনুসের বড়ভাই মো. আব্দুল করিম (৪১) বলেন, 'আমার ভাই ইউনুসের সাথে ওর কি হয়েছে আমরা জানি না। মহিলাটা আমাদের বাসায় কয়েকবার বেড়াতে এসেছিলো। মহিলাটা আমাদের নামে দুটি মামলা দিয়েছে। এটা একটা প্রতারক চক্র; এছাড়া আর কিছু নয়।'

প্রতিবেদক ইউনুসের ফেসবুক, হোয়াটস আপ ও মোবাইল নাম্বারে যোগাযোগ করেও কোন মন্তব্য পাননি। ইউনুসের বোন রুমা আক্তার রুমু (৩৫) বলেন, 'আমার ভাই ও আমার স্বামী যদি টাকা নিয়ে থাকে অবশ্যই দিতে হবে। কারো টাকা কেউ মেরে খেতে পারে না। আমার ভাই বিদেশ থেকে আসলে এ বিষয়ে বৈঠক হবে।'

এলাকার ইউপি সদস্য দেলোয়ার হোসেন দিলু ও মঘাদিয়া ইউপি চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, 'ঘটনাটি আমরা অবগত। এবিষয়ে সালিশী বৈঠকও হয়েছিল। বৈঠকে ইউনুসের বাবা আবুল কালাম, ভাই করিম ও তার দুবোন এসেছিলো। মহিলার কাছ থেকে টাকা নেওয়ার কথা স্বীকারও করেছিল তখন। কিন্তু ইউনুস বিদেশে থাকায় তাঁরা সমস্যা সমাধানে কোন সিদ্ধান্ত দিতে পারছে না বলে আমাদের জানায়। এরপর আর কেউ যোগাযোগ করেনি।'

মামলার আইনজীবি সিরাজুল ইসলাম জানান, রোকসানার দায়ের করা মামলাটি আদালত তদন্তের জন্য পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)কে নির্দেশ দিয়েছেন। তদন্তে বিষয়টির সত্যতা উঠে আসবে।'

(জেজে/এসপি/সেপ্টেম্বর ২৭, ২০২০)

পাঠকের মতামত:

২৬ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test