E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

স্কুলছাত্র হৃদয় হত্যা : তিনজনের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি

২০২০ অক্টোবর ১১ ২৩:২৬:০২
স্কুলছাত্র হৃদয় হত্যা : তিনজনের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি

রঘুনাথ খাঁ, সাতক্ষীরা : সাতক্ষীরা সদর উপজেলার শিবপুর ইউনিয়নের ঝিটকি গ্রামের তৃতীয় শ্রেণীর স্কুল ছাত্র হৃদয় মণ্ডলকে হত্যার ঘটনায় পুলিশ তিনজনকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে রবিবার দুপুরে আদালতে পাঠিয়েছে। তারা হৃদয় হত্যার সঙ্গে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে।

গ্রেপ্তারকৃতরা হলো,সাতক্ষীরা সদর উপজেলার ঝিটকি গ্রামের ইসমাইল হোসেনের স্ত্রী মারিফা খাতুন (৪০), তার ছেলে মাসুদ রানা ও একই গ্রামের সুকুমার মণ্ডলের ছেলে সৌমিক মণ্ডল (৯)।

ঘটনার বিবরণে জানা যায়, বৃহষ্পতিবার বিকেলে প্রাইভেট পড়ে এসে চাচাত ভাই সহপাঠী সৌমিক মণ্ডলকে সঙ্গে নিয়ে একই গ্রাম ঝিটকি’র ইসমাইল গাজীর বাড়িতে যায় বিকাশ মণ্ডলের ছেলে ঝিটকি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণীর ছাত্র হৃদয় মণ্ডল। কিছুক্ষন পর দু’টি পেরেক নিয়ে বাড়ি ফিরে সন্ধ্যায় প্রসেনজিতের কাছে পড়তে যায় সৌমিক। সৌমিকের কাছে বিকাশ মণ্ডল জানতে চাওয়ায় হৃদয় মাসুদ রানার বাড়িতে রয়েছে জানালে সেখানে খোঁজ করেও হৃদয়ের অবস্থান নিশ্চিত করা যায়নি। একপর্যায়ে স্থানীয় মন্দির ও মসজিদ থেকে মাইকিং করা হয় । পরদিন শুক্রবার সকালে শামুক খুঁটতে যেয়ে বাড়ির পাশে ধান খেতে হৃদয়ের লাশ দেখতে পায় বলে প্রচার দেয় ইসমাইলের স্ত্রী মারিফা।

ওইদিন সকাল ১১টায় লাশ উদ্ধারের পরপর ইসমাইল হোসেন, তার স্ত্রী মারিফা, তাদের ছেলে শিশু আল আমিন, শিশু মাসুদ রানা, কওছার আলীর ছেলে আলমগীর হোসেন ও আব্দুর রশিদের ভাড়াটিয়া আশাশুনির আব্দুল জলিলের ছেলে আল আমিনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করে পুলিশ। মাসুদ রানার স্বীকারোক্তি অনুযায়ি ওইদিন রাত ৯টার দিকে পুলিশ সুকুমার মণ্ডলের ছেলে সৌমিককে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করে নিয়ে আসে। থানায় রেখে পুলিশ সৌমিককে নতুন গেঞ্জি, নতুন প্যান্ট কিনে দিয়ে তার পছন্দ মত ক্যাটব্যারিস, বিরিয়ানিসহ নতুন নতুন খাবার খাওয়ায়। এসময় পুলিশের শেখানো বক্তব্য ভিডিও ধারণ করে তাকে আসামী করার প্রক্রিয়া অব্যহত রাখে। শনিবার বিকেলে আব্দুর রশিদের ভাড়াটিয়া আল আমিনকে মুক্তি দেয় পুলিশ। একই সময়ে মারিফা ও তার দু’ ছেলেকে আসামী করে আদালতে পাঠানোর প্রস্তুত নেয় পুলিশ।

সৌমিককে আটক রেখে তার স্বজনদের উপস্থিতিতে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য একটি কাগজে তার বাবাকে সাক্ষর করতে বলেন সদর থানার সেকেণ্ড অফিসার হাবিবুর রহমান। তিনি ওই কাগজে স্বাক্ষর না করায় পুলিশ সিদ্ধান্ত বদল করে আল আমিনের পরিবর্তে আটকের ২৩ ঘণ্টা পর সৌমিককে ও আটকের ৩৩ ঘণ্টা পর মাসুদ রানা ও তার মা মারিফাকে সমাজসেবা অধিদপ্তরের কর্মকর্তা সুমনা শারমিনের সহায়তায় সদর হাসপাতালে ভর্তি করে। রোববার সৌমিককে প্রধান আসামী করে মাসুদ রানা ও তার মা মারিফাকে যথাক্রমে ২ ও ৩ নং আসামী করে আদালতে পাঠায় পুলিশ। আইন বহির্ভুতভাবে জিজ্ঞাসাবাদের নামে ইসমাইল, আল আমিন ও আলমগীর হোসেনকে থানায় ৫৫ঘণ্টা আটক রাখে পুলিশ।

বিকাশ মণ্ডল জানান, শুক্রবার হৃদয়ের লাশ সদর হাসপাতালের মর্গে ময়না তদন্ত শেষে বিকেল ৫টার ি কে বাড়িতে পাঠানো হয়। রাত ১০টার দিকে তিনি থানায় একটি এজাহার নিয়ে গেলে থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোঃ আসাদুজ্বজামান তা না নিয়ে আগে থেকে তাদের প্রস্তুতকৃত ভাইপো সৌমিক মণ্ডলকে ২ নং আসামী করা একটি এজাহারে সাক্ষর করতে বলা হয়। তাতে সাক্ষর না করায় পুলিশ পরবর্তীতে সৌমিককে পরিকল্পিতভাবে প্রধান আসামী করে রোববার আদালতে পাঠায় । এ ছাড়া পুলিশের শেখানো বকত্ব্য সৌমিককে বিচারকের কাছে বলতে বাধ্য করিয়ে হত্যা মামলাটি ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার চেষ্টা করা হয়েছে।

সাতক্ষীরা আদালতের পুলিশ পরিদর্শক অমল কুমার রায় বলেন, কিশোর আদালতের ভারপ্রাপ্ত বিচারক জেলা ও দায়রা জজ শেখ মফিজুর রহমান আগামি ধার্য তারিখ পর্যন্ত দু’ হাজার টাকা বণ্ডে মাসুদ রানা ও সৌমিককে জামিনে মুক্তি দিয়েছেন। তাদেরকে বাবা ও মাসহ আইনজীবী এবং সমাজসেবা অফিসের প্রবেশন অফিসারের জামিনদার চাওয়া হয়েছে। অপরদিকে সৌমিক বিচারিক হাকিম রাকিবুল ইসলাম, মাসুদ রানা বিচারিক হাকিম রাজীব রায় ও মারিফা খাতুন বিচারিক হাকিম ইয়াসমিন নাহারের কাছে হত্যার সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকা ও লাশ সম্পর্কে তথ্য গোপন করার বিষয়ে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। জবানবন্দি শেষে দু’ শিশু তাদের বাড়িতে ও মারিফাকে জেল হাজতে পাঠানো হয়েছে।

তবে সাতক্ষীরা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আসাদুজ্জামান বলেন, সৌমিক ও মাসুদ রানার জবানবন্দি অনুযায়ি তারা তাদেরকে আসামী করা হয়েছে। এখানে কোন অনিয়মের সূযোগ নেই।

(আরকে/এসপি/অক্টোবর ১১, ২০২০)

পাঠকের মতামত:

১৭ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test