E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

আশাশুনিতে কলেজ ছাত্রীর যৌন হয়রানির চার দিনেও মামলা নেয়নি পুলিশ

২০২০ অক্টোবর ১২ ২২:৩৭:০২
আশাশুনিতে কলেজ ছাত্রীর যৌন হয়রানির চার দিনেও মামলা নেয়নি পুলিশ

রঘুনাথ খাঁ, সাতক্ষীরা : মোটরসাইকেলের গতিরোধ করে প্রকাশ্যে এক কলেজ ছাত্রীর জামা কাপড় ছিঁড়ে টেনে হিঁচড়ে নির্জন জায়গায় নিয়ে যাওয়ার চেষ্টার অভিযোগের  চার দিনেও মামলা নেয়নি সাতক্ষীরার আশাশুনি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা গোলাম কবীর। উপরন্তু পুলিশ অপরাধীদের  পক্ষে অবস্থান নেওয়ায় আসামীরা নির্যাতিতার পরিবারের সদস্য ও স্বজনদের অভিযোগ প্রত্যাহারের জন্য হুমকি দিচ্ছে। 

সাতক্ষীরা ভোকেশেনাল কলেজের উচ্চ মাধ্যমিক দ্বিতীয় বর্ষের এক ছাত্রী ও আশাশুনির খাজরা ইউনিয়নের কাপষণ্ডা গ্রামের এক কৃষকের মেয়ে জানান, শুক্রবার বিকেল পৌনে পাঁচটার দিকে তিনি বাড়ি থেকে বের হয়ে চাচা সাগরের মোটর সাইকেলে সাতক্ষীরায় আসছিলেন। পথিমধ্যে কাপষণ্ডা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের কাছে একটি দোকানের পাশে বসে থাকা খাজরা ইউনিয়নের ৫ নং ওয়ার্ড ছাত্রলীগের সভাপতি কাপসন্ডা গ্রামের সাকিব বিল্লাহ, একই ওয়ার্ডের আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক পুলিশের সোর্স রায়হান উদ্দিন খোকা, আল আমিন মোড়ল, শুভ এবং চেউটিয়া গ্রামের মামুন হোসেন বাবু ও মজনু সরদার তাদের মোটর সাইকেলের গতি রোধ করে। এ সময় তাকে মোটর সাইকেল থেকে নামানোর চেষ্টা করলে চাচা বাধা দেয়।

এ সময় উপরোক্তরা চাচাকে মারপিট করে। মোটর সাইকেল থেকে তাকে (ছাত্রী) নামিয়ে জামা কাপড় ধরে টেনে হিঁচড়ে ছিড়ে ফেলে তার স্পর্শকাতর স্থানে হাত দিয়ে মাঠের দিকে নির্জন স্থানে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। একপর্যায়ে তার আত্মচিৎকারে পথচারিরা এগিয়ে এলে দুর্বত্তদের হাত থেকে কোন রকমে বেঁচে রিয়াছাত আলীর মোটর সাইকেলে তিনি আশাশুনি থানায় এসে থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার নির্দেশ অনুযায়ি লিখিত অভিযোগ করেন।

ওই কলেজ ছাত্রীর দাদী সুফিয়া খাতুন জানান, শনিবার সকালে আশাশুনি থানার উপরিদর্শক হাসানুজ্জামান তাদের বাড়িতে এসে সাগর ও তার পুতনীর নামে চাঁদাবাজি মামলা আছে বলে সাগরের অবস্থান জানতে চায়। বিপদ বুঝে তিনি ছেলে দু’ মাস আগে খুলনায় গেছে বলে জানান।

নির্যাতিত ওই কলেজ ছাত্রী জানান, তাদের এলাকার পরিস্থিতি এখন উপজেলার যে কোন উনিয়নের চেয়ে নাজুক। যে কোন সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে সাক্ষী দেবে এমন বুকের পাটাওয়ালা লোক খুঁজে পাওয়া কঠিণ। পরবর্তীতে যে মোটর সাইকেলে সে আশাশুনিতে পেঁছৈছিল সেই হামলাকারি শুভ’ এর মামা। তাই শুভ’র বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ দিলে মামা রিয়াছাত আলী সাক্ষী দেবে না এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু সে ও চাচা সাগল খাঁ শুক্রবার বিকেল পৌনে পাঁচটার সময় কাপষণ্ডা স্কুলের পাশে অবস্থান করেছেন কিনা তা মোবাইল টাওয়ার যাঁচাই করে পুলিশ জানতে পারবে। পুলিশ সেটা না করে হামলাকারিদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ি ঘটনা মিথ্যা বলে চালিয়ে দিয়ে হামলাকারিদের উৎসাহিত করছেন। ফলে কোন নারী শিক্ষার্থীদের জন্য খাজরা ইউনিয়ন নিরাপদ নয়।

১. সাগর খাঁ তার উপর হামলার ঘটনার বর্ণনা দিয়ে ভাইঝির সুরে সুর মিলিয়ে বলেন, ভাইঝিকে বাঁচাতে যেয়ে তিনি আহত হয়ে সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসাও নিয়েছেন। পুলিশ তাদের বাড়িতে চাঁদাবাজি মামলার আসামী ধরার নামে হুমকি না দিয়ে ডিজিটাল পদ্ধতিতে মোবাইল টাওয়ার যাঁচাই করলে সর্বশেষ অবস্থা জানতে পারবে।

এদিকে স্থানীয়রা জানান, এলাকায় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে শরবত মোল্লা নিহত হওয়ার পর চেয়ারম্যান ডালিমসহ ৫৭ জনের নামে মামলা করা হয়। এ মামলায় চেয়ারম্যান গত পহেলা অক্টোবর রাতে ঢাকা থেকে গ্রেপ্তার হয়েছেন। প্রতিপক্ষ অহিদুল ও কুদ্দুস আগামি ইউপি নির্বাচনে প্রতিপক্ষ হিসেবে রমজানকে এলাকা ছাড়া করতে মরিয়া হয়ে ওঠে। তারা পুলিশকে ম্যানেজ করে রমজানের বিরুদ্ধে সম্প্রতি একটি ঘেরে বোমা হামলা মামলা, গদাইপুরের রাব্বির বাড়ি থেকে দু’টি বোমা উদ্ধারের মামলা, রমজান এলাকায় না থাকার পরও কাপষণ্ডা বাজারে অহিদুল ও কুদ্দুসের লোকজন রমজানের নিয়ন্ত্রনাধীন ভাড়ায় চালিত মোটর সাইকেল চালকদের অফিস ও আওয়ামী লীগ অফিস ভাঙচুরের ঘটনায় উভয়পক্ষের সংঘর্ষে রমজানের বোন হামিদা, প্রতিবেশি মজিদসহ চারজন জখম হওয়ার ঘটনায় রমজান ও তার পক্ষের ২২ জনকে আসামী করে মামলা দিয়ে এলাকা ছাড়া করেছে। অথচ হামিদা ও মজিদের জখমের ঘটনার ১০ দিন পর পুলিশ কয়েকজন দাগি আসামীর নাম বাদ দিয়ে মামলা নিয়েছে। এমতাবস্থায় অহিদুল ও কুদ্দুস বাহিনীর সদস্যরা রমজান ও তার স্বজনদের উপর পরিকল্পিত হামলা চালানোর কাজ অব্যহত রেখেছে।

আশাশুনি থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মোঃ হাসানুজ্জামান সোমবার বিকেলে সাংবাদিকদের বলেন, তিনি শনিবার তদন্তে যেয়ে ঘটনার সত্যতা পাননি। কিছুই পাননি। সাগর খাঁ দুই মাস যাবত খুলনায় রয়েছে উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন প্রতিপক্ষকে ফাঁসানোর জন্য মেয়েটি এই সাজানো এজাহার দিয়েছে। তবে তিনি বলেন, ‘এটা ছায়া তদন্ত। বিষয়টি নিয়ে আরও তদন্ত হতে পারে’।

আশাশুনি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা গোলাম কবীর বলেন, যে তদন্তকারি কর্মকর্তাকে ঘটনাস্থলে পাঠানো হয়েছিল তিনি ঘটনার সত্যতা না পাওয়ায় মামলা নেওয়া হয়নি। তবে প্রয়োজনে বৃহত্তর তদন্ত করা হবে।

(আরকে/এসপি/অক্টোবর ১২, ২০২০)

পাঠকের মতামত:

১৭ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test