E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

সাতক্ষীরা জজকোর্টের পিপি আব্দুল লতিফের সনদ জালিয়াতি, ঘুষ ও দূর্ণীতির প্রতিবাদে সমাবেশ ও স্মারকলিপি পেশ

২০২০ অক্টোবর ১৪ ১৭:৪৩:৩৩
সাতক্ষীরা জজকোর্টের পিপি আব্দুল লতিফের সনদ জালিয়াতি, ঘুষ ও দূর্ণীতির প্রতিবাদে সমাবেশ ও স্মারকলিপি পেশ

রঘুনাথ খাঁ, সাতক্ষীরা : সাতক্ষীরা জজকোর্টের  পিপি এড. আব্দুল লতিফের নারী কেলেঙ্কারী, স্নাতক সনদ জালিয়াতি, পিপিশিপ দেওয়ার নামে ঘুষ গ্রহণ, নাশকতা মামলায় জড়িয়ে দেওয়ার নাম করে পুলিশ দিয়ে হয়রানি করে চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন দূর্ণীতির প্রতিবাদে সমাবেশ করেছে সাতক্ষীরা জেলা আওয়ামী আইনজীবী পরিষদ। বুধবার সকাল ১০টায় তারা জজ কোর্টের শহীদ মিনার পাদদেশে সমাবেশ শেষে সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক এসএম মোস্তঠা কামালের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রি বরাবর এ স্মারকলিপি পেশ করেন।

সাতক্ষীরা জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক এবং সাবেক অতিরিক্ত পিপি এড. আজহার হোসেনের সভাপতিত্বে সমাবেশে বক্তব্য রাখেন, সাবেক পিপি অ্যাড. ওসমান গণি, এড. জেড আই আব্দুল্লাহ আল মামুন, এড. রফিকুল ইসলাম, এড. সঞ্জয় রায় চৌধুরী, এড. সাহেদুজ্জামান সাহেদ প্রমুখ।

বক্তারা বলেন, বর্তমান জজ কোর্টের পিপি অ্যাড. আব্দুল লতিফ ওরফে খাটাল লতিফ বিডিআর এ চাকুরি করা কালিন যে স্নাতক সনদ সংগ্রহ করেছেন তা কাল্পনিক। বিডিআরে চাকুরি করে স্নাতক পাশ করার বিভাগীয় আইন নেই। তাই তার স্নাতক সনদ নিয়ে তদন্ত করার জন্য সাতক্ষীরার ছয় জন আইনজীবী জেলা আইনজীবী সমিতি, ঢাকা বার কাউন্সিলসহ বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ করেছে। লতিফ পিপিশিপ দেওয়ার নামে এক আইনজীবীর কাছ থেকে নেওয়া ৭২ হাজার টাকার মধ্যে ১০ হাজার ও এক আইনজীবীর কাছ থেকে নেওয়া ২২ হাজার টাকা তাদের টেবিলে রেখে ফেরৎ দিয়েছেন। ওই টাকা আইনজীবী সমিতির সভাপতির কাছে জমা আছে। এ ছাড়া চুপড়িয়ার এক বিবাহিত নারী লতিফকে ছয় নং স্বামী হিসেবে দাবি করেন।

বক্তারা আরো বলেন, লতিফের বাবা মুনছুর আলী সরদার এলাকায় রাজাকার বলে পরিচিত। লতিফের বাবার প্রথম স্ত্রীর চার সন্তান থাকার পরও তিনি তিন সন্তানের এক হিন্দু জননী কমলাকে ফুসলিয়ে বিয়ে করেন। এর আগে ওই হিন্দু নারীর স্বামীর কাছ থেকে সকল জমি ও সম্পদ হস্তগত করেন লতিফের বাবা। বর্তমানে গ্রামে ওই জমিতে লতিফের বাড়ি ও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। পরে তাদেরই এক আত্মীয়ের স্ত্রীর(মান্নান) সঙ্গে অনৈতিক সম্পর্কের কারণে গণধোলাইয়ের শিকার হন মুনসুর সরদার। ওই গৃহবধুর স্বামী তাকে তালাক দিলে লতিফের বাবা তাকে বিয়ে করেন।

২০১৪ ও পরবর্তী সময়ে তার বাড়ির ভাড়াটিয়া গোয়েন্দা পুলিশের উপপরিদর্শক মিজানকে দিয়ে লতিফ তার নিজ গ্রাম কামারবায়সায় নাশকতা মামলার আসামী হিসেবে ধরিয়ে দিয়ে পরে ছাড়িয়ে নেওয়ার নাম করে কমপক্ষে ২৫ জনের কাছ থেকে অন্ততঃ ৫০ থেকে ৬০ লাখ টাকা চাঁদাবাজি করেছেন। তাদের মধ্যে ছোবহান সরদারের ছেলে আব্দুস সামাদ মাষ্টারের কাছ থেকে ৮০ হাজার, ময়জদ্দিনের ছেলে মাদ্রাসা শিক্ষক হযরত আলীর কাছ থেকে ২৫ হাজার, এজাহার আলীর ছেলে ইব্রাহীম মাওলানার কাছ থেকে ৭০ হাজার, আব্দুল কাদেরের ছেলে রাজু আহম্মেদের কাছ থেকে ৬০ হাজার, ছাকা সরদারের ছেলে আব্দুল হান্নানের কাছ থেকে ৫০ হাজার, ছাকা সরদারের ছেলে আব্দুল মজিদ ও তার বড় ছেলের কাছ থেকে দুই বারে এক লাখ ৫০ হাজার, ওমর আলীর কাছ থেকে ৩০ হাজার, কাশেম দফাদারের ছেলে আজিজ দফাদারের কাছ থেকে ৩০ হাজার, আনিছউদ্দিন মাওলানার জামাতাকে ছাড়িয়ে নিতে ৬০ হাজার, মফিজুলের ছেলে জাহাঙ্গীর হুজুরের কাছ থেকে তিন বার ধরিয়ে দিয়ে ছাড়িয়ে নেওয়ার নামে দু’ লাখ, লতিফ মোল্লার ছেলে রবিউল ইসলামের কাছ থেকে ৫০ হাজার টাকা নিয়েছেন।

তবে হোসেন আলীর ছেলে বাবলুকে ধরিয়ে দিয়ে ছাড়িয়ে নিতে কোন টাকা না লাগলেও ফেরাজতুল্লাহ মোল্লার ছেলে আব্দার মোল্লাকে ধরিয়ে দিয়ে ছাড়িয়ে নিতে ৭৫ হাজার, গহর আলী মোল্লার ছেলে মসজিদের ইমাম আবু মুছার কাছ থেকে ৫০ হাজার, রজব আলীর ছেলে রমজান আলীর কাছ থেকে ৩০ হাজার, হযরত ঢালীর ছেলে রেজাউল ইসলামের কাছ থেকে ১০ হাজার, নূরুউদ্দিনের ছেলে শিক্ষক ইমাদুলের কাছ থেকে দু’ লাখ টাকা নিয়েছেন লতিফ। বার বার টাকা দিতে না পারায় ওই স্কুল শিক্ষককে দেশ ছাড়তে হয়েছে।

তিনি বর্তমানে মালয়েশিয়ায় রয়েছেন। রমজান আলীর ছেলে সাবেক ইউপি সদস্য আজিবর রহমানের কাছ থেকে চার লাখ, রুস্তুম আলীর ছেলে আনারুল ইসলামের কাছ থেকে ৭৫ হাজার, আব্দুস সাত্তারের ছেলে মণ্টুর কাছ থেকে এক লাখ, ইমান আলীর ছেলে মোস্তফাকে কয়েকবার ধরিয়ে দিয়ে ছাড়িয়ে নেওয়ার নামে পাঁচ লাখ, মাওলানা ইব্রাহীমের ছেলে আব্দুল্লার কাছ থেকে ৫০ হাজার, আনছার আলীর ছেলে বাবুলের কাছ থেকে এক লাখ, করিমের ছেলে আশরাফের কাছ থেকে ৫০ হাজার টাকা, হাওয়ালখালির শহর আলীর ছেলে কালামের কাছ থেকে এক লাখ ১০ হাজার ও রেউই বাজারের ব্যবসায়ি হাফিজুরের কাছ থেকে ৫০ হাজার টাক চাঁদাবাজি করেছেন খাটাল লতিফ।

বক্তারা আরো বলেন, লতিফের ছেলে রাসেলের নেতৃত্বে শফিকুলের ছেলে শরিফুল, আদম আলীর ছেলে মঞ্জুরুল ও মোমেন, রমজানের ছেলে আমির হোসেনসহ কয়েকজন দু’ মাস আগে কামারবায়সা গ্রামের জাকাত আলীর মেয়ে ছোট খুকীর একটি গরু ছাড়াও গত ছয় মাসে নয়ন ঢালীর মেয়ে সাঈদা খাতুনের দু’টি, ইমান আলীর ছেলে মোস্তফার দু’টি গরু লতিফের প্রাচীরের মধ্যে নিয়ে যেয়ে জবাই করে খেয়েছে।

শফিকুলের ছেলে শরিফুল, আদম আলীর ছেলে মঞ্জুরুল, মোসলেমের ছেলে সুজন ছাত্তারের ছেলে বদরুজ্জামানের মাদক ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করে থাকেন লতিফের ছেলে রাসেল।

এ ছাড়া কাওনডাঙার মফিজ মেম্বরকে খাটাল পাইয়ে দেওয়ার নাম করে ৩৩ লাখ টাকা নিয়েছেন খাটাল লতিফ। তুজুলপুরের ব্যবসায়ি আব্বাসের কাছ থেকে বাড়ি তৈরির সিমেন্ট নিয়ে চেক দিয়ে টাকা না দেওয়ায় ৭০ লাখ টাকার চেক ডিজওনার মামলা করেন ওই ব্যবসায়ি।

নিজের মেয়ে আফরোজা খানম তন্বী ভালবেসে একই গ্রামের সিরাজুল ইসলামের সেনাবাহিনীতে কর্মরত ছেলেকে গোপনে বিয়ে করলেও লতিফ তার মেয়েকে নজরবন্দি রেখে ওই ছেলে ও তার বাবাকে পুলিশ দিয়ে নানাভাবে হয়রানি করেছেন। যদিও শেষ পর্যন্ত পুলিশের হস্তক্ষেপে বড় ভাই আহাদের মাধ্যমে মেয়েকে তার শ্বশুর বাড়িতে পাঠাতে বাধ্য জন লতিফ।

তবে অনিয়ম ও দূর্ণীতির প্রতিবাদে সমাবেশের বিরুদ্ধে একই স্থানে গত ২৮ সেপ্টেম্বর সমাবেশ করে অ্যাড. আব্দুল লতিফ বলেছিলেন, ২৬ সেপ্টেম্বরসহ কয়েকবার এ্যাড. আজাহার হোসেন, অ্যাড ওসমান গণিসহ ৫/৬ জন ব্যক্তি আমার সুনাম ক্ষুন্ন করার জন্য একের পর এক মিথ্যাচার করে যাচ্ছেন।

আমি দায়িত্ব গ্রহনের পর থেকে সততা ও নিষ্ঠার সাথে কাজ করে আসছি। ইতিমধ্যে ১৩৬ টি গুরুত্বপূর্ন মামলার সত্যতা প্রমানিত হওয়ায় শেষ পর্যায়ে নিয়ে এসেছি। আমি অন্যায়ের প্রতিবাদ করায় তারা আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র শুরু করেছে। যারা নিজেদের দূর্ণীতি ঢাকতে আমার চরিত্রহনন করছে তাদের রেকর্ড প্রকাশ করা হবে।

(আরকে/এসপি/অক্টোবর ১৪, ২০২০)

পাঠকের মতামত:

১৭ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test