E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

নাকতাড়া কালী মন্দিরের জমি দেবোত্তর সম্পত্তি, রাষ্ট্রপক্ষের আপিল খারিজ

২০২০ অক্টোবর ১৪ ১৮:৫৯:১৩
নাকতাড়া কালী মন্দিরের জমি দেবোত্তর সম্পত্তি, রাষ্ট্রপক্ষের আপিল খারিজ

রঘুনাথ খাঁ, সাতক্ষীরা : সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলার শ্রীউলা ইউনিয়নের নাকতাড়া সার্বজনীন শ্রীশ্রী কালীমন্দিরের ২৪ শতক দেবোত্তর সম্পত্তি যে মন্দিরেরই তা আদালতের রায়ে আবারো প্রমাণিত হলো। আশাশুনি জ্যেষ্ট সহকারি জজ আদালতের রায় এর বিরুদ্ধে করা রাষ্ট্রপক্ষের আপিল বুধবার খারিজ করে দিয়ে নিম্ন আদালতের রায় ও ডিক্রী বহাল রাখার আদেশ দেন জেলা ও দায়রা জজ শেখ মফিজুর রহমান।

নাকতাড়া সার্বজনীন শ্রীশ্রী কালীমন্দির পরিচালনা কমিটির সভাপতি ধর্মদাস মিস্ত্রী ও সাধারণ সম্পাদক তপন মণ্ডল জানান, ১৬৯৬ সালে জমিদার যতীন্দ্রনাথ রায় চৌধুরী সাবেক ১, ১৫৮,২৬৭ ও ৩৬৯ খতিয়ানের প্রত্যেকটি খতিয়ান থেকে ছয় শতক করে ৩০২৪ দাগে ২৪ শতক জমি দান করে তাতে কালীমন্দির প্রতিষ্ঠা করেন। সেখান থেকে শ্রীউলা ইউনিয়নের নাকতাড়া , বুড়োখারাটি, লাঙ্গলদাড়িয়া, গাজীপুর, কাঁকড়াবুনিয়া, মহিষকুড়, কলিমাখালি, ঢালীরচক, বিলবকচর, বিলথানাঘাটা, বিল বুড়োখারাটি, বিলমহিষ্কুড়সহ কমপক্ষে ২০ গ্রামের হিন্দুরা এ মন্দিরে প্রতি বাংলা সনের চৈত্রমাসের শেষ মঙ্গলবার কালীপুজা উপলক্ষ্যে আনন্দে মেতে ওঠে। পুজা মূলত পরিণত হয় সর্বধর্মেরমিলন মেলায়। এ ছাড়াও সেখানে হরিপুজা, শীতলা পুজা, নামযজ্ঞ, বিশ্বকর্মা পুজা, মণষা পুজা ও শ্রীশ্রীকৃষ্ণের জন্মাষ্টমী উদযাপিত হয়।

১৯৬৫ সালে পাকিস্তান সরকার শত্রু সম্পত্তি আইনপাস করায় ও ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ স্বাধীন হলেও পরবর্তীতে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বিরোধী শক্তি রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আসায় নাকতাড়াসহ এলাকার বর্ধিষ্ণু হিন্দুরা এক শ্রেণীর মৌলবাদি সংখ্যাগুরুদের অত্যাচারের দেশ ছেড়ে চলে যেতে বাধ্য হন। ফলে তাদের ফেলে যাওয়া ঘরবাড়ি, কৃষি জমি, বাস্তুভিটা, মন্দির, শ্মশান জাল কাগজপত্রের মাধ্যমে বেদখল হতে থাকে। অনেক ক্ষেত্রে হিন্দুদের জমি খাস করে বা পেরিফেরি করে তার উপর গড়ে ওঠে হাট, বাজার, খেলার মাঠ ও রাস্তা। জমি উদ্ধারে দীর্ঘমেয়াদী মামলার খরচ বহন করতে না পেরে অনেকেই হাল ছেড়ে দেন। এক বিঘা জমি উদ্ধারে খরচ হয়ে যায় আরো এক বিঘা জমির দাম।

তারা আরো বলেন, কোন প্রকার নোটিশ ছাড়াই মন্দিরের নামে রেকডীয় জমি ২০১০ সালের ৮ ফেব্র“য়ারি ০২/২০১০ নং পেরিফেরি কেসের মাধ্যমে ২৪ শতক জমি ১নং খাস খতিয়ানভুক্ত করা হয়েছে বলে ২০১১ সালের ফেব্র“য়ারি মাসে তারা জানতে পারেন। ওই সালেই তৎকালিন মন্দির কমিটির সাধারণ সম্পাদক দেবদাস মণ্ডল ওই বছরের ২১ মার্চ বাদি হয়ে সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসকসহ পাঁচজন সরকারি কর্মকর্তার নামে আশাশুনি সহকারি জজ আদালতে মামলা(দেঃ ১৩৩/১১) করেন।

স্থানীয় সাংসদ ও সাবেক স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা মন্ত্রি ডাঃ আ.ফ.ম রুহুল হক ওই মন্দির সংস্কারের জন্য জিএসআইডিবি প্রকল্পের আওতাধীন কাজে সাত লাখ টাকা বরাদ্দ করেন। চলতি বছরের এপ্রিল মাস থেকে ওই কাজ চলমান রয়েছে। প্রায় আট বছর পর চলতি বছরের ১৭ জুন আশাশুনি সহকারি জজ আদালতের বিচারক সাবরিনা চৌধুরী কোন প্রকার নোটিশ ছাড়াই মন্দিরের জমি পেরিফেরি করা হয়েছে বলে উল্লেখ করেন। একই সাথে ওই জমি দেবত্ব সম্পত্তি হিসেবে উল্লেখ করে মন্দিরের পক্ষে রায় ও ডিক্রি দেন।

স্থানীয়দের অভিযোগ, ২০১১ সালে মন্দিরের জমি জবর দখল করে মিষ্টির ব্যবসা শুরু করেন খালেক সরদার। ২০১৫ সালের ২২ মার্চ ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের পরদিন আওয়ামী লীগ নেতা ও ইউপি চেয়ারম্যান আবু হেনা শাকিলের সহায়তায় বিরোধপূর্ণ জমির পূর্ব পাশে ভাড়ায় চালিত মোটর সাইকেল চালকদের জন্য ঘর নির্মাণ হয়। বাধা দেওয়ায় মোটর সাইকেলে চালক আশাশুনির ফেরদৌস, নাকতাড়া এলাকার মতলেব, আলমগীর হোসেন ও জুলফিকারসহ কয়েকজন মন্দির ভাঙচুর করার হুমকি দেন। পরবর্তীতে ওই ঘরের পাশে খোলা জায়গায় প্রসাবখানা বানিয়ে মন্দিরের পবিত্রতা নষ্ট করার চেষ্টা অব্যহত থাকে। বিষয়টি জেলা প্রশাসকের কাছে অভিযোগ করেও চেয়ারম্যানের কারসাজিতে কোন ব্যবস্থা গৃহীত হয়নি।

এমনকি ২০১৭ সালে চেয়ারম্যান আবু হেনা শাকিল মন্দিরের জমির উপর দিয়েই রেডিয়েন্স এণ্ড ফ্রেণ্ডশিপ ক্লাবে যাওয়ার জন্য ইট সোলিং রাস্তা বানিয়ে দেন। একপর্যায়ে আদালতের রায় অনুযায়ি স্থানীয় সংসদ সদস্য ও কয়েকটি হিন্দু সংগঠণের কর্মকর্তাদের সঙ্গে পরামর্শ করে মন্দির সংস্কারের অংশ হিসেবে গত ২০ ডিসেম্বর শুক্রবার সকাল থেকে অবৈধ স্থাপনা অপসারন ও প্রাচীর সংস্কার করা হয়। এ সময় শ্রীউলা ইউনিয়ন ভূমি অফিসের সহকারি তহশিলদার মহসিন আলী নিম্ন আদালতের আদেশের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষ আপিল(দেঃ আপিল ১১৭/১৯) করেছে বলে মন্দির কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেন।

একপর্যায়ে মন্দির কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে অ্যাড. তরুন কুমার বন্দোপাধ্যায়, অ্যাড. তপন কুমার কুণ্ড, অ্যাড. সোমনাথ ব্যাণার্জী, অ্যাড. গোলাম মোস্তফা,অ্যাড. রাজীব রায় চৌধুরী ও জীবন দাশ আপিল শুনানীতে অংশ নেন। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন সরকারি কৌশুলী জিপি অ্যাড. শম্ভু নাথ সিংহ। বুধবার জেলা ও দায়রা জজ আপিল না’মঞ্জুর করে দিয়ে নিম্ন আদালতের রায় ও ডিক্রী বহুল রাখেন।

(আরকে/এসপি/অক্টোবর ১৪, ২০২০)

পাঠকের মতামত:

১৭ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test