E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

সাতক্ষীরায় একই পরিবারের ৪ জনকে জবাই করে হত্যা

২০২০ অক্টোবর ১৫ ১৪:৫২:৪৩
সাতক্ষীরায় একই পরিবারের ৪ জনকে জবাই করে হত্যা

রঘুনাথ খাঁ, সাতক্ষীরা : সাতক্ষীরার কলারোয়ার হেলাতলা ইউনিয়নের খলিসা গ্রামে একই পরিবারের স্বামী-স্ত্রী ও ছেলে-মেয়ে সহ ৪ জনকে জবাই করে হত্যা করেছে সন্ত্রাসীরা। হত্যার আগে অথবা পরে তারা কয়েকজনের হাত পা বেধে রেখে যায়। 

আজ বৃহস্পতিবার ভোররাতে কোন একসময় এই ঘটনা ঘটে। নিহতরা হলেন- মাছের ঘের ব্যবসায়ী মোঃ শাহীনুর রহমান(৪০) তার স্ত্রী সাবিনা খাতুন(৩০), ছেলে সিয়াম হোসেন মাহী(৯) ও মেয়ে তাসমিন সুলতানা(৬)। হত্যাকারীরা ওই পরিবারের ৪ মাসের শিশু মারিয়াকে হত্যা না করে ফেলে রেখে যায়।

নিহত শাহীনুরের চোট ভাই রায়হানুল হক জানান, তার মেঝ ভাই আশরাফ আলী মালয়েশিয়ায় থাকেন। বড় ভাই শাহীনুর ইসলাম আট বিঘা জমিতে পাঙাস ট্যাংরার চাষ করেন। খলিসা মোড়ে তার নিজের পশু খাদ্যের দোকান রয়েছে। মা শাহীদা খাতুন চোখ অপারেশনের পর সাতক্ষীরা শহরের আত্মীয়ের বাড়িতে ছিলেন। ভোর সাড়ে চারটার দিকে মাছ ধরার জন্য ভোরে তারা ওই বাড়ির চিৎকার চেচামেচি শুনে ছুটে যান। বৃহষ্পতিবার বড় ভাইয়ের পুকুরে মাছ ধরার কথা ছিল।

তিনি আরো জানান, বৃহষ্পতিবার ভোর সাড়ে চারটার দিকে মাছ ধরার জন্য জেলেরা এসে তার বড় ভাই শাহিনুরকে ডাকতে থাকে। কোন সাড়া না পেলেও একটি বাচ্চার কান্না শুনে তারা তাকে ডাকেন। এ সময় তিনি বাচ্চার কান্না ও গোঙানী শুনে পার্শ্ববর্তী আনিছুর রহমান , হায়দার আলীসহ কয়েকজনকে ডেকে গাছ বেয়ে ছাদে উঠে ঘরে ঢোকেন। পরে দরজা খুলে দেখতে পান সাবিনা খাতুন ও তার দুই শিশু ব্রজবকাস সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণীর ছাত্র তাসনিম ও একই বিদ্যালয়ের দ্বিতীয় শ্রেণীর ছাত্রী মাহী একঘরে এবং আরেক ঘরে শাহীনুরের জবাই করা লাশ। তিনি জানান, হত্যাকারীরা সিড়ির ঘর দিয়ে ঢুকে তাদের খুন করে দরজায় শিকল দিয়ে চলে যায়। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌছায়। দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে পুলিশ ওই লাশ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠায়।

রায়হানুল ইসলাম আরও জানান, ২২ বছর ধরে তাদের পারিবারিক ছয় শতক জমি নিয়ে নিকট প্রতিবেশী ওয়াজেদ কারিগরের ছেলে আকবরের সাথে মামলা চলে আসছে। এই মামলা ও পারিবারিক বিরোধের জের ধরে এই হত্যাকান্ড ঘটে থাকতে পারে বলে তার ধারনা। পরিবারের স্বজনরা জানান, শাহীনুরের বাবা ডা. শাজাহান আলী কলারোয়ার দামোদরকাটী গ্রামের নূর আলীর ছেলে জনৈক আকবর হোসেনের কাছ থেকে সাড়ে ১৬ শতক জমি ক্রয় করেন। প্রতিবেশী ওয়াজেদ আলীর ছেলে আকবর ও একই মালিকের কাছ থেকে সাড়ে ১৬ শতক জমি কেনেন।

ঘটনাস্থলে এসে জানা গেছে, জীবিত থাকা একমাত্র শিশুকন্যা মারিয়া সুলতানা (৪ মাস)কে স্থানীয় ইউপি সদস্য নাসিমা খাতুন নিয়ে যান। পরে তিনি তাকে আত্মীয়দের কাছে হস্তান্তর করেন।

কলারোয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হারান চন্দ্র পাল জানান, পুলিশ সুপার মোঃ মোস্তাফিজুর রহমান, সাতক্ষীরা সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মীর্জা সালাহ্ উদ্দিন, হোয়েন্দা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ইয়াছিন আলী চৌধুরী ছাড়াও পুলিশ ব্যুরো ইনভেস্টিগেশন, সিআইডি, র‌্যাবসহ বিভিন্ন প্রশাসনের কর্মকর্তারা খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে ছুঁটে আসেন। দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে লাশ উদ্ধার করে সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়। সাতক্ষীরা-যশোর সড়কের ধারেই অবস্থিত এই বাড়িতে এখন শত শত লোক ভিড় করছেন। নিহত শাহীনুরের ছোট ভাই রায়হানুল হককে মারাত্মক অসুস্থ অবস্থায় কলারোয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে। ঘটনার তদন্ত চলছে।

পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, নিহত শাহীনুরের বোন আছিয়া খাতুন বুক চাপড়ে আহাজারি করছেন। তিনি বলছেন, আমার মা আছিয়া খাতুন ও আরেকটা ভাই এখানে থাকলে তাদেরকেও খুন করতো সন্ত্রাসীরা। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুকে স্বপরিবারে হত্যা করে যায় সন্ত্রাসীরা। বিদেশে থাকায় তার দুই কন্যা শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা প্রানে বেঁচে যান। তিনি এই নৃশংস হত্যাকান্ডকে সেই ঘটনার সাথে তুলনা করেন।

প্রসঙ্গত, খলিসা গ্রামের পার্শ্ববর্তী বোয়ালিয়া গ্রামের মোসলেউদ্দিনসহ তার পরিবারের পাঁচ সদস্য একইভাবে জমি নিয়ে বিরোধকে কেন্দ্র করে প্রতিপক্ষের হাতে জবাই হন।

(আরকে/এসপি/অক্টোবর ১৫, ২০২০)

পাঠকের মতামত:

১৭ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test