E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

টাঙ্গাইলে পরকীয়া যুগলের রহস্যজনক মৃত্যু

২০২০ অক্টোবর ১৬ ১৭:৫৯:০৫
টাঙ্গাইলে পরকীয়া যুগলের রহস্যজনক মৃত্যু

টাঙ্গাইল প্রতিনিধি : টাঙ্গাইলের কালিহাতী উপজেলার রাজাফৈর গ্রামে পরকীয়া প্রেমিক যুগলের রহস্যজনক মৃত্যু হয়েছে। শুক্রবার (১৬ অক্টোবর) সকালে পুলিশ প্রেমিক শাজাহান(৩৮) ও প্রেমিকা আলেয়া বেগমের (৩৫) লাশ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য মর্গে পাঠিয়েছে।

জানা গেছে, রাজাফৈর গ্রামের দেলোয়ার হোসেনের মেয়ে আলেয়া বেগমের ঘাটাইল উপজেলার পাকুটিয়া গ্রামের আব্দুল বাছেদের ছেলে মো. দানেছ আলীর সাথে বিয়ে হয়। তাদের ঘরে আলমগীর নামে ১১ বছরের এক ছেলে রয়েছে। কয়েক বছর আগে আলেয়া বেগম রাজাফৈর গ্রামে তার বাবার বাড়ির পাশে বাড়ি করে বসবাস শুরু করেন।

এক পর্যায়ে প্রতিবেশি আ. বাছেদ মিয়ার ছেলে দুই সন্তানের জনক শাজাহান মিয়ার সাথে গৃহবধূ আলেয়া বেগমের পরকীয়া গড়ে ওঠে। পরকীয়ার বিষয়টি জানাজানি হলে উভয় পরিবার থেকে তাদেরকে একাধিকবার সতর্ক করা হয়। পরকীয়া প্রেমের জের ধরে গত ৩ সেপ্টেম্বর আলেয়া বেগম ও শাজাহান অজানার উদ্দেশে পাড়ি জমায়। দীর্ঘ ৪২দিন বিভিন্ন স্থানে থেকে বুধবার(১৪ অক্টোবর) রাতে তারা শাজাহানের বাড়িতে আসেন। এ নিয়ে শাজাহানের স্ত্রী-সন্তানের প্রতিবাদের মুখে স্থানীয় তোলপাড় সৃষ্টি হয়।

বৃহস্পতিবার (১৫ অক্টোবর) রাতে স্থানীয় কয়েক মাতব্বর পারিবারিকভাবে বিষয়টি সমাধানের লক্ষে শাজাহানের বাড়িতে যান। মাতব্বররা কথা বলার এক পর্যায়ে শাজাহানের সম্মন্ধি(স্ত্রীর বড় ভাই) শিপন, অপর সম্মন্ধি প্রবাসী আ. খালেকের মেয়ে ঝর্ণা, শ্যালক প্রবাসী হাবিবুর রহমানের স্ত্রী বীথি, জেঠাস(স্ত্রীর বড় বোন) ইয়ারজান, স্ত্রী জেসমিন আক্তার ও ছেলে জাহিদ সহ সম্মন্ধি শিপনের কয়েকজন বন্ধু অতর্কিতভাবে শাজাহান ও আলেয়া বেগমের উপর চড়াও হয়। তারা পরকীয়ার অপরাধে শাজাহান ও আলেয়া বেগমকে এলোপাতারি পিটাতে থাকে।

আলেয়া বেগমের মা সোনাভানু জানান, বাড়িতে আসার পর থেকে একাধিকবার আলেয়া বেগম ও শাজাহানকে তারা মারপিট করে। রাতে গ্রাম্য সালিশ হওয়ার কথা থাকলেও তাদেরকে ডাকা হয়নি।

গৃহবধূ আলেয়া বেগমের বাবা দেলোয়ার হোসেন জানান, শাজাহানের শ্বশুরবাড়ির লোকজন তার মেয়ে ও শাজাহানকে পিটিয়ে খুন করে আলেয়ার গোয়াল ঘরে ধর্ণার(আড়া) সাথে ঝুঁলিয়ে রাখে। পরে ঘটনাটি আত্মহত্যা বলে চালানোর চেষ্টা চালায়। এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি জানান, আত্মহত্যা করলে গোয়াল ঘরে রক্ত এলো কীভাবে।

শাজাহানের স্ত্রী জেসমিন আক্তার জানান, তার স্বামীর ইচ্ছায় তিনি আলেয়াকে সতীন হিসেবে মেনে নিয়েছিলেন। সামাজিকভাবে বিয়ের কথাও হয়েছিল।

স্থানীয় মাতব্বর ও শাজাহানের খালু মো. আজমত আলী ও মাতব্বর আবুল কাশেম জানান জানান, তারা বিষয়টি নিয়ে বৃহস্পতিবার বিকালে স্থানীয় মসজিদে আলোচনা হয়। কিন্তু কোন সমাধান হয়নি। শুক্রবার(১৬ অক্টোবর) পুনরায় আলোচনা হওয়ার কথা ছিল। শুক্রবার সকালে তাদের লাশ গোয়ালঘর থেকে উদ্ধার করা হয়।

স্থানীয় ইউনিয়ন ইউপি সদস্য হামিদ মিয়া বলেন, এটা আত্মহত্যা নয়। তার শরীরে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে।

বীরবাসিন্দা ইউপি চেয়ারম্যান মো. ছোহরাব আলী বলেন, বিষয়টি রহস্যজনক। তাদের পা মাটিতে ঠেকানো ছিল। মাটিতে রক্তও পড়েছিল। এ ঘটনায় তিনি পুলিশসহ বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার তদন্ত দাবি করেন।

কালিহাতী থানার ওসি (তদন্ত) রাহেদুল ইসলাম বলেন, বৃহস্পতিবার সালিশ হওয়ার কথা ছিল। আলেয়া বেগম ও শাজাহানকে পরকীয়ার কারণে অপমানজনক কথা বলেছে। এ কারণে অভিমান করে তারা একই রশিতে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করে থাকতে পারে। ময়না তদন্ত শেষে মৃত্যুর সঠিক কারণ জানা যাবে। এ ঘটনায় কালিহাতী থানায় একটি অপমৃত্যু মামলা দায়ের করা হয়েছে।

(আরকেপি/এসপি/অক্টোবর ১৬, ২০২০)

পাঠকের মতামত:

২০ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test