E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

চন্দ্রশেখর হত্যায় মোবাশ্বেরের আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি 

২০২০ অক্টোবর ২৪ ১০:৩৬:৪৭
চন্দ্রশেখর হত্যায় মোবাশ্বেরের আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি 

রঘুনাথ খাঁ, সাতক্ষীরা : রবিবার রাতে সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলার শোভনালী ইউনিয়নের চারানি বিলে চন্দ্রশেখর সরকার নামের এক যুবককে মাছের ঘেরের বাসায় শ্বাসরোধ করে হত্যার ঘটনায় চাঞ্চল্যকর তথ্য বেরিয়ে এসেছে। চন্দ্রশেখরের বন্ধু একই গ্রামের আব্দুল মজিদ মোড়লের ছেলে বখাটে মোবাশ্বের গত বুধবার সাতক্ষীরার বিচারিক হাকিম রেজোয়ানুজ্জামানের কাছে দেওয়া ১৬৪ ধারার জবানবন্দি থেকে এসব তথ্য জানা গেছে।

শুক্রবার সকালে সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলার শোভনালী ইউনিয়নের বৈকারঝুটি গ্রামে যেয়ে জানা গেছে একই গ্রামের আব্দুল মজিদ মোড়লের ছেলে মোবাশ্বের চম্পাফুল এপিসি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে পড়াশুনা করাকালিন একই গ্রামের হিন্দু সম্প্রদায়ের সপ্তম শ্রেণীর এক মেয়েকে স্কুলে যাওয়া ও আসার পথে উত্যক্ত করতো। বিষয়টি অভিভাবকদের জানানোয় মোবাশ্বের আরো বেপরোয়া হয়ে ওঠে। একপর্যায়ে উপায় না দেখে মেয়েকে নিয়ে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের হুগলী জেলার ব্যাণ্ডেলে নিয়ে যান তার ঘের ব্যবসায়ি বাবা। পরবর্তীতে মেয়েকে বাড়িতে ফিরিয়ে এনে খুলনায় তারা মামার কাছে রেখে খুলনা বালিকা বিদ্যালয়ে ভর্তি করিয়ে দেন। বর্তমানে মেয়েটি ওই স্কুলের নবম শেণীর ছাত্রী। তবে করোনার কারণে গত মার্চ মাস থেকে সে বাড়িতে বাবা ও মায়ের সঙ্গে অবস্থান করছে।

চম্পাফুল আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র মাধ্যমিক বিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, মোবাশ্বের ওই স্কুলে পড়াশুনা করাকালিন কমপক্ষে আটটি মেয়ের সঙ্গে অনৈতিক সম্পর্ক গড়ার চেষ্টা করে। একই ক্লাসের একটি মেয়েকে স্কুলের মধ্যে উত্যক্ত করার দায়ে তাকে গাছের সঙ্গে বেঁধে পেটানো হয়। তাকে স্কুল থেকে বের করে দেওয়ার ্উদ্যোগ নিলে বাবা ও মা প্রধান শিক্ষকের পায়ে ধরে সেযাত্রায় রক্ষা পায়।

একই গ্রামের হিন্দু সম্প্রদায়ের ওই স্কুল ছাত্রী করোনা পরিস্থিতিতে বাড়িতে অবস্থান করাকালিন মোবাশ্বের তার সঙ্গে আবারো যোগাযোগ রাখার চেষ্টা করে। একপর্যায়ে মেয়েটি প্রায় গৃহবন্দি হয়ে পড়ে। এ সময় ওই মেয়েটির সঙ্গে শংকর সরকারের উচ্চ মাধ্যমিক অনুত্তীর্ণ হওয়া ছেলে চন্দ্রশেখরের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। জানতে পেরে মোবাশ্বের ক্ষুব্ধ হয়। সে চন্দ্রশেখরকে হত্যার পরিকল্পনা করে। সহায়তা নেয় চম্পাফুল গ্রামের বন্ধু আইনজীবী সহকারির। এরই জের ধরে চন্দ্রশেখর চারানী বিলে তাদের নিজস্ব ঘেরের বাসায় রোববার রাতে অবস্থানকরাকালিন মোবাশ্বের তাকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে লাশ ঘেরের মধ্যে একটি ঝোপের মধ্যে ফেলে রাখে। হত্যার পর চন্দ্রশেখরের মোবাইল সেট, সিম, জুতো ও লুঙ্গি অন্যত্র লুকিয়ে রেখে রাতেই তার বন্ধু আইনজীবী সহকারির সাতক্ষীরার বাসায় চলে আসে। রাতে মোবাশ্বের তার বন্ধুকে চন্দ্রশেখর হত্যার কথা খুলে বলে। বন্ধুর কথামত সেে সোমবার সকালে বাড়িতে যেয়ে লাশ উদ্ধার করতে আসা পুলিশের সঙ্গে দেয়। বন্ধু হিসেবে চন্দ্রশেখরের হত্যার বিচার দাবি করে সে।

পুলিশ মোবাশ্বেরের মোবাইল নম্বর নিয়ে তাকে ডাকা মাত্র থানায় যাওয়ার কথা বলে যায়। সোমবার সকালে নিহতের বাবা শংকর সরকার বাদি হয়ে কারো নাম উল্লেখ না করে থানায় ২৩ নং মামলা দায়ের করে। পুলিশ স্থানীয় ইউপি সদস্য শাভনালী ইউপি সদস্য আজিজুর রহমানের ভাই মুক্তাজুল ইসলাম, চাচাত ভাই সাগর হোসেন ও বৈকারঝুটি গ্রামের ভাড়ায় চালিত মোটর সাইকেল চালক লিটিলকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় নিয়ে যায়। একপর্যায়ে পুলিশ নিশ্চিত হয় যে মোবাশ্বর এ হত্যার জন্য দায়ি। দ্বিকোন প্রেমের কারণে চন্দ্রশেখরকে রোববার রাতে তার ঘেরের বাসায় মোবাশ্বের শ্বাসরোধ করে হত্রা করে লাশ ঘেরের মধ্যে একিটি ঝোপের মধ্যে ফেলে রেখে যায় বলে মঙ্গলবার জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটককৃত মোবাশ্বের পুলিশকে জানায়। তার দেওয়া স্বীকারোক্তি অনুযায়ি চন্দুশেখরের লুঙ্গি, জুতা, মোবাইল ফোন ও সিম উদ্ধার করা হয়।

সাতক্ষীরা আদালতের পুলিশ পরিদর্শক অমল কুমার রায় বলেন, বুধবার সন্ধ্যায় বিচারিক হাকিম রেজোয়ানুজ্জামানের কাছে দেওয়া জবানবন্দিতে হিন্দু সম্প্রদায়ের এক স্কুল ছাত্রীকে তার কাছ থেকে কেড়ে নিয়ে নিজে বিয়ের প্রস্তাব দেওয়ায় ক্ষোভে অপমানে বন্ধু চন্দ্রশেখরকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে বলে জানায় মোবাশ্বের।

(আরকে/এসপি/অক্টোবর ২৪, ২০২০)

পাঠকের মতামত:

২০ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test