E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

বাবু হত্যা : পুলিশ হেফাজতে নির্যাতনের অভিযোগ, আরিফ জেল হাজতে

২০২০ নভেম্বর ০৫ ২২:৩৯:০৭
বাবু হত্যা : পুলিশ হেফাজতে নির্যাতনের অভিযোগ, আরিফ জেল হাজতে

ররুনাথ খাঁ, সাতক্ষীরা : ভগ্নিপতি সাতক্ষীরার কালিগঞ্জ উপজেলার বিষ্ণুপুর ইউনিয়নের নীলকণ্ঠপুর গ্রামের  আবিদ হোসেন মোল্লা ওরফে বাবুকে হত্যার অভিযোগে গ্রেপ্তারকৃত পুলিশ সদস্য আরিফ হোসেনকে বৃহষ্পতিবার বিকেলে আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে পাঠানো হয়েছে। এর আগে আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি শেষে তার বোন সাবিনাকে বুধবার সন্ধ্যায় আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে পাঠানো হয়।

গ্রেপ্তারকৃত আরিফ হোসেন (২৬) সাতক্ষীরার কালিগঞ্জ উপজেলার বন্দকাটি গ্রামের মুক্তিযোদ্ধা মৃত আরশাদ আলী মোড়লের ছেলে ও মাগুরা জেলার শালিখা থানাধীন হাজরাহাটি তদন্ত কেন্দ্রে সিপাহী হিসেবে কর্মরত।

এদিকে বুধবার বিকেলে আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি শেষে মৃতের স্ত্রী সাবিনা খাতুন সাংবাদিকদের বলেন, কালিগঞ্জ থানায় যোগদানের পর উপপরিদর্শক জিয়ারত আলী তার ছেলের জন্য বোন সুলতানার সিটি কলেজে মাষ্টার্স পড়ুয়া মেয়ে পিয়াকে বিয়ে দেওয়ার জন্য প্রস্তাব দিয়েছিলেন। কয়েকবার বলার পরও রাজী না হওয়ায় জিয়ারত আলী তাদের উপর ক্ষুব্ধ ছিলেন।

এ ছাড়া তার ভাই পুলিশে কর্মরত আরিফের কেনা মোটর সাইকেল ভাগ্নের কাছ থেকে আটক করে থানায় নিয়ে যেয়ে ছেড়ে দেওয়ার নামে মোটা অংকের টাকা নেওয়া, পরে বোন শরিফাকে কোন কারণ ছাড়াই বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করে মিথা মামলা দেওয়ার ঘটনায় ডিআইজির কাছে অভিযোগ করায় উপপরিদর্শক জিয়ারত আলী কয়েকজন পুলিশ কর্মকর্তাকে ভুল বুঝিয়ে স্বীকারোক্তি আদায়ের নামে তার উপর অমানুষিক নির্যাতন চালিয়ে ভগ্নিপতি আবিদ হোসেন বাবুকে হত্যার দায় স্বীকার করে আরো কয়েকজনকে হত্যার সঙ্গে জড়িত থাকার কথা ম্যাজিষ্ট্রেটের কাছে বলতে বাধ্য করিয়েছেন। স্বীকারোক্তি না দিলে আট বছরের ছেলে সজীব ও ২১ মাসের মেয়ে রুসাকে গাছে ঝুলিয়ে পেটানোর হুমকি দেওয়া হয় বলে অভিযোগ করেন সাবিনা।

বুধবার তার উপর নির্যাতনের কথা বলার একপর্যায়ে সাবিনা সাংবাদিকদের কাছে পুলিশি নির্যাতনের কয়েকটি জখমীর দাগ দেখান। বৃহস্পতিবার থানা থেকে আদালতে নিয়ে আসার পর পুলিশ সদস্য আরিফ হোসেন জানান, তার বড় বোন সুলতানার কলেজ পড়ুয়া মেয়ে পিয়াকে উপপরিদর্শক জিয়ারতের বাউণ্ডলে ছেলের সঙ্গে বিয়ে দিতে রাজী না হননি। গত ১৪ মার্চ মুকুন্দ মধুসুধনপুর থেকে আরিফের রেজিষ্ট্রেশনবিহিীন গাড়ি ধরে নিয়ে থানা থেকে ছেড়ে দেওয়ার জন্য উপিপরিদর্শক জিয়ারত আলী ৪৭ হাজার টাকা নেন।

এরপরও ছেড়ে না দেওয়ায় থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা দেলোয়ার হুসেন এর কথা মত মোটর সাইকেল রেজিষ্ট্রেশনের জন্য শ্যামনগর সোনালী ব্যাংকের শাখায় টাকা জমা দিয়ে রসিদ নিয়ে যাওয়ার পর মোটর সাইকেল ছেড়ে দেওয়া হয়। টাকা ফেরৎ চাইলে জিয়ারত আলী তার উপর ক্ষুব্ধ ছিল। এর জের ধরে গত ৩ এপ্রিল বোন শরিফাকে বাড়ি থেকে ধরে নিয়ে পরদিন হয়রানিমূলক ১৫১ ধারায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতে পাঠায়। ওই দিন শরিফা আদালত থেকে জামিনে মুক্তি পায়। মোটর সাইকেল ছেড়ে দিতে নেওয়া ঘুষ ফিরিয়ে না দেওয়া ও বোন শরিফাকে বিনা কারণে ধরে নিয়ে এসে মামলা দিয়ে আদালতে পাঠানোর ঘটনায় তিনি (আরিফ) বাদি হয়ে ৯ এপ্রিল খুলনা রেঞ্জের উপ মহাপুলিশ পরিদর্শক বরাবর অভিযোগ করেন। এ ঘটনায় উপমহাপুলিশ পরিদর্শকের অফিসের সহকারি পুলিশ সুপার জামালউদ্দিনের কাছে তিনি গত ২৭ এপ্রিল সাক্ষ্য দেন। পরবর্তীতে তাদের বাড়িতে এলে মা রহিমাসহ সাতজন সাক্ষ্য দেন।

আরিফ হোসেন আরো বলেন, ২৮ অক্টোবর তিনি ছয়দিনের ছুটিতে বাড়ি আসেন। ২ ও ৩ নভেম্বর তাদের জমি নিয়ে মাপজরিপ হয়। ৩ নভেম্বর ভোরে তিনি নিজ কর্মস্থলে মাগুরা জেলার শালিখা থানাধীন হাজরাহাটি তদন্ত কেন্দ্রে যোগ দেওয়ার জন্য চলে আসেন। তবে বাড়ি থেকে বের হওয়ার আগে ভগ্নিপতি আত্মহত্যা করেছে মর্মে জানতে পারেন। কর্মস্থলে যোগদানের পর তিনি বিষয়টি তার অফিসের কর্মকর্তা ও কালিগঞ্জ থানাকে অবহিত করেন। আরিফ হোসেন অভিযোগ করে বলেন, বাবু হত্যা মামলার তদন্তকারি কর্মকর্তা উপপরিদর্শক জিয়ারত আলী হওয়ায় পূর্বের ক্ষোভ মেটাতে তার বোন সাবিনার উপর শারীরিক নির্যাতন চালিয়ে আদালতে তাকেসহ কয়েকজনের নাম জড়িয়ে স্বীকারোক্তি দিতে বাধ্য করা হয়েছে। মামলার তদন্তভার উপপরিদর্শক জিয়ারতের উপর থাকলে তারা ন্যয় বিচার পাবেন না বলে আশঙ্কা করেন আরিফ হোসেন।

তবে সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালের একজন চিকিৎসক পরিচয় গোপন রাখার শর্তে এ প্রতিবেদককে জানান, আবীদ হোসেন বাবু সে আত্মহত্যা করেছে মর্মে প্রাথমিকভাবে জানা গেছে।। তবে মৃত্যুর আগে সে নেশাজাতীয় বা ঘুমের বড়ি খেয়েছিল। ফলে ঢাকার মহাখালিতে পাঠানো নখ, চুল ও শরীরের বিশেষ অংশের পরীক্ষার রিপোর্ট (ভিসেরা)না পাওয়া পর্যন্ত বাবু কি খেয়েছিল তা বলা যাবে না।

তবে তথ্য অনুসন্ধানে জানা গেছে বাবু বাঁশতলা বাজারের একটি ঔষধের দোকান থেকে তিনটি ঘুমের বাড়ি কিনেছিল। সাবিনাকে বিয়ের আগে নীলকণ্ঠপুর গ্রামের ইসমাইলের স্ত্রীর সঙ্গে অনৈতিক সম্পর্ক প্রকাশ পাওয়ায় সে ব্লেড দিয়ে নিজের গলা কেটেছিল। সেলাই দিতে হয়েছিল সাতটি।

জানতে চাইলে বৃহষ্পতিবার বিকেলে বাবু হত্যা মামলার তদন্তকারি কর্মকর্তা কালিগঞ্জ থানার উপপরিদর্শক জিয়ারত আলী সাংবাদিকদের বলেন, আরিফ তার বিরুদ্ধে ডিআইজি সাহেবের কাছে অভিযোগ করেছিলেন এটা সঠিক। তবে এর জের ধরে সাবিনাকে পুলিশ হেফাজতে নির্যাতনের অভিযোগ ঠিক নয়। কারণ ঘটনার তদন্তে ছিলেন কালিগঞ্জ সার্কেলের ভারপ্রাপ্ত অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ইয়াছিন আলীসহ পুলিশের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা। নিজেদের বাঁচাতে আরিফ ও সাবিনা পাগলের প্রলাপ বকছে।

প্রসঙ্গত, গত ৩ নভেম্বর সকালে কালিগঞ্জ উপজেলার বন্দকাটি গ্রামে শ্বশুর বাড়ির একটি পুকুরের পাশের লেবু গাছের ডালে গলায় ওড়না জড়ানো ঝুলন্ত নীলকণ্ঠপুর গ্রামের ভাটা শ্রমিক আবীদ হোসেন মোল্লা ওরফে বাবুর লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। বাবু’র পায়ের নখ রক্তাক্ত ছিল। ডান পায়ের হাঁটুর উপর ভারী জিনিস দিয়ে আঘাতের চিহ্ন ছিল। এ ঘটনায় মৃতের মা হোসনে আরা বাদি হয়ে সাবিনা ও আরিফ হোসেনসহ ১০ জনের নাম উল্লেখ করে ৩ নভেম্বর থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। পুলিশ ৩ নভেম্বর দুপুরে সাবিনাকে ও রাতে মাগুরা জেলার শালিখা থানাধীন হাজরাহাটি তদন্ত কেন্দ্র থেকে আরিফকে আটক করে। সাবিনা ৪ নভেম্বর আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়। ৫ নভেম্বর আরিফকে আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে পাঠানো হয়।


(আরেক/এসপি/নভেম্বর ০৫, ২০২০)

পাঠকের মতামত:

২১ মে ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test