E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

রাজবাড়ীতে মন্দির না থাকলেও দুর্গাপূজার অনুদান প্রদান

২০২০ ডিসেম্বর ০১ ১৫:৫৪:০০
রাজবাড়ীতে মন্দির না থাকলেও দুর্গাপূজার অনুদান প্রদান

রাজবাড়ী প্রতিনিধি : রাজবাড়ীর বালিয়াকান্দিতে শারদীয় দূর্গাপূজা উপলক্ষে আগত ভক্তদের আপ্যায়নের লক্ষে ২১টি মন্দিরে বিশেষ বরাদ্দ প্রদান করা হয়েছে। কোন প্রকার পূজা ও মন্দির না থাকলেও সেই নাম কায়েস্ত মন্দির বানিয়ে সেখানেও অনুদান গ্রহণের অভিযোগ উঠেছে। অনেক মন্দিরের নামে বরাদ্দ হলেও কমিটির কেউ এখন পর্যন্ত জানে না বা টাকাও পায়নি। বিষয়টি নিয়ে এলাকায় চরম ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। 

বালিয়াকান্দি উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কার্যালয় সুত্রে জানা গেছে, উপজেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি রাম গোপাল চট্রোপাধ্যায় ও সাধারণ সম্পাদক নিতিশ চন্দ্র মন্ডল স্বাক্ষরিত ২৫টি মন্দিরে বিশেষ অনুদানের জন্য আবেদন করেন। শারদীয় দুর্গাপূজা-২০২০ উদযাপন উপলক্ষে ২১টি মন্দিরের অনুকুলে প্রতিটি মন্দিরে ৫শত কেজি করে জিআর চাল মন্দিরে আগত ভক্তবৃন্দের খাওয়ানোর জন্য বরাদ্দ প্রদান করা হয়। রাজবাড়ী জেলা ত্রাণ ও পুর্নবাসন কর্মকর্তা (চ.দা.) সৈয়দ আরিফুল হক স্বাক্ষরিত গত ২১ অক্টোবর তারিখে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের অনুকুলে উপ-বরাদ্দ প্রদান করেন।

অনুদানপ্রাপ্ত ২১টি মন্দির হলো, শ্রী শ্রী রাধানাথ অঙ্গণ, জামালপুর সার্বজনীন দুর্গা মন্দির, তুলশীবরাট বলাই মাষ্টারের বাড়ী দুর্গা মন্দির, রায়পুর সার্বজনীন দুর্গা মন্দির, ইলিশকোল-রায়পুর সার্বজনীন শ্মশান মন্দির, সাধুখালী শ্রী শ্রী যুগল কিশোর অঙ্গণ, পুরাতন ঘুরঘুরিয়া বলরাম মন্ডলের বাড়ী সার্বজনীন পুজা মন্দির, তালতলা সার্বজনীন পূজা মন্দির, সোনাপুর বাজার সার্বজনীন দুর্গা মন্দির, আলোকদিয়া সাহাপাড়া সার্বজনীন দুর্গা মন্দির, বেতেঙ্গা সার্বজনীন দুর্গা মন্দির, বালিয়াকান্দি শ্মশান মন্দির, সাধুখালী সার্বজনীন দুর্গা মন্দির, সমাধিনগর আর্য্য সংঘ সার্বজনীন নাট মন্দির, বহরপুর সাহাপাড়া সার্বজনীন পূজা মন্দির, সোনাপুর দক্ষিণপাড়া চন্দনা সার্বজনীন পুজা মন্দির, বন্যতৈল কাত্যায়নী মন্দির, সাধুখালী সরকার বাড়ী সার্বজনীন দুর্গা মন্দির, রায়পুর উত্তরপাড়া দুর্গা মন্দির, ইলিশকোল কলেজপাড়া দুর্গা মন্দির, নতুন ঘুরঘুরিয়া রাজন সরকারের বাড়ী দুর্গা মন্দির।

উপজেলা পূজা পরিষদের প্রচার সম্পাদক ও ইউপি সদস্য নিভাষ চন্দ্র মজুমদার বলেন, পূজা পরিষদের নেতৃবৃন্দের নিকট নারুয়া ও ইসলামপুর ইউনিয়নে প্রিয় ভাজন না হওয়ার কারণে বিশেষ বরাদ্দ থেকে তাদের কোন মন্দিরে বরাদ্দ প্রদান করা হয়নি। অথচ সভাপতি ও সেক্রেটারীর বসতবাড়ীতে অনুদান নিয়েছেন।

জঙ্গল ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য গৌর চন্দ্র, ইউনিয়ন পূজা পরিষদের সিনিয়র সহ-সভাপতি অধ্যক্ষ রমেন বাছাড়সহ স্থানীয়রা জানান, সাধুখালী শ্রী শ্রী যুগল কিশোর অঙ্গণ নামে কোন মন্দির নেই। যদি কেহ বরাদ্দ নিয়ে থাকেন, তাহলে আত্মসাতের লক্ষে নিয়েছেন। তবে আমরা এধরণের কাজ করা ব্যক্তিদেরকে তদন্ত পুর্বক প্রশাসনের নিকট আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের দাবী জানাচ্ছি।

সাধুখালী সরকার বাড়ী সার্বজনীন দুর্গা মন্দিরের সভাপতি নরেশ সরকার বলেন, দূর্গাপূজার সময় আমার ভোটার আইডি কার্ডের ফটোকপি নিয়েছিল উপজেলা পূজা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক নিতিশ চন্দ্র মন্ডল। পরে জানতে পারি আমি সাধুখালী সার্বজনীন দুর্গা মন্দির ও সাধুখালী সরকার বাড়ী সার্বজনীন দুর্গা মন্দিরের সভাপতি। কিন্তু একটি মন্দিরের জন্য বরাদ্দের সামান্য পেয়েছি। শুনেছি দু,টি মন্দিরে ১ মেট্রিকটন বরাদ্দ হয়েছে। অপরটি কোন মন্দির নেই।
বালিয়াকান্দি ইউনিয়নের তালতলা সার্বজনীন পূজা মন্দিরের সভাপতি বিকাশ রায় বলেন, আমার মন্দিরে কোন বিশেষ বরাদ্দের অর্থ পায়নি। কেউ আমাকে বিষয়টি অবগত করেনি। আমি কোন স্বাক্ষর বা এ বিষয়ে কিছুই জানি না।

সমাধিনগর আর্য্য সংঘ সার্বজনীন নাট মন্দির কমিটির সাধারণ সম্পাদক ও সমাধিনগর আর্য্য সংঘ বিদ্যা মন্দির উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নারদ কুমার বাছাড় বলেন, মন্দিরে বিশেষ বরাদ্দের অনুদানের বিষয়ে আমি অবগত নই। বিষয়টি আমার জানা নেই।

পুরাতন ঘুরঘুরিয়া বলরাম মন্ডলের বাড়ী সার্বজনীন পুজা মন্দিরের সভাপতি বিশ্বজিৎ মন্ডল বলেন, মন্দিরে বরাদ্দের বিষয়ে আমি কিছু জানি না। আপনাদের মাধ্যমে জানতে পারলাম বরাদ্দ হয়েছে মন্দিরের নামে।

উপজেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক নিতিশ চন্দ্র মন্ডলের বাড়ীতে অবস্থিত সাধুখালী শ্রী শ্রী যুগল কিশোর অঙ্গণের সভাপতি সুকদেব মন্ডল বলেন, আমার বাড়ীর ঘরের মধ্যে মন্দির আছে। অবশ্য তার ভাতিজা অকপটে স্বীকার করেন তাদের বাড়ীতে কোন মন্দির নেই।

উপজেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক নিতিশ চন্দ্র মন্ডল বলেন, আসলে ভুলক্রমে মন্দিরটির নাম হয়েছে। অনুদান কয়েকটি মন্দির পায়নি এমন প্রশ্নের জবাবে বলেন, এখনো তাদেরকে প্রদান করা হয়নি। যাদের বরাদ্দ তাদেরকে প্রদান করা হবে।

উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা নাসরিন সুলতানা বলেন, উপজেলা পূজা পরিষদের সভাপতি-সম্পাদক আবেদনের প্রেক্ষিতে সংসদ সদস্য মহোদয়ের ডিও লেটার নিয়ে বিশেষ বরাদ্দের জন্য আবেদন করে। তার প্রেক্ষিতে এ বরাদ্দ প্রদান করা হয়েছে। যদি কোন মন্দির না থাকে, তাদের নামে বরাদ্দ হলে বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখা হবে। এর দায়ভার আবেদনকারীদের বহন করতে হবে।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার আম্বিয়া সুলতানা বলেন, আমি যোগদানের আগেই এ বরাদ্দ এসেছে। অনিয়মের বিষয়টি জানতে পারলাম খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

(একে/এসপি/ডিসেম্বর ০১, ২০২০)

পাঠকের মতামত:

২০ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test