E Paper Of Daily Bangla 71
World Vision
Technomedia Limited
Mobile Version

জামায়াত নেতার সন্ত্রাসী হামলা ও পুলিশি তাণ্ডব 

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর নির্দেশে ঘটনান্থল পরিদর্শন করলেন সাংসদ মীর মোস্তাক আহম্মেদ রবি

২০২০ ডিসেম্বর ০৩ ১৭:৩৩:০৬
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর নির্দেশে ঘটনান্থল পরিদর্শন করলেন সাংসদ মীর মোস্তাক আহম্মেদ রবি

রঘুনাথ খাঁ, সাতক্ষীরা : সাতক্ষীরা সদরের ঝাউডাঙা ইউনিয়নের ওয়ারিয়া গ্রামে জামায়াত নেতা আব্দুল বারীর সন্ত্রাসী বাহিনী ও পুলিশি তাণ্ডবের ঘটনায় খুলনা উপমহাপুলিশ পরিদর্শকের নির্দেশে সাতক্ষীরার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোঃ আসাদুজ্জামান ঘটনার তদন্ত করলেও সাড়ে তিন মাসেও কোন ব্যবস্থা গৃহীত হয়নি দোষী জামায়াত নেতা ও পুলিশ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে। অবশেষে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের নির্দেশে সাতক্ষীরা-২ আসনের সাংসদ মীর মোস্তাক আহম্মেদ রবি বৃহষ্পতিবার দুপুরে ঘটনাস্থল পরিদর্শণ করেন।

সাংসদের কাছে নির্যাতিতরা গত ১৩ জুলাই সকালে জেলা জামায়তের নায়েবে আমীর হাফ ডজন নাশকতার মামলার আসামী মাওলানা আব্দুল বারী, তার ছেলে জামায়াতের হেলমেট বাহিনীর প্রধান পাঁচটি নাশকতা ও একটি ডাকাতি মামলার আসামী নুরুল বাসারের সন্ত্রাসী বাহিনীর তাণ্ডব ও বিকেলে সাতক্ষীরা সদর সার্কেলের সহকারি পুলিশ সুপার মীর্জা সালাহ্ উদ্দিন , সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোঃ আসাদুজ্জামান ও তদন্ত ওসি আবুল কালাম আজাদের নেতৃত্বে পুলিশি তাণ্ডবের বর্ণনা দেন।

ওয়ারিয়া গ্রামের নাদের আলী গাজীর ছেলে আব্দুল বারী বলেন, ১৩ জুলাই জামায়াত নেতা মাওলানা আব্দুল বারীর নেতৃত্বে সন্ত্রাসী তাণ্ডবের ঘটনায় পুলিশ মামলা না নিয়ে উপরন্তু বিকেলে হামলায় আহতদের স্বজন হিসেবে দেখতে আসা ছয় নারীসহ এক শিশুকে ১৫১ ধারায় নিরাপত্তা দেওয়ার নামে টেনে হিচড়ে ঘর থেকে বের করে মারতে মারতে পুলিশের গাড়িতে তুলে থানায় নেওয়া হয়। পরে ওই ছয় নারীসহ ১৩জনের নামে জামায়াত নেতার দেওয়া মিথ্যা মামলায় আদালতে চালান দেওয়া হয়।

এ ঘটনায় তারা ১৫ জুলাই ও ২১ জুলাই খুলনা রেঞ্জ ডিআইজি ড.মুঃ খন্দকার মহিদ উদ্দীনের সঙ্গে দেখা করেন। জামায়াত নেতা ও পুলিশের তাণ্ডবের ভিডিও ফুটেজসহ অভিযোগ জমা দেওয়া হয়। উপমহাপুলিশ পরিদর্শকের নির্দেশে সাতক্ষীরার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোঃ আসাদুজ্জামান গত ১৬ আগষ্ট তার কার্যালয়ে পুলিশের হাতে নির্যাতিত ছয় নারীর জবানবন্দি নেন। অভিযোগকারি হিসেবে তার ও ভাই মোশারফের নামে জামায়াত নেতার মিথ্যা মামলা থাকায় তাদের সাক্ষী নেননি তিনি।

ওয়ারিয়ার নাদের আলী গাজীর মেয়ে কলারোয়ার ক্ষেত্রপাড়ার ফতেমা, ঝিকরার লায়লা, আবুল বাসারের শ্বাশুড়ি সদরের বেলেডাঙার আশুরা, তার দু’ মেয়ে খায়রুন, মুন্নি ও বাসারের স্ত্রী হালিমা বলেন, ১৩ জুলাই বারী মাওলানার নেতৃত্বে সন্ত্রাসী হামলার পর আহতদের দেখতে তারা দুপুরে সদর হাসপাতাল থেকে নাদের আলী গাজীর বাড়িতে আসেন। দুপুরে পুলিশের উপস্থিতিতে সন্ত্রাসীরা তাদের রান্না করা ভাত তরকারি ফেলে দেয়। বিকেল সোয়া চারটার দিকে সাতক্ষীরা সদর সার্কেলের সহকারি পুলিশ সুপার মীর্জা সালাহ্ উদ্দিন , সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোঃ আসাদুজ্জামান ও তদন্ত ওসি আবুল কালাম আজাদের নেতৃত্বে বিকেলে ৪০/৪৫ জন পুলিশ তাদেরকে ঘর থেকে টেনে হিঁচড়ে বের করে মারতে মারতে গাড়িতে তোলে। আরশাদের দু’ বছরের ছেলে সাব্বিরকে ছুঁড়ে ফেলে দেয় সিপাহী রেহেনা। পরে জামায়াত নেতার কেনা তালা জামেলা বেগমের ঘরের দরজায় লাগিয়ে দেওয়া হয়।

পুলিশের গাড়িতে তুলে সিপাহী রেহেনা থানায় নিয়ে তাদেরকে পাছায় গরম আণ্ডা ঢুকিয়ে দেওয়ার হুমকি দেয়। রেহেনাসহ অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন সিপাহী পান্না, লিমা ও দীপা। নিরাপত্তা দেওয়ার নামে থানায় আটক রাখা তাদের ছয়জনসহ এক তিন বছরের শিশুকে ছাড়িয়ে নিতে গেলে বারী মাওলানার ঘরে ও জমিতে কখনো উঠবে না এমন মুচলেকা দিলে ছেড়ে দেওয়া হবে বলে জানান থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোঃ আসাদুজ্জামান। মুচলেকা না দেওয়ায় তাদের ছয়জনকে পরদিন বারী মাওলানার দেওয়া মিথ্যা মামলায় আদালতে পাঠানো হয়। এ ছাড়া জামেলাসহ ওই পরিবারের ছয়জনকে সকালে জামায়াত নেতার সন্ত্রাসী বাহিনীর হামলার কথা তুলে ধরে তারা বলেন, হামলার সময় তদন্ত ওসি আবুল কালাম আজাদ ও একজন পুলিশ কর্মকর্তা ঝাউডাঙা বাজারের পাশে এক সাবেক বিএনপি ইউপি চেয়ারম্যানের বাড়িতে অবস্থান করছিলেন। হামলাকারিরা চলে যাওয়ার পরপরই পুলিশ পরিদর্শক আবুল কালাম আজাদ এসে বলেন, এখনো কেউ মরিনি ? সাংসদের কাছে জামায়াত নেতার ও পুলিশি তাণ্ডবের ভিডিও ফুটেজ জমা দেন তারা

আক্ষেপের সঙ্গে আশুরা বলেন, বেহানসহ ছয়জন যখন সদর হাসপাতালে ভর্তি তখন তাদেরকে দেখতে এসে মিথ্যা মামলায় জেলে পাঠানো পুলিশের অন্যায় অত্যাচারের সীমা ছাড়িয়ে গেছে। টেকনাফ থানার ওসি প্রদীপ দাসের মত সাতক্ষীরার তিন পুলিশ কর্মকর্তার শাস্তির দাবি করেন তিনি। গত ১৭ জুলাই আবুল বাসারের দায়েরকৃত মাওলানা আব্দুল বারীসহ ১০ জনের নাম উল্লেখ করে আদালতের মামলার তদন্তকারি কর্মকর্তা পুলিশ ব্যুরো ইনভেস্টিগেশনের পুলিশ পরিদর্শক আল মামুনের কাছে একই রকম জবানবন্দি দিয়েছেন। দেখিয়েছেন সন্ত্রাসী ও পুলিশি তাণ্ডবের ভিডিও ফুটেজ।

এদিকে বৃহষ্পতিবার দুপুরে ওয়ারিয়া গ্রােেম আবুল বাসারের বাড়িতে যেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের সদস্য, স্থানীয় গ্রামবাসি ও প্রত্যক্ষদর্শী সাংবাদিকসহ বিভিন্ন মানুষের সঙ্গে কথা বলার পর জামায়ত নেতা মাওঃ আব্দুল বারি ও পুলিশের কঠোর সমালোচনা করেন সাংসদ। পরে তিনি ঝাউডাঙা বাজারে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ অফিসে যেয়ে সভাপতি রমজান আলী, আওয়ামী লীগ নেতা সাজু, সুবীর ঘোষসহ কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলেন। এ সময় তিনি থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে মোবাইলে আশুরার ঘরের চাবি দিয়ে দেওয়ার জন্য বলেন। থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শুক্রবার চাবি দিয়ে দেবেন বলে সাংসদকে অবহিত করেন।

সাংসদ মীর মোস্তাক আহম্মদ রবি সাংবাদিকদের বলেন, আশুরার পরিবার যাতে ন্যয় বিচার পান সেজন্য তিনি সার্বিক চেষ্টা করবেন।

(আরকে/এসপি/ডিসেম্বর ০৩, ২০২০)

পাঠকের মতামত:

২০ এপ্রিল ২০২৪

এ পাতার আরও সংবাদ

উপরে
Website Security Test